শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন

বর্ষবরণে ঢাবির চারুকলায় চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার জোর প্রস্তুতি

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১.০০ পিএম

শিবলী আহম্মেদ সুজন

বাঙালির অন্যতম প্রধান সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ। শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গই নয়, আসাম, ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীময় প্রবাসীদের মধ্যেও। বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান উৎসবে পরিণত হয়েছে বৈশাখের প্রথম দিনটি।

 

সকালে ঢাকার রমনার বটমূল প্রায় চার দশক আগে এ উৎসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা এখন বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবেও স্বীকৃত।
কয়েকশ’ বছরের পুরনো বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস।

 

১৯৮৫ সালের পহেলা বৈশাখ যশোরে প্রথম শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। দেশের লোকজ সংস্কৃতি উপস্থাপনের মাধ্যমে সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা ছিল এর উদ্দেশ্য। সেই শোভাযাত্রার উদ্যোগ নিয়েছিলেন চারুশিল্পী মাহবুব জামাল শামিম। সীমাবদ্ধ থাকেনি মঙ্গল শোভাযাত্রা যশোরে। পৃথিবীর যেখানেই বাঙালির বসবাস মঙ্গল শোভাযাত্রাও যেন ততদূর পর্যন্ত এ উৎসবের ব্যপ্তি ঘটে।

 

‘আনন্দ শোভাযাত্র’নামে ঢাকার চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। পরে তা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হিসেবে পরিচিত হয়।
পহেলা বৈশাখ বা পয়লা বৈশাখ । বাংলা মাসের এই প্রথম দিনটি সকল বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। বাংলা নববর্ষ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় ও সার্বজনীন উৎসব।

 

বাংলাদেশে বসবাসকারী সকল ধর্মের মানুষের কাছে এ এক মিলন উৎসব।

 

বাংলা নববর্ষের ইতিহাস মুঘল সমাট আকবর চান্দ্র হিজরি সনের সঙ্গে ভারতবর্ষেরসৌর সনের সমন্বয় করে ১৫৫৬ সাল বা ৯৯২ হিজরিতে বাংলা সন চালু করেন। বাংলা সন চালু হওয়ার পর নববর্ষ উদযাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতা যুক্ত হয়।

 

পুরোনো বছরের সমস্ত গ্লানি ধুয়ে মুছে, জীর্ণ ক্লান্ত অবসাদের অবসান ঘটিয়েআত্মপ্রকাশ করে বাংলা নববর্ষ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, “প্রতিদিন মানুষক্ষুদ্র, দীন, একাকী, কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ।

 

সারাবিশ্বের বাঙালিরা এই দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়।
বাংলা নবর্ষের সাথে গ্রামীণ সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়।

 

বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয় এবং মোটামুটি সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোন খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার।মেলাতে থাকে নানা রকম কুটির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানারকম পিঠা পুলির আয়োজন।

 

 

অনেক স্থানে কয়েক দশক হলো যুক্ত হয়েছে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার প্রচলন। এই দিনের একটি পুরনো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন।

ঢাকার রমনার বটমূলে বসে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বৈশাখী মেলা। এখানে লাখো মানুষের সমাবেশ ঘটে। মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।পুরো এলাকাজুড়ে বহুবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়ে থাকে।

 

এদিন প্রায় সমস্ত দোকানপাট নতুন রঙে সেজে ওঠে। দোকানে দোকানে মিষ্টি বিতরণকরে নতুন হালখাতা চালু করা হয়। পুরাতন হিসাব চুকিয়ে খোলা হয় নতুন হিসাবেরখাতা।

 

 

মঙ্গল শোভাযাত্রা এক রঙিন সাংস্কৃতিক পদযাত্রা এবং আনন্দমিছিল, যা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এটি বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখে উদ্যাপিত হয় ।

 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা প্রত্যেক বছর ১৪ই এপ্রিল নতুন বাংলা পঞ্জিকার সূচনা উপলক্ষে এটির আয়োজন করে। মঙ্গল শোভাযাত্রা অর্থ হলো মঙ্গলার্থে পদযাত্রা। বাংলাদেশের মানুষের সাম্য ও সহিষ্ণুতার মূর্ত প্রতীক এই সোৎসাহ শোভাযাত্রা।

