বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৭:০৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ইমতিয়াজ আলি তার তামাশার ক্লাইম্যাক্সে দীপিকার কাছে রণবীরকে প্রণাম করেছেন যে: ‘তারা একে অপরের সাথে অভিনয় করতে ভালোবাসে’ বিলাসিতা ছেড়ে শ্রমিকদের কল্যাণে বিশেষ নজর দিতে শিল্প মালিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফর নিয়ে আগামীকাল সকালে সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন প্রধানমন্ত্রী খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ৪৮ ঘন্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে ২০২৪-২০২৫ সালের বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করে মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের দাবি :জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশ অভিবাসন বন্ধ করলে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আসতে পারে ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের অভিযান ‘তাদের কাজ একটাই, অ্যাপস খোলেন, ভাড়া মারেন, আমাদের কমিশন আমাদের দেন’ ১২ বছর পর ‘লাপাতা লেডিস’ সিনেমার মধ্যদিয়ে পরিচালনায় ফিরলেন কিরণ রাও

আগামী ছাত্র রাজনীতিকে ইনোভেটিভ নেতা তৈরি করতে হবে: আখতারউজ্জামান

  • Update Time : বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৯.৪৮ পিএম

– ইব্রাহিম নোমান

 

১৯৮৩ সালে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় একশত বছরের ইতিহাসে আখতারউজ্জামানই একমাত্র ছাত্রনেতা, যিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দুইবার জিএস এবং একবার ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন। আখতারউজ্জামান ১৯৭৯-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি গাজীপুর-৫ কালিগঞ্জ এর সংসদ সদস্য। তিনি সারাক্ষণের সাথে সাক্ষাৎকারে বর্তমান ছাত্র রাজনীতি এবং আগামী দিনে তা কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়েও খোলামেলা কথা বলেন। কিভাবে তরুন প্রজন্ম নিজেদের প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলবে তা নিয়েও চমৎকার দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।

তার বিস্তারিত সাক্ষাৎকার-

 

 

সবসময় তৃতীয় বিশ্বে অগ্রসর শ্রেণীর মধ্যে ছাত্ররা পড়ে, সে হিসেবে বর্তমানে যেভাবে ছাত্র রাজনীতি চলছে তাতে কি আপনি সন্তুষ্ট?

 

আখতারউজ্জামান: না, সন্তুষ্ট না। আমাদের আকাঙ্খা আরো অনেক বেশি।

 

কেন সন্তুষ্ট না, কারন কী?

 

আখতারউজ্জামান: আমরা যখন ছাত্র রাজনীতি করতাম আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগে সেই তুলনায় এখন সুযোগ- সুবিধা অনেক বেড়েছে দেশে। ইউনিভর্সিটির সংখ্যা বেড়েছে, কলেজের সংখ্যা বেড়েছে, সাথে বেড়েছে শিক্ষার্থী। বিশেষ করে ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে- এই তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশের কারণে উন্নত দেশে অনেক বেশি ছাত্র রাজনীতি অগ্রসর হয়েছে। যেসব দেশের ছাত্ররা সবদিক থেকে এগিয়েছে। যুগের সাথে তাল মেলানোর জন্যই গবেষণা, তথ্য- প্রযুক্তি, শিক্ষায়, ছাত্র রাজনীতি, খেলাধুলা- সংস্কৃতি সব কিছুতে আমাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে।

 

আমাদের দেশে ছাত্র রাজনীতি খুব পরিচ্ছন্নভাবে দেখা দেয় বেশ কয়েকটি সময়ে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আমরা যখন পাকিস্তানের শাসনে ২৩ বছর ছিলাম, আমাদেরকে উপনিবেশ বানিয়েছিল। তখন ছাত্র রাজনীতির সাথে যারা ছিল তারা দেশপ্রেম নিয়ে, সাহস নিয়ে আন্দোলন করেছিল বলেই সফল হয়েছিল ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান , ৬ দফার আন্দোলন বিকশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এই ছাত্রদের জন্যই মুক্তিযুদ্ধে আমরা সফল হয়েছি। এছাড়া, জিয়াউর রহমানের শাসন আমল, এরশাদের শাসন আমল, ১/১১ এর পর দুই বছরের শাসন আমল, এই সময়েও ছাত্ররা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। তারাই আন্দোলন করে গণতন্ত্রকে জয়ী করেছে।

আর এখন দেশে নির্বাচন হয়, একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে। এই পরিবেশে আন্দোলনের ধারা হওয়া দরকার এমন- আমাদের শিক্ষাকে কিভাবে আরো বিকশিত করা যায়। নিজেদের কিভাবে আরো প্রযুক্তিতে দক্ষ করা যায় বা সে বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এর সুবিধায় তালিকায় আমরা আছি। সেটা হলো- সেসব দেশের জনসংখ্যা বেশি, যেমন আমাদের দেশ, তারা যে দেশগুলোতে এখন জনসংখ্যা কমছে যেসব দেশে কাজের সুযোগ পাবে যদি নিজেদের দক্ষ করতে পারে।

আগামী ৩৫ বছর আমাদের দেশের যুব সমাজ কর্মক্ষম থাকবে। তাই আগামী সময়ের জন্য ছাত্রদের প্রস্তুত হতে হবে। সেখানে টেকনোলজিতে খুব বেশি দক্ষ হতে হবে। সেখানে ছাত্র সংগঠনগুলোর মেনিফেস্টো হওয়া দরকার- তথ্য নির্ভর, প্রযুক্তি নির্ভর । যাতে করে সচেতন ও দক্ষ নাগরিক হতে পারে। সে নিজেই চাকরির বাজার তৈরি করতে পারে।

 

 

আধুনিক প্রযুক্তির সাথে সাথে তরুণ প্রজন্ম বদলে গেছে। আমাদের দেশের তরুনদের এই আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য কি কি করা উচিত?

