সারাক্ষণ ডেস্ক
ঠিক একবছর আগের এই সপ্তাহেই সুদানের দু:খজনক পতন শুরু হয়েছিল। দুটি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী -একদিকে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে সুদানের সশস্ত্র বাহিনী আরেকদিকে জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বে আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) প্রকাশ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালোর
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে সুদানের সশস্ত্র বাহিনী আরেকদিকে জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালোরনেতৃত্বে আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস
বেসামরিক কেন্দ্রে শুরু হয় বিমান হামলা আরেকদিকে মিলিশিয়ারা আর ভিজিল্যান্টরা চেকপয়েন্ট স্থাপন করে আশেপাশের এলাকা লুট শুরু করে। রাজধানী খার্তুম একটি বিস্তৃত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হলো। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চল দারফুর সহ প্রায় ৫০ মিলিয়ন লোকের আফ্রিকান দেশটির অন্যত্র সংঘাত ছড়িয়ে পড়লো।
ইতোমধ্যে সুদানের গৃহযুদ্ধ আন্তজার্তিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। রাষ্ট্রপতি বাইডেন এবং তার ইউরোপীয় প্রতিপক্ষরা তাদের দূতাবাসের কর্মীদের এবং বেশিরভাগ সুদানের বড় শহরগুলিতে অবস্থিত শত শত বিদেশী নাগরিক এবং দ্বৈত নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।আন্তর্জাতিক সাংবাদিকরা সৌদি বন্দর নগরী জেদ্দায় শরণার্থীদের কাফেলার সাথে দেখা করলেন সুদানীদের দেশ ছেড়ে পালানোর কাহিনি শোনার জন্য।
সংঘাতটি ধারাবাহিক ঘটনাগুলির একটি দুঃখজনক মোড়কে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে: আগের বছরগুলিতে গণতন্ত্রের দিকে একটি নতুন পরিবতন সুদানকে পশ্চিমা সরকারগুলির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং কয়েক দশকের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে কিছুটা মুক্তি দিয়েছিল।
২০২১ সালে একটি বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বুরহান এবং হেমেদতি এক হয়েছিল। কিন্তু দেশটি কূটনীতিচালিয়ে যেতে চাইছিল গণতন্ত্রে টিকে থাকবার জন্যে।মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি উদ্যোগ ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে এমন আরব দেশের সাথে খার্তুমকে যুক্ত করার চেষ্টা করেছিল।
কিন্তু যুদ্ধ সে সব উদ্যোগকে শেষ করে দেয় । রাষ্ট্রটি মূলত: দেশের অনেক অংশে ভেঙে পড়লো। কিছু এলাকায়, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা নামে মাত্র কাজ করছিল। নৃশংসতা ও গণহত্যা সহ হাজার হাজার বেসামরিক লোককে হত্যা করা হচ্ছিল যা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে ধতব্য।
বাস্তচ্যুত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ
যুদ্ধের পরিনাম:
সাহসী নাগরিক অধিকার গোষ্ঠীগুলি যৌন সহিংসতা এবং ধর্ষণের অগণিত বিবরণ নথিভুক্ত করছিল। শান্তি আলোচনার অপ্রতুল আশা তবুও আরব সরকারগুলির দ্বারা কিছু শান্তি আরোচনার আহ্বান করা হয়েছিল কিন্তু সেগুলি একটি পক্ষপাতিত্বে রুপ নেয় ফলে কোন আলোচনাই আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে যুদ্ধবিরতির আশা ক্ষীণ হলো।
ধ্বংস এবং মৃত্যুর সাথে সাথে সুদানের দুর্দশা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সচেতনতা এবং আগ্রহ হ্রাস পেয়েছে। বারো মাস, সুদানের মানবিক পরিস্থিতি আশ্চর্যজনকভাবে ভয়াবহ আকারে রুপ নিলো।দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতি সংকটের স্থান, যেখানে গৃহযুদ্ধের পাশাপাশি পূর্ববর্তী সংঘর্ষের কারণে এক পঞ্চমাংশেরও বেশি লোক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বাধ্য হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ তীব্রভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়লো। প্রায় ১৯ মিলিয়ন শিশু স্কুলের বাইরে; আনুমানিক ৩ মিলিয়ন সুদানী শিশু অপুষ্টির শিকার হলো।
