বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশের রাজনীতি’র অনেক চরিত্র বদলে গেছে। পৃথিবীর সব দেশের রাজনীতিই, সময়, পরিস্থিতি, বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সর্বোপরি জনগনের মানসিকতার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায়। বাংলাদেশেও তাই ঘটেছে।
এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল রেখে কি বদলে যাচ্ছে দেশের ঈদের রাজনীতি? আগে ঈদের রাজনীতি বলতেই ছিলো প্রতিটি দলের ছোট বড় রাজনীতিকদের ঈদের বেশ কয়েকদিন আগে থেকে তার এলাকার মানুষের কাছে যাওয়া।
রাজধানী শহরে নব্বই দশকের পরে এক পর্যায়ে কোন কোন জন-প্রতিনিধি তার ভোটারদের শুধু শুভেচ্ছা বার্তা নয়, সঙ্গে ফুলও পাঠাতেন।
এমনকি কোন কোন রাজনৈতিক দলের নেতার- তাই তিনি এমপি বা এমপি প্রতিনিধি ছিলেন, তিনি সস্ত্রীক পাড়ায়, মহল্লায় ঘুরে যেতেন।
এখন রাজধানী ঢাকার এলাকার অনেক মানুষই জানেন না তাদের এলাকার জনপ্রতিনিধি কে? এমনকি এও জানেন না এই এলাকায় বিরোধী দলের বড় নেতা কে কে?
রাজধানীর মত একই অবস্থা থানা বা জেলা শহরের কিছু কিছু এলাকায়।
তাছাড়া এখন বড় বড় ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতিনিধিরাই মূলত তাদের এলাকার ঈদ সামলান বা জনগনের সঙ্গে নেতার পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন।
সব থেকে বড় যে লক্ষ্যনীয় বিষয়, আগে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের ভেতর এলাকায় যাওয়ারও জনগনের কাছে যাওয়ার একটা প্রতিযোগীতা ছিলো। এখন সে প্রতিযোগীতা আর ওইভাবে নেই। তাছাড়া এখন অধিকাংশ দলের মনোনয়নও একটা বংশগতির ধারাবাহিকতায় চলে গেছে। অর্থাৎ বর্তমান নেতার অবর্তমানে, তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এমনকি তার জামাই মনোনয়ন পাবেন। এই ধারাবাহিকতার বাইরে এসে রাজনৈতিক নেতাদের ভুগোলও ছোট হয়ে গেছে। যার ফলে এলাকায় ঈদে যাওয়ার অর্থই হলো অর্থ ব্যয়। সেটা এখন অনেক রাজনৈতিক নেতা করতে চান না।
অন্যদিকে দেশের একটি বড় দল জাতীয় পার্টি’র ভুগোলও দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। সমর্থকের দিক থেকে দেশের মূল বিরোধী দল বিএনপির অবস্থান কেউ বুঝতে পারছে না। কারণ, তারা তাদের জন সমর্থন দেখানোর সুযোগ নিতে পারছে না। বরং তারা নির্বাচন থেকে দূরে আছে। তাই তাদের নেতাদের মধ্যেও আর ঈদ নিয়ে মানুষের কাছে যাবার আগের সেই আগ্রহ নেই।
এছাড়া আওয়ামী লীগের বাইরে তাদের সহযোগী যে চৌদ্দ দল ছিলো তাদের মধ্যে বর্তমানে জাসদ ( ইনু) ও ওয়ার্কাস পার্টি ( মেনন) আছেন। জাসদ (ইনু) প্রধান হাসানুল হক ইনু’র এবার নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় দলটিকে অনেকটা ম্লান করে দিয়েছে।
ওয়ার্কাস পার্টি ( মেনন) এর প্রধান রাশেদ খান মেননও ঢাকা থেকে চলে গেছেন। বরিশাল গিয়ে কোন মতে টিকে আছেন।
এছাড়া চৌদ্দ দলে ওইভাবে আর কোন দলের অস্তিত্ব নেই। তাই তাদের ঈদের রাজনীতিও সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।
কমিউনিস্ট পার্টি আশির দশকে মোহাম্মদ ফরহাদের আমলে অনেকটা মাস পিপলের পার্টি হয়ে উঠেছিলো। এখন তাদের হাতে গোনা কয়েকজন সমর্থক আছেন। তাই তাদের ঈদ রাজনীতি ওইভাবে নেই বললেই চলে।
মূল জামায়াতে ইসলামী’র রাজনৈতিক অধিকার নেই। তবে তাদের সমর্থকরা যে ঈদের সময় তাদের আধিপত্য আছে এমন এলাকাগুলোতে জনগনের কাছে যাচ্ছে তার কিছুটা সংবাদ নানান ভাবে পাওয়া যায়।
অন্যদিকে নতুন প্রজন্মে জামায়াতি ইসলামী এবি পার্টিরও নিবন্ধন নেই। তবে তাদেরকে ঈদের তাদের সাইজ অনুযায়ী বেশ সরবই মনে হচ্ছে।
ভিপি নূর মাঝে মাঝে তার রাজনৈতিক দল নিয়ে প্রেসক্লাবে উপস্থিত হন। মাহামুদুর রহমান মান্নাও উপস্থিত হন। তবে এটা সত্য এখনও ঈদের রাজনীতির অংশ হবার মতো অবস্থান তাদের হয় নি। তাই এ ঈদে তাদের উপস্থিতি এলাকায় ঈদ দুয়ারে এসে গেছে তবুও তাদেরকে দেখা যাচ্ছে না।
Leave a Reply