 

আখতারউজ্জামান: আধুনিক প্রযুক্তি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। আমাদের এই দ্রুতগতির সাথে সমন্বয় করতে হবে। এই তাল মিলিয়ে চলার জন্য সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ আছে কিন্তু একই সাথে বেসরকারিভাবে এবং ব্যক্তি উদ্যোগের আরো বেশি কাজ করতে হবে। তা না হলে এই দ্রুতগতির সাথে আমরা তাল মিলিয়ে চলতে না পেরে, পিছিয়ে পড়বো। এজন্য সরকারী, বেসরকারী, ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক আরো বেশি উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে আমি মনে করি।

 

আমাদের দেশের যে কজন ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা অভিজ্ঞ রাজনীতিক রয়েছেন তার মধ্যে আপনি অন্যতম। তাই স্বাভাবিকই আপনার কাছে জানতে চাইবো, বর্তমান তরুন প্রজন্মের কেমন ছাত্র রাজনীতি করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

আখতারউজ্জামান: আমি মনে করি যে, তাদের বর্তমান সর্ম্পকে আরো অনেক বেশি জানতে হবে। অনেক আপডেট থাকতে হবে। আরো বেশি সৃজনশীল হতে হবে। তরুন সমাজ, ছাত্র সমাজকে বিশেষ করে প্রযুক্তির সম্পর্কে জানতে হবে। সাধারণ শিক্ষার সাথে সাথে কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষায় নিজেকে উন্নত করতে হবে। আগামী দিনের স্কিলগুলোতে তারা যেন নিজেদের দক্ষ করে তোলে। কারন পৃথিবী পুরো বদলে যাচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে।

৫০ বছর আগে পৃথিবীতে ধনী যারা ছিল তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন – জাহাজ কোম্পানি, গাড়ি ও প্লেনের প্রতিষ্ঠানের মালিক। কিন্তু গত ৩০ বছরে শীর্ষ ধনীর তালিকায় প্রথম ২০ থেকে ৫০ এর মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা উঠে এসেছে। যেমন- গুগল, মেটা-ফেসবুক, টুইটার, মাইক্রোসফট, টেসলা, স্পেস এক্স ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান। এদের মূলে রয়েছে কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তি। এখন নতুন ইনোভেশন মানেই সফলতা।

 

 

আপনাদের সময়ের ছাত্র রাজনীতির দুই-একটি ঘটনা বলুন-

 

আখতারউজ্জামান: আমি তখনো ডাকসুর ভিপি- জিএস হই নি। আমি ছাত্র সংগঠনের তখন সক্রিয় কর্মী। আমাদের অপারেজয় বাংলা ভাঙতে এসেছিল। আমরা সবাই মিলে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার ২ বছরের মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটেছিল।

আমরা ছাত্র রাজনীতি করেছি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে, এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলন করেছি। তখন আমরা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছিলাম।

আরেকটি ঘটনা হলো- ১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারি, যখন জয়নাল-জাফরকে গুলি করে হত্যা করা হলো, শহীদ হলেন তারা। শিক্ষানীতি নিয়ে গণতন্ত্রের জন্য আমরা তখন আন্দোলন করছি। এই আন্দোলন করছি মজিদ খানের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে। তখন আমি অপারেজেয় বাংলার সামনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করছিলাম। সব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এসে আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করলেন। বিশেষ করে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তখন এসে আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। আরো অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সেখানে এসেছিলেন। বিকাল ৫টার সময় যখন আমরা মিছিলে বের করবো, ঠিক তখনই পুলিশ- বিডিয়ার একত্রিত হয়ে হামলা করে। আমরা সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। এই আন্দোলনটি মধ্য ফেব্রুয়ারির আন্দোলন নামে পরিচিত।

 

 

নতুন প্রজন্মের কি ধরনের ডেডিকেশন থাকা উচিত, তাদের জন্য কি কি পরামর্শ দেবেন ?

 

আখতারউজ্জামান: প্রথমে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। রাজনীতি বলতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আমরা ধর্ম নিরপেক্ষ জাতি মানে সব ধর্মকে সম্মান করবো, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবো। ধনী-গরীবের বৈষম্য কমানোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত – শোষক এবং শোষিত; আমি শোষিতের পক্ষে।’’ নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর এই কথা মনে রাখতে হবে।

শুধু নিজের চিন্তা করলে হবে না, সমাজের চিন্তাও করতে হবে। আগে ভালো মানুষ হতে হবে, তাহলেই ভালো কর্মী হতে পারবে। জনগনের জন্য, নিজের জন্য এবং দেশের জন্য একই সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024