বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন

মার্কিন-জাপান-ফিলিপাইন শীর্ষ সম্মেলন ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময়ের মাধ্যমে আগাবে

  • Update Time : সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৮.৩০ এএম

অমি বেরা

নয় বছর আগে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্বাধীনতার প্রতি তাঁর দেশের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছিলেন।

জাপান-মার্কিন জোটের কাঠামোর মধ্যে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিতে পরিপূর্ণ ছিলো তাঁর বক্তব্য।  আমি সহ যারা তা শুনেছিলেন তাদের হৃদয়ে একটি স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে।

২০২২ সালে, একজন হত্যাকারীর গুলিতে আবের জীবন শেষ হয়েছিল। এই করুণ ক্ষতি সত্ত্বেও, শান্তিপূর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বেঁচে আছে এবং মার্কিন বিদেশ নীতির একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে রয়ে গেছে।

বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের একটি মৌলিক সংযোগ, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিপুল পরিবর্তন দেখেছে। বাণিজ্য ও সহযোগিতার একটি শান্তিপূর্ণ সাগর থেকে, এটি এখন উত্তেজনা ও কৌশলগত প্রতিযোগিতার একটি ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

এই পটভূমিকায়, আগামী সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সফর গুরুত্বপূর্ণ।

জাপান সাহসী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে, বিশেষ করে তারা যখন মোট জাতীয় উৎপাদনের ২ শতাংশে প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর তাঁকে পরিবর্তিত বিশ্বের মোকাবেলা করতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন তা উপস্থাপন করার সুযোগ করে দেবে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য কৌশলগত প্রচেষ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের সাথে সহযোগিতা করে জাপান কোয়াডে একটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

কোয়াড এর উদ্দেশ্য হলো সমুদ্রপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, মুক্ত বাণিজ্য উৎসাহিত  এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার সমর্থন করে আঞ্চলিক শৃঙ্খলা গঠন করা। ইন্দো-প্যাসিফিক জুড়ে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করতে জাপানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

গত নভেম্বরে ম্যানিলা সফরকালে, কিশিদা এবং ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি ফার্ডিনান্ড মার্কোস জুনিয়র বেশ কিছু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, যার মধ্যে জাপানের নতুন অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় প্রতিরক্ষা সহায়তা হস্তান্তরের ঘটনাটি প্রথম। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ফিলিপাইন নৌবাহিনী ৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের উপকূলীয় নজরদারি রাডার ব্যবস্থা পাবে।

জাপান ভিয়েতনামের কোস্ট গার্ডের জন্য ছয়টি টহল জাহাজ নির্মাণেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা অক্টোবর ২০২৫ এর মধ্যে হস্তান্তর করা হবে। এই উদ্যোগ ভিয়েতনামের সামুদ্রিক সক্ষমতা বাড়াবে, যা প্রমাণ করে জাপান তার ইন্দো-প্যাসিফিক প্রতিবেশীদের সামুদ্রিক নিরাপত্তা সমর্থনে অব্যাহত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

জাপানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জাপান- আমেরিকা জোটের একটি মূল স্তম্ভ গঠন করে। মার্কিন অর্থনীতিতে বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস হচ্ছে জাপান। এই অংশীদারিত্ব নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, ২০২২ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের ক্রমবর্ধমান প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পরিমাণ ৭১২ বিলিয়ন ডলার, যা ৯,৬০,০০০ মার্কিনীকে চাকরির সংস্থান  করেছে।

এই ধরনের অর্থনৈতিক পারস্পরিক নির্ভরশীলতা কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করে না, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জোটের কৌশলগত গুরুত্বকেও তুলে ধরে।

এছাড়া খুশির বিষয় যে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব বিকশিত হচ্ছে এবং এটি কীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে সে বিষয়টিও এখানে যুক্ত।

এই জোটগুলির চিরস্থায়ী শক্তির ঐতিহাসিক প্রমাণ হিসেবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা গত আগস্টে ক্যাম্প ডেভিডে প্রথমবারের মতো একক শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন, যা ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতায় একটি বিরাট মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রধানমন্ত্রী কিশিদা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইয়োলের সাথে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি তাদের অংশীদারিত্বের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল।

আমরা আরেকটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত সাক্ষ্য হতে যাচ্ছি যেখানে আগামী সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ফিলিপাইনের নেতারা তাদের প্রথম ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হবেন। আমাদের ঘনিষ্ঠতম মিত্র জাপান এবং ইন্দো-প্যাসিফিকে আমেরিকার প্রাচীনতম মিত্র ফিলিপাইন একটি মুক্ত, উন্মুক্ত ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিকের দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময়ের মাধ্যমে এগিয়ে যাবার ভেতর দিয়ে সম্পর্ক গভীর করার উপায় খুঁজবে।

এই ত্রিপক্ষীয় প্রচেষ্টাগুলি কেবল ওই অঞ্চলের একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার বিষয়েই নয়। এগুলো আমেরিকার নিজ দেশে ফিরে আমেরিকান নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহনশীলতা শক্তিশালী করারও জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ইউক্রেনে যুদ্ধ যখন তৃতীয় বছরে প্রবেশ করছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল তখন তার নিজস্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।  উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান উস্কানিমূলক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, তাইওয়ান প্রণালীতে চলমান উত্তেজনা এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের বিপজ্জনক পদক্ষেপগুলো বাস্তবে সে সব চ্যালেঞ্জ।

এই উদীয়মান হুমকি এবং দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে অংশীদারিত্বের স্বার্থ রক্ষা এবং পারস্পারিক বিনিময় করামূল্যবোধ প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতৃত্বের প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং কতৃত্ববাদী শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে যারা জোট এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ক্ষুণ্ন করতে চায়।

মার্কিন-জাপান জোটের প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে দৃঢ় দ্বিদলীয় সমর্থন রয়েছে এবং হোয়াইট হাউসে কে আছেন তা নির্বিশেষে বিশ্ব মঞ্চে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল মার্কিন নেতৃত্ব বজায় রাখতে এবং আমাদের গভীর ও ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব জোরদার করতে আমিওআইন প্রণেতাদের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আবে একসময় মার্কিন-জাপান জোটকে “আশার জোট” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। আমাদের অবশ্যই আমাদের বিশ্বের জন্য একটি মুক্ত, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি পূরণ করতে পারস্পারিক বিনিময়ের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

কংগ্রেস এবং আমেরিকান জনগণ আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী কিশিদার কাছ থেকে তার ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে শুনতে উন্মুখ এবং আসুন আমরা একটি অংশীদারিত্ব বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দেই যা শুধু আমাদের মত ও তথ্য বিনিময়করার ইতিহাসকেই সম্মান জানাবে না, একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথও প্রশস্ত করবে। পারস্পরিক সম্মান এবং মূল্যবোধের বিনিময়ের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা মার্কিন-জাপান জোট ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের উজ্জ্বল আগামী নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে আমেরিকার সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পদ।

অমি বেরা মার্কিন হাউস সাবকমিটি অন দ্য ইন্দো-প্যাসিফিকে ডেমোক্রেটিক পার্টির র‍্যাঙ্কিং সদস্য। ক্যালিফোর্নিয়ার এই কংগ্রেসম্যান হাউস পারমানেন্ট সিলেক্ট কমিটি অন ইন্টেলিজেন্সেরও একজন সদস্য।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024