মহামারী দেখা দিয়েছে বেশ কিছু অঞ্চলে
জাতিসংঘের ভূমিকা:
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাকেইন জানান, “দারফুর এবং দেশের অন্যান্য অংশে শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে।” আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি অভিযোগ করে যে দেশের বেশিরভাগ পরিষেবা দুর থেকে দেওয়া অসম্ভব।
আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটির একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদানে সবাইকে মারাত্মকভাবে বাধা সৃষ্টি করছে, এবং মানবিক তহবিলের চাহিদা অনেকাংশে অপূর্ণ হয়ে গেছে।
ফেব্রুয়ারির মধ্যে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সুদানে খাবারের দাম ১১০ শতাংশেরও বেশি বেড়ে গিয়েছিল। প্রতিবেশী চাদ এবং দক্ষিণ সুদানের শরণার্থী শিবিরগুলিতে, সাহায্য গোষ্ঠীগুলি বলছে, তহবিলের অভাবের কারণে খাদ্য বিতরণ অবিলম্বে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার ডায়ানা জেইনেব আলহিন্দাউই এবং ক্যাথারিন হাউরেল্ড বললেন, এখানে “ক্ষুধার সমস্যার শিকড় দ্বিগুণ: প্রবেশাধিকার এবং অর্থায়ন”। কারন তাদেরকে সহায়তা করতে কাছেই যেতে পারছেনা সাহায্য সংস্থাগুলো । আবার ফান্ডেরও অভাব।
সমস্যা চিহ্নিত:
“সুদানের মধ্যে, WFP’ র ট্রাকগুলিকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে, হাইজ্যাক করা হয়েছে, আক্রমণ করা হয়েছে, লুট করা হয়েছে এবং আটক করা হয়েছে৷ সুদানের বাইরে, অস্থায়ী শিবিরগুলি ক্ষুধার্ত এবং অসুস্থ আগতদের দ্বারা ভরে গেছে – তবে তাদের খাওয়ানোর জন্য কোনও অর্থ নেই।”
সোমবার, আন্তর্জাতিক সরকারগুলো, মানবতাবাদী এবং দাতারা সুদানের জন্য তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে একটি সম্মেলনের জন্য প্যারিসে আহ্বান করেছিল। তারা এমন এক সময়ে বৈঠক করছিলেন যখন জাতিসংঘের সংস্থাগুলি দ্বারা সুদানের জন্য দেওয়া মানবিক অনুরোধের মাত্র ৫ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছিল।
ইতোমধ্যে ইউক্রেন, গাজা এবং সবর্শেষ ইসরাইল-ইরানের যুদ্ধে সুদানের সমস্যাটা চাপা পড়ে গেছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতিসংঘে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রীনফিল্ড গত সপ্তাহে বলেন, “যদিও বিবাদমান গোষ্ঠিগুলি দুর্ভিক্ষের দিকে ধাবিত, কলেরা এবং হাম ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে, সহিংসতা অগণিত প্রাণ ঝড়ছে তবুও বিশ্ব অনেকাংশেই নীরব থাকছে”
মাঠে সশস্ত্র যোদ্ধারা
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ভূমিকা:
দেশটি এখন মোটামুটিভাবে পশ্চিম এবং পূর্বে বিভক্ত, পূর্বে আরএসএফ আরোহী এবং বুরহান ও তার সহযোগীরা পরবর্তীতে আরও বেশী প্রবেশ করেছে। সুদান ব্রিফিংয়ে, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ‘, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলিকে তাদের বিরোধপূর্ণ দলগুলিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে, মানবিক সুবিধার জন্য প্রবেশাধিকার দিতে আহ্বান জানিয়েছে। সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন ত্রাণের ব্যবস্থা করতে এবং সুদানকে স্থিতিশীলতার পথে ফিরিয়ে আনতে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ আরো উল্লেখ করেছে, “বিকল্পটি চিন্তা করার জন্য মারাত্মক, কারণ দেশটি বিশৃঙ্খলা, ব্যাপক অনাহার এবং একটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে যা তার সীমানা পেরিয়ে একটি অস্থির অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে,”
Leave a Reply