সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:০৭ অপরাহ্ন

আমাদের সন্তানদের কি আমরা স্মার্টফোন থেকে রক্ষা করতে পারি?

  • Update Time : শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪, ৮.৩০ এএম

পেগি নুনা 

একটি জাতির চিন্তাধারায় একেক সময়ে একেক ধরনের বিচিত্র ব্যাপার ঘটে থাকে। কোনো এক সময়ে সকলেই জানে কিছু একটা সত্য, এবং একে অন্যের সাথে সে বিষয়ে কথা বলে। কার্যকর হওয়ার আগে সেই সত্যটা ক্লিশেতে পরিণত হয়। এরপর, একজন সম্মানিত ব্যক্তি, যেমন ধরুন একজন সৎ উদ্দেশ্যে কাজ করা বিজ্ঞানী যিনি তথ্য-প্রমাণকে শ্রদ্ধা করেন, তিনি এগিয়ে আসেন যা সকলেই জানে তার প্রমাণ নিয়ে, এবং এটি উদ্দীপনাময় হয়ে ওঠে। এটি বজ্রপাতের মতো আঘাত করে, এবং আমাদের সবাইকে আগ্রহী করে  আমাদের জানা দরকার তা  জানতে এবং সেটির ভিত্তিতে কাজ করতে। জোনাথন হাইডটের নতুন বই “The Anxious Generation: How the Great Rewiring of Childhood Is Causing An Epidemic of Mental Illness” সম্পর্কে আমার ধারণা হলো, এটি সামনে এসেছে এবং অভিভাবকদের গোষ্ঠী এবং ব্যক্তিদের একসাথে এগিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করছে একটি প্রতিষ্ঠিত ধারণার ওপর ভিত্তি করে।

নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টার্ন স্কুল অফ বিজনেসে শিক্ষকতা করেন এমন বহুল প্রশংসিত সমাজ-মনোবিজ্ঞানী মি. হাইট তাঁর কর্মজীবনের বড় সময় অনুভূতি, সংস্কৃতি এবং নৈতিকতা নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়েছেন। আর সে পথেই তিনি  শিশু বিকাশ এবং কিশোর মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে মনোনিবেশ করেছেন। আমরা সকলেই যা জানি তা হলো, তরুণদের মধ্যে একটি মানসিক স্বাস্থ্য সংকট রয়েছে, মনে হচ্ছে তারা সোশ্যাল মিডিয়া ও গেমিংয়ে আসক্ত হয়ে পড়েছে এবং এই দুটি তথ্য স্পষ্টতই সম্পর্কিত বলে মনে হচ্ছে। মি. হাইট বলেছেন এবং দেখিয়েছেন যে, পরে উল্লেখিত বিষয়টি পূর্বোক্ত বিষয়টির একটি কারণ।

তিনি জেড প্রজন্মের (generation Z) গল্প বলেছেন, যাদের তিনি ১৯৯৫ সালের পর জন্মগ্রহণকারী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। (তারা ১৯৮১-৯৫ সালে জন্মগ্রহণকারী মিলেনিয়ালদের অনুসরণ করে এসেছে।) জেড প্রজন্মের প্রাপ্তবয়স্করা চারটি প্রযুক্তিগত প্রবণতার একত্রিত হওয়ার সময় বয়ঃসন্ধিকালে প্রবেশ করেছিল। এক ছিল ২০০৭  সালে আইফোনের আবির্ভাব, অন্যটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্রমাগত বিস্তার। তৃতীয়টি ছিল ২০০৯  সাল থেকে শুরু হওয়া “অতিরিক্ত ভাইরাল হওয়া সোশ্যাল মিডিয়ার নতুন যুগ”, যেখানে লাইক, রিটুইট এবং শেয়ার ছিল। ২০১০ সালে স্মার্টফোনে সামনের দিকের ক্যামেরা এলো, যা “কেবল দেখার জন্য নয়, বিচার করার জন্যও সমবয়সী এবং অপরিচিতদের কাছে নিজেদের জীবনের সতর্কতার সাথে নির্বাচিত ছবি ও ভিডিও পোস্ট করা কিশোরদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।”

এটি হয়ে উঠল “ইতিহাসের প্রথম প্রজন্ম যারা তাদের পকেটে একটি পোর্টাল নিয়ে বয়ঃসন্ধিকালে প্রবেশ করেছে যা তাদের কাছের মানুষদের কাছ থেকে দূরে ডেকে নিয়ে গেছে একটি বিকল্প মহাবিশ্বে যা উত্তেজনাপূর্ণ, আসক্তিকর, অস্থিতিশীল এবং শিশু ও কিশোরদের জন্য অনুপযুক্ত।” পিউ রিসার্চ জানিয়েছে, ২০১১ সালে তরুণদের ২৩ শতাংশের কাছে স্মার্টফোন ছিল। এর অর্থ হল সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের শুধু সীমিত অ্যাক্সেস ছিল – তাদের পারিবারিক কম্পিউটার ব্যবহার করতে হত। ২০১৬ সাল নাগাদ এক সমীক্ষা দেখিয়েছে তরুণদের ৭৯ শতাংশ এবং ৮ থেকে ১২ বছর বয়সীদের ২৮ শতাংশ স্মার্টফোনের মালিক ছিল। খুব শীঘ্রই তরুণরা জানাচ্ছিল যে তারা গড়ে প্রতিদিন প্রায় সাত ঘণ্টা স্ক্রিনের সামনে কাটায়। মি. হাইট লিখেছেন, “প্রতি চার জন তরুণের মধ্যে একজন বলেছেন তারা ‘প্রায় সর্বদাই’ অনলাইনে থাকেন।”

