শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের দিন

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১.৩৩ এএম

স্টাফ রাইটার

১৭ এপ্রিল। ১৯৭১ সালে এ দিনে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি  ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষ যুদ্ধকালীন ছোট একটি ক্যাবিনেট করা হয়। সেখানে তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে আর মাত্র তিনজন মন্ত্রী নেয়া হয়, তারা ছিলেন, মনসুর আলী, কামারুজ্জামান ও খোন্দকার মোশতাক। খোন্দকার মোশতাককে অবশ্য অক্টোবর মাসের শেষের দিকে মন্ত্রী হিসেবে অকার্যকর করে রাখা হয়। কারণ, তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার যে চেষ্টা করছিলেন সেটা বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকারের কাছে ধরা পড়ে যায়। যুদ্ধের ওই সেনসেটিভ সময়ে তাকে অপসারণ না করে তার স্থলে বিশেষ দূত হিসেবে আব্দুস সামাদ আজাদকে কাজে লাগানো হয়।

১৭ এপ্রিল এই বাংলাদেশ সরকারের আত্মপ্রকাশের পথে বেশ কয়েকটি ধাপ পার হতে হয়। প্রথমত ২৫ মার্চের ক্রাক ডাউনের পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

এই স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরে বাংলাদেশ সরকারের আত্মপ্রকাশ করতে প্রায় ২০ দিন সময় লাগে। এই সময়ে বাংলাদেশের সরকার গঠনের জন্য নির্বাচিত নেতাদের বেশ কয়েকটি আইনত ধাপ পার করতে হয়।

তবে ব্যারিষ্টার আমরিুল ইসলামের সঙ্গে যিনি সব ধরনের আইনি সহায়তা দিয়ে সহযোগীতা করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র লিখতে সেই সুব্রত রায় চৌধুরি তাঁর লেখা The Genesis of Bangladesh বইতে লিখেছেন, জাতি সংঘের ঘোষনা অনুযায়ী একটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে যে তিনটি বিষয় আইনত প্রয়োজন হয়- এক, একটি রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস। দুই, তারা কোন পক্ষ ভুক্ত নয় অর্থাত্‌ জোট নিরপেক্ষ। তিন,  নিজস্ব ভূমির ওপর তাদের অধিকার রয়েছে।

বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে এই তিন শর্ত সেদিন পূরণ করেছিলো। যে কারণে বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা ছিলো সম্পূর্ণ বৈধ। আর এই স্বাধীনতার ঘোষণাকে সাংবিধানের অধিনে আইনত রূপ দেবার জন্যে ১০ এপ্রলি, সংবিধানের জেনেসিস বা শেকড় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ঘোষণা করা হয়। যে ঘোষণাপত্রে’র সুব্রত রায় চৌধুরিও একজন সহযোগী লেখক।

তিনি তার বইয়ে লিখছেন,যতক্ষণ না পর্যন্ত পুনাঙ্গ সংবিধান রচিত হবে, ততক্ষণ অবধি শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করবেন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করবেন। এবং রাষ্ট্রপতি সেনাবাহিনীর সকল বাহিনীর প্রধান ও দেশের সকল নির্বাহী এবং সাংবিধানিক এমনকি ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাও তার। এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রী সহ অন্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করবেন।

তাই স্বাভাবিকভাবে ১০ এপ্রিল যখন এই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বা সংবিধানের জেনাস ঘোষিত হয় তখনই বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন প্রজাতন্ত্র হিসেবে নিজেকে আইনত ভাবে প্রকাশ করে।

এবং এ দিনে বঙ্গবন্ধু যেহেতু পাকিস্তানে কারাগারে বেআইনীভাবে বন্দী ছিলেন, তাই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাংবিধানিকভাবে তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। এবং ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জেনারেল ওসমানীকে সেনাপ্রধান হিসেবেও নিয়োগ দেন।

আর এই ধাপগুলো পার হয়ে আসার পরে ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের ভূখন্ডের মধ্যে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা যা সেদিনই মুজিব নগর হিসেবে চিহ্নিত হয়। সেখানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট গার্ড অফ অনার নেন। যদিও এর নেতৃত্ব দেবার কথা ছিলো জেনারেল ওসমানীর। তবে তিনি সময় মতো না পৌঁছাতে পারায়, পুলিশ সুপার মাহবুব ওই গার্ড অফ অনারের নেতৃত্ব দেন।

ওই গার্ড অফ অনারের পরে দেশের প্রথম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী

উপস্থিত দেশীয়ও বিদেশী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।

তারা উভয়েই নতুন এই রাষ্ট্রের জন্যে পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের কাছে স্বীকৃতি চান। অন্যদিকে একথাও বলেন, পৃথিবী এ বিষয়ে যত বেশি বধির থাকবে তত বেশি নিরীহ মানুষের মৃত্যু ঘটবে- অর্থাত্‌ জেনোসাইডের আকার আরো বাড়বে- যা শুরু হয়েছে ২৫ মার্চ একাত্তর থেকে।

সেদিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী দেশ ভারত এই অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার সার্বিক দ্বায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছিলো। তাদের বিমান, ট্যাঙ্ক বাহিনী ও সাধারণ সৈনিকরা সার্বক্ষনিক প্রস্তুত ছিলো পাকিস্তানি হামলা মোকাবেলা করার জন্যে। যার ফলে নির্বিঘ্নে বাংলাদেশ সরকার সেদিন আত্মপ্রকাশ করে।

যদিও আজ থেকে ৫৪ বছর আগের এ ঘটনা। তবুও ইতিহাসের এই দিন, নতুন প্রজাতন্ত্রের সরকারের আত্মপ্রকাশের দিন- সব জাতিই চিরকাল পালন করে আপন অন্তরের মর্যাদা দিয়ে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যথামর্যাদায় এ দিন পালনের সূচনা করবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024