 

বর্তমান বাংলাদেশে সারাদেশের মত ঢাকাও বৈশাখী উৎসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখের সকালে এইশোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলাইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়।

 

এই শোভাযাত্রায় গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়।শোভাযাত্রায় সকল শ্রেণী-পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে।
শোভাযাত্রার জন্য বানানো হয় বিভিন্ন রঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি।১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখ উৎসবের একটি অন্যতমআকর্ষণ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

 

প্রতিবছরের মত এ বছরও চারুকলায় নতুন বছরকে বরণ করে নিতে নানা আয়জনের প্রস্তুতি চলছে।
চারুকলার ২৫ তম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখের সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি চারুকলা থেকে বের হয়ে রমনার রাস্তা ঘুরে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় হয়ে আবার চারুকলাতে এসে শেষ হবে ।

 

চারুকলায় ২৫ তম বর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার ৩৭ জনের একটি কমিটি রয়েছে।
কমিটির মূলে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারা হলেন,সাদিত সাদমান রাহাত,দিপাকর সরকার, সুতপাতা, জাবির.ডিএম নাফিস , আব্দুল করিম , নাজমুস সাকিম ।

 

২৫তম বর্ষের কমিটির দায়িত্বে থাকা সাদিত সাদমান রাহাতের সাথে কথা বলে জানা যায় , মঙ্গল শোভাযাত্রার সব কিছুর প্রস্তুতি ৯০ ভাগের মতো শেষ হয়েছে ।
চারুকলার ২৫তম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা খুবই আনন্দের সাথে দেওয়ালে রিক্সা- পেইন্ট করছে।

 

চারুকলার বাহিরের দেওয়াল গুলোতে আকাঁ হয়েছে গ্রাম বাংলার নব-বধূর ছবি , বাংলা সিনেমার বেদের মেয়ে জোসনা , নৌকায় বৈঠা হাতে বাঘ,হাতি,হরিণ,ভাল্লুক,সিংহ, খরগোশ,বানরের ছবি , গ্রাম বাংলার দৃশ্যের ছবি,ময়ুরের ছবি ইত্যাদি।

 

চারুকলার ভিতরে বৈশাখের জন্য দুইটি স্টল হয়েছে । একটি স্টলে বিক্রয়ের জন্য আকাঁ বিভিন্ন রকমের পেইন্টিং ঝোলানো রয়েছে । যেমনঃ বিড়াল,গ্রামের দৃশ্য,ঘোড়া,পাল তোলা নৌকা,টিনের বাড়ি,বৌদ্ধা, ষাঁড় ইত্যাদি ।

 

অন্য আরেকটি স্টলে ঝোলানো রয়েছে বিভিন্ন রঙের পাখি, হাড়িতে আঁকা নব বধূ, গ্রামের দৃশ্য, বাঘ, কুলা,ময়ুর , টেবিলে রাখা হয়েছে ,হাতির মুখোশ, পেচাঁর মুখোশ ইত্যাদি ।

 

চারুকলার ভিতরের রুম গুলোতে গিয়ে দেখা গেলো , বিভিন্ন হাতি ,ঘোড়া,পেচাঁর মুখোশ আলপনা দিয়ে আকঁতে ব্যস্ত চারুকলার ২৫তম ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীরা ।
ভিতরের একটি রুমের দেওয়ালে ২৫তম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা একত্রিত হয়ে আকঁছে গ্রাম-বাংলার দৃশ্য।

 

১৪৩১ নববর্ষে মঙ্গলশোভা যাত্রার জন্য বানানো হচ্ছে তিনটি প্রতিকৃতি।যেমনঃ টেপা পুতুল,ময়ুর ও হাতি।
বাংলা নববর্ষ বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান উৎসব। এদিনে বাঙালি নিজস্ব সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে।

 

শুধু বছরের প্রথম দিন নয়, সারা বছর ধরে যদি বাঙালি এই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সচেষ্ট হয় । তবে বাঙালি সংস্কৃতি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতিতে পরিণত হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024