শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৩ অপরাহ্ন

মার্কিন প্রতিনিধি দলের সিরিজ মিটিং, ইন্দো- প্যাসিফিক নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও সংলাপ প্রাধান্য পেলো

  • Update Time : সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ৪.৪৫ পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক 

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পারস্পরিক স্বার্থের অগ্রগতির জন্য কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে সম্প্রতি ঢাকায় আসে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন  মার্কিন প্রেসিডেন্টে জো বাইডেনের বিশেষ সহকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক এইলিন লুবাখার । এছাড়া ওই  প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার।তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার তারা বাংলাদেশে আসেন ।

প্রতিনিধিদল শনি ও রোববার পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আমীর খসরু মাহমুদসহ সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি, শ্রমিকনেতা, কৃষিবিদ, তরুণ অ্যাকটিভিস্ট, যুব কর্মী এবং মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম তৈরিতে নিয়োজিতদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।তারা দেখা করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মামুদের সঙ্গেও।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পারস্পরিক স্বার্থের অগ্রগতির জন্য কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছেন তারা।

‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী এবং দেশটির একক বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।’যুক্তরাষ্ট্র সমৃদ্ধ, নিরাপদ ওগণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে সমর্থন করে—রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এমন বার্তাই দিয়েছে ঢাকায়সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদল।

মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমরা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি যে আমাদের দুই দেশ কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা, শরণার্থী, জলবায়ু, শ্রম ও বাণিজ্যসহ পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠির একটি অনুলিপি রোববার বাইডেনের বিশেষ সহকারী এইলিন লুবাখারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মূল চিঠিটিহোয়াইট হাউসে হস্তান্তর করবেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।

মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী এবং দেশটির একক বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।

‘কীভাবে আমরা ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করে বাংলাদেশে বিনিয়োগকে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর কাছে আরও আকর্ষণীয়করে তুলতে পারি? ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আসা আমাদের নেতারা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এমন বিভিন্নবিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্থানীয় অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বিনিয়োগ আকৃষ্টকরে—এমন একটি ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র’,

মার্কিন প্রতিনিধিদল ও সাবের হোসেন চৌধুরীর মধ্যকার বৈঠক প্রসঙ্গে মার্কিন দূতাবাস বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়েঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

‘জলাভূমি রক্ষা ও বন সংরক্ষণের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে শুরু করে, বায়ুদূষণ মোকাবিলায় তরুণজলবায়ুকর্মীদের সহায়তা করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে এই যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করারউপায় নিয়ে আলোচনা করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’

প্রধানমন্ত্রী’র বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদরের বৈঠক প্রসঙ্গে দূতাবাস বলেছে, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রবাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে। জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাকৃতিকদুর্যোগ এবং আরও অনেক কিছু মোকাবিলায় আট বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রদান করেছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকীভাবে সহযোগিতা করছে তা জানতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আনন্দিত। আমরা আগামী ৫০ বছর এবং তার পরেও অর্থনৈতিক বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ।

যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত) হেলেন লাফাবের বাসায় রোববার সকালে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজেরপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।  দুই ঘণ্টার ওই মতবিনিময়ে যোগ দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন, অধিকারসম্পাদক আদিলুর রহমান খান, নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন হক ও সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) নির্বাহীপরিচালক জিল্লুর রহমান।

নাগরিক সমাজের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সফররত প্রতিনিধিদলের মতবিনিময়ের পর ঢাকায় দেশটির দূতাবাস তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছে, ‘গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে নাগরিক সমাজ। আজ বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের সাহসী ও প্রত্যয়ী ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে পেরে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত থাকব। সরকারকেও তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার আহ্বান জানাব।’

মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে, সুস্থ গণতন্ত্র এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে নাগরিক সমাজগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনায় দেশটির সুশীল সমাজের সাহসী এবংপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্যক্তিত্বদের সাথে আজ দেখা করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে আমাদেরসম্পৃক্ততা অব্যাহত থাকবে, এবং বাংলাদেশ সরকারকেও তা-ই করার আহ্বান জানাচ্ছি।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট এবং এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের(ইউএসএআইডি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তিনসদস্যের একটি দল।  তবে, এই বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে বললেও সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবেকিছু বলেনি দলটি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল বা দূতাবাসের পক্ষ থেকেও কেউ বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাওবলেননি।

কিন্তু, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে মূলত কি কি নিয়ে হয়েছে ওই আলোচনা। এতে বলা হয়, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে বোঝা এবং স্বীকৃত সমাধান খুঁজে বের করার মূল চাবিকাঠি হল গঠনমূলক সংলাপ। বাংলাদেশের বর্তমানরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কারাগারে বন্দী হাজার হাজার বিরোধীদলীয় সদস্যের বিষয়ে এক ফলপ্রসূ আলোচনায় আমরাস্বাগত জানিয়েছি বিএনপি মহাসচিবকে। অব্যাহত সম্পর্কের অপেক্ষায়!

বিভিন্ন সময় আলোচনায় আসা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কল্পনা আক্তারের শ্রমিক অধিকার সংগঠনের কার্যালয় পরিদর্শন করেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024