“তোমরা যখন শিখছ পড়া
মানুষ হবার জন্যে,
আমি না হয় পাখিই হব,
পাখির মতো বন্য।”
কিছু কিছু মানুষ এমনি সত্যই পাখি হয়। আর এই পাখিরা গান গায় বলেই হয়তো সে গানের ডাকে সূর্যের ঘুম ভাঙ্গে। তাই নতুন নতুন ভোর আসে মানুষের এ সমাজে। পাখির এই গান, তার নিজের কন্ঠ বা তার নিজের বুলি’র বদলে যখনই তাকে জোর করে কারো না কারোর ইচ্ছে মতো কথা শেখানো হয়, সে সময় এক পর্যায়ে যে পাখিটি ওই কাগজ খেতে খেতে মারা যায়, সেটাই তো সঠিক। শুধু রবীন্দ্রনাথের কবিতার ওই পাখিটি নয়, বাস্তবে প্রতিদিন এমনই লাখ লাখ পাখি আমাদের এই মানুষ নামক শিশুদের মন থেকে মারা যাচ্ছে। অথচ একটি শিশুর ভেতর যে পাখিটি থাকে সেই তো তাকে উড়তে আহবান করে। সেই তো তার দুটি ডানা তৈরি করে দেয়।
যে পাখিটি গান গায়, যে পাখিটি আকাশের সীমানা পেরিয়ে আরো অনেক দূরে উড়িয়ে নিয়ে যেতে চায় সেই তো আসলে একজনকে মানুষ তৈরি করে। তাই পড়ার পড়া পড়তে পড়তে যদি মনের ভেতরের পাখিটি মারা যায়, যদি সে আর বন্য না থাকে, প্রকৃতির মতো হতে না পারে- তাহলে সে যতই পড়ার পড়া পুড়ুক না কেন, তার কি আর নতুন কোন স্বপ্ন থাকবে, গান থাকবে, পারবে কি সে নতুন কোন দিগন্তে উড়তে?
আর তা যদি না পারে তাহলে সে নতুন পৃথিবী সৃষ্টির পথে চলবে কীভাবে? আজ যারা শিশু, কিশোর, তরুণ সবাই তো নতুন পৃথিবীর স্রষ্টা। তাদেরকে সেভাবে তৈরি করার জন্যেই রাষ্ট্রের অনেক তাগিদ দেখা যায়। তাদের জন্যে গাদা, গাদা পুথির পাতা তৈরি হয়। অনেক পন্ডিত রাখা হয়। সুরম্য পাঠশালা হয়। নীতিমালা হয়। দোষ নেই এসবে। রাষ্ট্র অনেক বড়। অনেক তার দ্বায়িত্ব। তাই আগামীর সন্তানদের নিয়ে সে অনেক পরিকল্পনা করুক। সাধারণের সেখানে বলার খুব কোন শক্তি নেই। শুধু অনুরোধ করতে পারে, সবই করা হোক, দয়া করে একটু মনের চোখ দিয়ে দেখা হোক, যেন ওদের ভেতরের পাখিটি না মারা যায়। আর কেউ কেউ হোক না পাখির মতো বন্য।
Leave a Reply