( ওয়াশিংটন পোস্টের সম্পাদকীয়)
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনগুলো ইসরাইলের দিকে ধেয়ে আসার দৃশ্য ও যা প্রায় সম্পূর্ণরূপেই আটকাতে সমর্থ হয়েছে ইসরাইল। ইরান থেকে ইসরাইলের ওপর প্রথমবারের মতো সরাসরি আক্রমণকে ইসরাইল ও তাদের মিত্ররা, যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও অন্তর্ভুক্ত, তাদের তৈরি অত্যন্ত কার্যকর এই ঢাল কীভাবে আটকে দিলো তা গোটা পৃথিবী বিষ্ময়রে সঙ্গেই দেখেছে। তবে এই ফলাফলের জন্য স্বস্তি নিশ্চয়ই ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্যের জন্য দীর্ঘকাল ধরে আটকে থাকা বিলটি পাস করতে চেষ্টা থেকে মনোযোগ সরাবে না। কারন সেখানেও অনুরূপ ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ থেকে নিজেদেরকে তারা রক্ষা করছে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে গাজার নিরন্তর যুদ্ধ সমাধানের চেষ্টা থেকেও ইউক্রেনের ওই ক্ষেপনাস্ত্র ঠেকানোর দিকটাতেও মনোযোগ দেয়া উচিত।
কংগ্রেসে, কয়েক মাস ধরে দুটি সংঘাত জড়িয়ে আছে, কারণ একটি সেনেট বিল, অন্তত একটি চেম্বারের মাধ্যমে পাস করা একমাত্র সাহায্য প্যাকেজ, ইউক্রেন এবং ইসরাইলের প্রতিরক্ষার জন্য তহবিল দেবে। হামাসের ৭ অক্টোবরের ইসরাইলের ওপর হামলার পর যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিপদগ্রস্ত দুটি গণতান্ত্রিক দেশকে সাহায্য করার চেষ্টা করছিল, তখন এই দুইটি লিঙ্ক করা যুক্তিযুক্ত ছিল। এটি বিলটির রাজনৈতিক সমর্থন গড়ে তুলতেও সাহায্য করেছিল, কারণ এটি প্রো-ইউক্রেন এবং প্রো-ইসরাইল আইনপ্রণেতাদের সংযুক্ত করেছিল।
ছয় মাস আগে সাহায্য বিলটি সেনেট পাস করার পর থেকে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ইসরাইলের গাজা অপারেশনকে নিয়ে বাম পক্ষের উদ্বেগ বেড়েছে এবং ডান পক্ষে ইউক্রেনকে অর্থায়নের বিরোধিতা বেড়েছে। সপ্তাহান্তে ইরানের হামলার পর, সাহায্য প্যাকেজের জন্য ভোট দেওয়া উভয় পক্ষের জন্য আরও সহনীয় হতে পারে। হাউস স্পিকার মাইক জনসনের (রিপাবলিকান- এলএ) এটিকে দ্রুত ফ্লোরে আনা উচিত।
তবে সোমবার ( ১৫ এপিল) রাতে, তিনি ইউক্রেন, ইসরাইল এবং তাইওয়ানের জন্য একই সময়ে পৃথক পৃথক সাহায্যের বিলে ভোট দেওয়ার জটিল পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন। রিপাবলিকান এবং রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুরোধে হাউসের ছয় মাসের অর্থহীন বিলম্বের মধ্যে দিয়ে, ইউক্রেনের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেছে। দেশটির বায়ু প্রতিরক্ষা, গোলাবারুদ এবং যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন, ইরানের ইসরাইলকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা সপ্তাহান্তের ঝড়ুর গুলি আটকানোর মতো দেশগুলির জোট থেকে।
যদিও টাকা বা অস্ত্র ইউক্রেনের সামরিক জনবল সমস্যার সমাধান করতে পারে না, দেশটি আরও সেনা সদস্য বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই তাদের এ ক্ষেপনাস্ত্র ঠেকানো প্রয়োজন। যাতে ইউক্রেনের সীমিত সংখ্যক তরুণ ইউক্রেনীয়রা যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যাবে। আর যদি যুক্তরাষ্ট্র আরো বিলম্ব করে তবে সেটা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সাহায্য করবে। যিনি রাশিয়ার অর্থনীতিকে যুদ্ধ উৎপাদনের দিকে পুনর্নির্দেশ করেছেন এবং ইউক্রেনের দুর্বর ফ্রন্ট লাইনের দিকে তার পদাতিক বাহিনীকে মার্চ করাবেন। এখনই ইউক্রেনকে সমর্থন করা মিঃ পুতিনকে দেখাবে যে তিনি ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন থেকে ট্রাম্প প্রেসিডেন্সিতেও অন্য কোন কিছু পাবেন না সেটাই স্পষ্ট হবে।
