শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পূর্বাহ্ন

তানভীর মোকাম্মেলের “হুলিয়া” ৩০ মিনিটের লং ফিল্ম

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৪, ৭.৪৪ পিএম

আশির দশক। চারপাশে কেমন একটা দমবন্ধ পরিবেশ। যে পরিবেশের সঙ্গে মিলে যায় ষাটের দশকের সেই কঠোর শাসনের সময়ের দিনগুলো।

তাই আশির দশকে যারা তানভীর মোকাম্মেলের হুলিয়া দেখেছিলেন, শাদা কালো ওই ৩০ মিনিটের ছায়াছবি’র মধ্যে তারা যেন প্রায় দশটি বছর খুঁজে পেয়েছিলো। আর তার সঙ্গে খুঁজে পেয়েছিলো, সমাজতন্ত্রের নামে সাধারণ মানুষ যে তার জীবন পরিবির্তনের স্বপ্ন দেখেছিলো তার ছবি।

আজ ওই ছবি ইতিহাস। সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন এখন মরে শুকনো নদীর চড়া হয়ে গেছে। সমাজতন্ত্রের স্বপ্নে বিভোর হুলিয়া মাথায় নেয়া যে নায়ক জাতীয়তাবাদের কথা বলেছিলো, সে জাতীয়তাবাদও ফিঁকে হয়ে গেছে।

তারপরেও তিরিশ মিনিটের এ ছায়াছবি মানের ও মানসিক সময়ের দিক থেকে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যর ছায়াছবি।

তানভীর মোকাম্মেল যখন এ ছায়াছবিটি করেন তখন তিনি তরুণ। তবে চলচ্চিত্রটি বার বার দেখলেও মনে হবে না একজন তরুণ পরিচালকের করা ছায়াছবি।

বিশেষ করে তিনি যে ডায়লগের থেকে বড়ি ল্যাঙ্গুয়েজের ওপর বেশি জোর দিয়ে ছবিকে অন্যমাত্রা দিতে সমর্থ হয়েছিলেন- এটাই সব থেকে বড় সাফল্য।

হুলিয়া মাথায় নিয়ে বারহাট্টা রেল ষ্টেশনে তরুণ নামে। তারপরে তার সেখান থেকে বাড়ি পর্যন্ত আসায় ডায়ালগ মাত্র কয়েকটি। একবার রেস্টুরেন্টে চা চায়- দুই বার চিনি চায়। তরুণ আসাদুজ্জামান নূর বাদবাকিটুকু বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়েই উত্তরে শুধু দেননি- তিনি বাস্তবতায় নিয়ে গেছেন। আর কোন ডায়ালগ ছাড়া রামেন্দু মজুমদারের অভিনয় নিঃসন্দেহে তার জীবনের শ্রেষ্ট অভিনয়ের মধ্যে একটি।

শুধু আসামীকে পালাতে সাহায্য করা নয়, ষাটের দশকের ওই দিনগুলোতে তরুণদের মধ্যে যে নিবেদিত গতি সঞ্চার হয়েছিলো, সেই গতি’র প্রকাশ ঘটাতে সমর্থ হন তরুণ হুমায়ুন ফরিদি। যখন হুলিয়া মাথায় নেয়া তরুণকে পুলিশে ধরতে এলে গ্রামের তরুনের ভূমিকায় অভিনয় করা হুমায়ুন ফরিদি তাকে পালাতে ঝোপ, জঙ্গল পার হয়ে পুলিশের জীপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোটে। যার ভেতর দিয়ে ফুটে ওঠে রাষ্ট্রের কঠোরতার থেকে তরুনের গতি অনেক বেশি।

শুধু ষাটের দশককে জানতে ও বুঝতে নয়- ইতিহাসের কথাগুলো নতুন করে সামনে আনার জন্যেও নয়, একটি সততা ও ত্যাগের রাজনীতি যখন সমাজে জম্ম নিতে থাকে সে সময়ের সমাজের ছবিটি জানতে কবি নির্মলেন্দু গুনের কবিতা হুলিয়া অবলম্বনে তানভীর মোকাম্মেলের এ ছবি চিরকালের আবেদনই বহন করবে। চিরকালের কঠোর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তরুনের মনের বিদ্রোহের প্রতীক হিসেবেই বিবেচিত হবে এ চলচ্চিত্র।

 

-কালান্তর

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024