মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৯ অপরাহ্ন

গেটম্যান না থাকায় ট্রাক-ট্রেন সংঘর্ষে নিহত ৬

  • Update Time : শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৫.৫৭ পিএম
যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে গেছে বালুবাহী ট্রাকটি। এ সময় ট্রাকটি ঠেলে প্রায় ২০০ মিটার দূরে নিয়ে যায় ট্রেনটি। গতকাল সকালে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মুহুরীগঞ্জে ছবি: সংগৃহীত

ফেনী প্রতিনিধি :  ফেনীতে রেলক্রসিং পারাপারের সময় একটি ট্রাকের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া আটটার দিকে ফেনীর ফাজিলপুর রেলস্টেশন ও মুহুরীগঞ্জ রেলস্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন বরিশালের উজিরপুরের কাউয়ারান্থা এলাকার আবুল হাওলাদারের ছেলে মো. মিজান (৩২), কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের আমিন হোসেনের ছেলে আবুল খায়ের মিয়া (৪০) ও তাঁর ছেলে মো. আশিক (১৪) এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের শাকতলা গ্রামের নুরুল হকের ছেলে দিল মোহাম্মদ (২৩), রুহুল আমিনের ছেলে মোহাম্মদ রিফাত (১৭) ও মোহাম্মদ ইয়াসিনের ছেলে মো. সাজ্জাদ (১৮)। ফেনী জেলা পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মো. মিজান দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটির চালক, অন্যরা ট্রেনের যাত্রী। পাঁচজন ঘটনাস্থলে মারা গেছেন। কিশোর মো. আশিককে আহতাবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান ছয়জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও রেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী চিটাগাং মেইল ট্রেনটি ফাজিলপুর রেলস্টেশন পার হয়ে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে মুহুরীগঞ্জের কাছাকাছি পৌঁছায়। সেখানে রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় একটি ট্রাক চলন্ত ট্রেনের সামনে এসে পড়ে। ট্রেনের ধাক্কায় ট্রাকটি প্রায় ২০০ মিটার সামনের দিকে চলে যায়। এতে ট্রেনের সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ট্রাকটি দুমড়েমুচড়ে যায়। রেলক্রসিংটিতে ট্রেন আসার আগে ব্যারিয়ার (প্রতিবন্ধক) ফেলা হয়নি। সেখানে নিয়োজিত গেটম্যান সাইফুল ইসলাম দায়িত্বরত ছিলেন না। দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।

জানতে চাইলে ফেনী রেলস্টেশনের মাস্টার মোহাম্মদ হারুন বলেন, দুর্ঘটনার কারণ, কারও গাফিলতি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিছুর রহমানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

মোহাম্মদ হারুন জানান, দুর্ঘটনার পর ট্রেনটি পুনরায় পেছনের দিকে ফাজিলপুর স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। পরে সেটি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবারও চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের শাকতলা গ্রামের যে তিনজন নিহত হয়েছেন, তাঁরা একসঙ্গে ঈদের কেনাকাটার উদ্দেশে ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে বসে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, একসঙ্গে ১১ বন্ধু ঈদের কেনাকাটা করতে যাওয়ার উদ্দেশে কুমিল্লার হাসানপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন। দুর্ঘটনায় তিন বন্ধুর মৃত্যু হলে অন্যরা লাশ উদ্ধার করে নিজেদের গ্রামে নিয়ে যান। এসব লাশ পৌঁছার পর পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিকেলে লাশ তিনটি দাফন করা হয়।

রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে চৌদ্দগ্রামের তিন ব্যক্তির লাশ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি তিনটি লাশের মধ্যে দুটি ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গ এবং একটি লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

গেটম্যান না থাকায় ২০২২ সালের ২৯ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাইয়েও বড় দুর্ঘটনা হয়। বড়তকিয়া স্টেশন এলাকায় ওই দিন দুপুরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেন পর্যটকবাহী একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়। এতে ১৩ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে মাইক্রোবাসের চালক ছাড়া অন্যরা ছিলেন ছাত্র। এই ঘটনায় রেলের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এই দুর্ঘটনার জন্য মাইক্রোবাসচালক ও গেটম্যানকে দায়ী করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, গেটম্যান ঘটনাস্থলে ছিলেন না। গেটম্যানের দায়িত্বে অবহেলায় চট্টগ্রাম নগরের খুলশীর ঝাউতলা রেলক্রসিংয়ে ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে। ডেমু ট্রেনের সঙ্গে বাস, অটোরিকশা ও টেম্পোর সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024