মেয়েরা তাদের সামাজিক জীবন সোশ্যাল মিডিয়ায় স্থানান্তরিত করেছে। ছেলেরা আগ্রাসী ভিডিও গেম, Reddit, YouTube এবং পর্নোগ্রাফিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। শৈশব থেকে প্রাপ্ত বয়স্কতার দিকে এই ঢেউয়ের মুখোমুখি হয়েছিল এই শিশুরা, যখন মানব মস্তিষ্ক প্রাথমিক শৈশবকাল থেকে তার সর্বাধিক অভিজ্ঞতা পুর্নবিন্যাস করে। বয়ঃসন্ধিকালে, মস্তিষ্কবিদরা যেমন বলেন, “একসাথে অগ্নিসংযোগ করা নিউরনগুলি একসাথে তার খাঁজ তৈরি করে।” সেই সময়ে আপনি যা করবেন তা “মস্তিষ্কে স্থায়ী কাঠামোগত পরিবর্তন সৃষ্টি করবে,” মি. হাইট লেখেন। হঠাৎ শিশুরা “তাদের বন্ধু এবং পরিবারের সাথে খেলা, কথা বলা, স্পর্শ করা বা এমনকি চোখের ইশারায় যোগাযোগ করা থেকে অনেক কম সময় কাটাতে শুরু করল স্মার্ট ফোনে।” তারা সফল মানব বিকাশের জন্য অপরিহার্য “শারীরিক সামাজিক আচরণ” থেকে সরে এলো। তারা তাদের পৃথিবীকে লক্ষ্য না করে চলেতে শুরু করলো। 

মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের লক্ষণগুলি দ্রুত দেখা দিল। ২০১০  এবং ২০১৫  সালের মধ্যে অনেক পশ্চিমা দেশে তরুণদের মধ্যে মানসিক রোগের হার নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। ২০১০  থেকে ২০২৪  সালের মধ্যে কিশোরীদের মধ্যে গুরুতর বিষণ্নতা ১৪৫% এবং ছেলেদের মধ্যে ১৬১% বেড়েছে। উদ্বেগ সম্পর্কিত রোগগুলিও বৃদ্ধি পেয়েছে। 

কিছু চিকিৎসা পেশাজীবী সন্দিহান ছিলেন। অধিকাংশ প্রাসঙ্গিক গবেষণা ছিল স্ব-প্রতিবেদনের ভিত্তিতে: হয়তো তরুণরা শুধুমাত্র তাদের অনুভূতি সম্পর্কে বলতে আরও ইচ্ছুক হয়ে উঠেছিল। মি. হাইট এমন পরিবর্তনগুলি পর্যবেক্ষণ করেছেন যা স্ব-প্রতিবেদিত ছিল না – জরুরি মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং ভর্তির হার গবেষণা। সেগুলিও বেড়ে গিয়েছিল। “২০১০  থেকে ২০২০  সালের মধ্যে অল্পবয়সী কিশোরীদের আত্মহত্যার হার প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।” 

মি. হাইট যাকে “গ্রেট রিওয়্যারিং” বলে অভিহিত করেছেন তা শুধুমাত্র প্রযুক্তির পরিবর্তন নিয়ে নয়। গত কয়েক দশকে অভিভাবকরা শিশুদের নিরাপদে রাখার জন্য দুটি বড় বিষয়কে পছন্দ করেছেন–  এবং বিষয় দুটিই  ভুল। “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে বাস্তব বিশ্ব বিপদে এতটাই পরিপূর্ণ যে প্রাপ্ত বয়স্কদের তত্ত্বাবধান ছাড়া শিশুদের এটি অন্বেষণ করার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়–  যদিও ১৯৯০ -এর দশক থেকে অপরাধ, হিংসা, মাতাল ড্রাইভার এবং অন্যান্য বেশিরভাগ উৎস থেকে শিশুদের ঝুঁকি তীব্রভাবে কমে গেছে। একই সময়ে, শিশুদের জন্য অনলাইনে বয়স-উপযুক্ত রেলিং ডিজাইনকেও মনে হয়েছে খুব বেশি ঝামেলার ব্যাপার।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024