সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০১:৩৯ অপরাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৭)

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

 

জগৎশেঠ উপাধির সঙ্গে ফতেচাঁদ সম্মানের চিহ্নস্বরূপ মতির কুণ্ডল ও হস্তী প্রভৃতি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। শেঠদিগের বংশবিবরণী হইতে এই রূপ জানা যায়, সম্রাট মহম্মদশাহ ফতেটাদের প্রতি এরূপ সন্তুষ্ট ছিলেন যে, এক সময়ে কোন কারণে তিনি মুর্শিদকুলী খাঁর উপর বিরক্ত হওয়ায়, তাঁহাকে পদচ্যুত করিয়া ফতেচাঁদকে বাঙ্গলার নবাবী প্রদান করিতে ইচ্ছা করেন। ফতেচাঁদ নবাবীগ্রহণে অস্বীকৃত হইয়া বাদশাহকে অবগত করান যে, নবাব মুর্শিদকুলীর অনুগ্রহেই তাঁহারা দেশ মধ্যে ধনী ও সম্মানী হইয়া উঠিয়াছেন; সুতরাং তাঁহাদের এরূপ উপকারী বন্ধুর পদ গ্রহণ করিতে তিনি কদাচ ইচ্ছুক নহেন।

তাঁহার আন্তরিক ইচ্ছা যে, বাদশাহ ক্রোধ পরিত্যাগ করিয়া নবাবের প্রতি পুনর্ব্বার পূর্ব্বের ন্যায় কৃপাদৃষ্টি করেন। বাদশাহ ইহাতে ফতেচাঁদের উপর অত্যন্ত প্রীত হইয়া, নবাবকে এই রূপ আজ্ঞাপত্র লিখিয়া পাঠান যে, এখন হইতে সমস্ত রাজকার্য্যে শেঠদিগের পরামর্শ গ্রহণ করিতে হইবে। বাদশাহ- দরবার হইতে বাঙ্গলার নাজিমকে সময়ে সময়ে যে সমস্ত খেলাত প্রদত্ত হইত, তত্ত্বল্য আর একটি শেঠদিগকে পাঠাইতে সম্রাট কখনও বিস্তৃত হইতেন না।

১৭২৫ খৃঃ অব্দে মুর্শিদকুলী খাঁর মৃত্যু হইলে, সুজা উদ্দীন বাঙ্গলার সুবেদারী পদ লাভ করেন। তিনি জগৎশেঠ ফতেচাঁদ, প্রধান মন্ত্রী হাজী আহম্মদ ও রায়রায়ান আলমচাঁদের পরামর্শানুসারে সমস্ত রাজ- কার্য নির্ব্বাহ করিতেন। শেঠেরা বাঙ্গলার রাজস্ব বিভাগের পোদ্দারী পদে নিযুক্ত থাকশর, সুজা উদ্দীন ফতেচাঁদের দ্বারা ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার রাজস্ব দিল্লীতে প্রেরণ করেন। যত দিন সূজা উদ্দীন জীবিত ছিলেন, তত দিন ফতেটাদের পরামর্শ ব্যতীত কোন কাৰ্য্যই বরেন নাই। তিনি মৃড়াকালে স্বীয় পুত্র সরফরাজ খাঁকে জগৎশেঠ ও রাহরায়ানের পরামর্শগ্রহণ করিয়া যাবতীয় রাজকার্য্যপরিচালনের উপদেশ দিয়া যান।

সরফরাজ ১৭৩৯ খৃঃ অব্দে মুর্শিদাবাদের মসনদে উপবিষ্ট হন। তিনি অত্যন্ত অস্থিরচিত্ত ও ইন্দ্রিয়াসক্ত হওয়ায়, জগৎশেঠ বা রায়- রায়ানের পরামর্শ গ্রহণ করিতেন না। অধিকন্তু তাঁহাদিগকে অবজ্ঞা করিয়া সময়ে সময়ে অবমানিত করিতে চেষ্টা পাইতেন। পুজা উদ্দীনের সময় হইতে হাজী আহম্মদ প্রধান মন্ত্রীর ও তাঁহার ভ্রাতা আলিবর্দী খাঁ আজিমাবাদের শাসনকর্তার পদে নিযুক্ত ছিলেন। সকলে অবমানিত হওয়ায়, হাজী আহম্মদ, আলমচাঁদ ও জগৎশেঠ পরামর্শ করিয়া, সরফরাজের পরিবর্তে আলিবন্দীকে সিংহাসন প্রদানের চেষ্টা করিয়াছিলেন। তাঁহাদের পরামর্শ অবশেষে কার্য্যেও পরিণত হয়।

শেঠবংশীয়োরা ফতেচাঁদের সহিত নবাব ফরাজের মনোবিবাদের এই রূপ কারণ নির্দেশ করিয়া থাকেন। মুর্শিদকুলী খাঁর মৃত্যু সময়ে শেঠদিগের নিকট তাঁহার নিজের যে কোটি টাক। গচ্ছিত ছিল, এপর্য্যন্ত তাহা প্রত্যর্পিত না হওয়ায়, সরফরাজ ফতেচাঁদকে অত্যন্ত পীড়া- পীড়ি করিতে থাকেন; এমন কি, তাঁহার প্রতি অপমানসূচক বাক্য- পর্য্যন্ত প্রয়োগ করিয়াছিলেন। তজ্জন্য সেই বৃদ্ধ জগৎশেঠ দৃপ্ততি নবাবকে পদচ্যুত করিতে কৃতসঙ্কল্প হন। কিন্তু ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ এই। বিবাদের অন্য কারণ নির্দেশ করেন। তাঁহারা বলেন যে, বৃদ্ধ ফতেচাঁদ স্বীয় পৌত্র মহাতপ রায়ের সহিত একটি কিঞ্চিঙ্গ্যূন একাদশবর্ষীয়া অর্থে ফতেচাদের পুত্র বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু হলওয়েলের গ্রন্থে ফতেটাদের পৌত্র মহাতপ রায়ের বিবাহের কথাই আছে।

 

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৬)

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৬)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024