মিঃ ট্রাম্পের উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, মার্কিন সাহায্যের একটি ভারী প্রবাহ ইউক্রেনকে লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ মাসগুলোর মধ্যে দিয়ে যাবেন, ইউরোপীয় দেশগুলো সেই সময় তাদের সমর্থন বৃদ্ধি করতে ব্যবহার করতে পারে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য রাশিয়া যে হুমকি দেয় তারা বিপরীতে ইউক্রেনের লড়াইকে সমর্থন করার জন্য আরও জোরালোভাবে কথা বলেছেন। এবং, যুদ্ধ যেভাবেই শেষ হোক না কেন, এখনই সহায়তা প্রদান আলাপ আলোচনায় বসার ক্ষেত্রেও ইউক্রেনকে পরবর্তীতে একটি অনুকূল অবস্থানে রাখবে । এবং এই অবস্থান নিলে ইউক্রেনে গণতন্ত্র গড়ে তোলার এবং পশ্চিম ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তার ঝুঁকে থাকাও নিশ্চিত হবে।
মধ্যপ্রাচ্যেও উত্তেজনা হ্রাস এবং পরিশেষে শান্তি স্থাপন করা উচিত। সপ্তাহান্তে, ইরানের আক্রমণ জুডিও রাষ্ট্রের বায়ু প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধবিমানের দ্বারাই প্রতিহত হয়নি, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের গুরুত্বপূর্ণ সাহায্যও ছিল আকাশে। এই জোটের দ্রুত কাজ সঙ্কল্পের একটি স্বাগত প্রদর্শন ছিল এবং ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, অর্থনীতিবিদরা যাকে “প্রকাশিত পছন্দ” বলেন তার একটি উদাহরণ: এক পাশে ইসরাইল এবং অন্য পাশে ইরানের ধর্মতন্ত্রের মধ্যে নির্বাচন করতে বাধ্য হলে, পশ্চিমা বিশ্ব অন্তত একটি গুরুত্বপূর্ণ আরব রাষ্ট্রকে বেছে নেওয়ায় দ্বিধা করেনি।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরাইলকে ইরানের সাথে একজন টিট-ফর-ট্যাট উত্তেজনা এড়াতে এবং আরও বৃহত্তর যুদ্ধ এড়াতে উত্সাহিত করছেন যা এটি নিয়ে আসতে পারে। যতক্ষণ তার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় থাকে, ততক্ষণ ইসরাইল দেখিয়েছে যে তারা নিজেকে রক্ষা করতে এবং ইরানের আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে।
সেই সম্পর্কগুলি বজায় রাখতে এবং সামরিক অপারেশনের সিভিলিয়ান পুরুষ, নারী ও শিশুদের অসহনীয় দুর্দশার অবসান ঘটাতে, ইসরাইলের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত গাজায় যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ শেষ করা। এর জন্য নিশ্চিত করা দরকার তাৎক্ষণিক মানবিক ত্রাণযেন হতাশাগ্রস্থ ফিলিস্তিনিদের কাছে পৌঁছায়। এর অর্থ নাগরিক জীবন সম্মান করে একটি বিশ্বাসযোগ্য সামরিক অপারেশনের অবসান ঘটিয়ে গাজার একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা যা হামাসকে পাশে সরিয়ে রাখে এবং গাজাবাসীকে তাদের ভবিষ্যতের জন্য কিছুটা আশার আলো দেয়।
সপ্তাহান্তে আঞ্চলিক ইরান-বিরোধী সহযোগিতার মুহূর্তের পরে, ইসরাইল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরব দেশগুলোকে গাজা পুনর্গঠনে সাহায্য করতে সহজে রাজি করাতে পারে। প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে ছয় সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতি, যা তারা সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বন্ধ-চালু আলোচনা করছে, হামাসের দ্বারা বন্দিদের মুক্তি সহ।
এই সপ্তাহান্তের পরে, হামাসের নেতারা, যারা আটকে আছেন, তাদের বুঝতে হবে যে কোনো ইরানি বা ইরান-সমর্থিত আক্রমণ তাদের উদ্ধার করবে না – আংশিকভাবে কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সাম্প্রতিক নেতানিয়াহু সরকারের সাথে তার বিরোধ সত্ত্বেও, ইসরাইলের নিরাপত্তার প্রতি আমেরিকা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে।
উভয় সংঘাতই এখনও সমাধান থেকে অনেক দূরে মনে হচ্ছে। তাই এই সপ্তাহান্তে ইসরাইলের আকাশে যেমন করেছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে সেখানে অতি খারাপ কোন পরিস্থিতিকে এড়াতে পারে।
Leave a Reply