শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৪৪ তম কিস্তি )

  • Update Time : রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪, ১২.০০ পিএম
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

 

মালতীর গাল আর চিবুকের চামড়া কুঞ্চিত হয়ে আসছিল, রক্তবর্ণ চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। ‘একেবারে পাগল, হেরম্ব, উন্মাদ। গেছে যাক, আজ দেখব কাল দেখব তারপর ঘরদোরে আমিও ধরিয়ে দেব আগুন। ওলো সর্বোনাশি, উকি মেরে দেখিস কোন্ লজ্জায়? আয়, ইদিকে আয়, হতভাগি!’

আনন্দ আসে না। হেরম্ব তাকে ডেকে বলল, ‘এস আনন্দ।’

আনন্দ কুণ্ঠিত পদে কাছে এলে মালতী খপ করে তার হাত ধরে ফেলল। কাছে বসিয়ে পিঠের কাপড় সরিয়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে বলল, ‘তোর কি মাখা খারাপ হয়েছিল, আনন্দ? লক্ষ্মীছাড়া মেয়ে তুই পালিয়ে যেতে পারলি না?’

আনন্দ মুখ গোঁজ করে বলল, ‘গেলাম তো পালিয়ে।’

‘পালিয়ে গেলি তো এমন করে তোকে মারল কে শুনি?’ মালতীর গলা হতাশায় ভেঙে এল, ‘গোঁয়ার! যেমন গোঁয়ার বাপ তেমনি গোঁয়ার মেয়ে। ঠায় দাঁড়িয়ে মার খেয়েছে। যত বলি যা আনন্দ, চোখের সমুখ থেকে সরে যা, মেয়ে তত এগিয়ে এসে মার খায়।’ মাতা ও কন্যার মিলন হল এইভাবে। হেরম্বের না হল আনন্দ, না হল স্বস্তি। নূতন ধরনের যে বিষাদ তার এসেছে তাতে সবই যেন তার মনে হচ্ছে সাধারণ, স্বাভাবিক।

তারপর মালতী জিজ্ঞাসা করল, ‘পিঠে নারকেল তেল দিতে পারিসনি একটু?’

বরফ দেওয়ার কথাটা কেউ উল্লেখ করল না। হেরম্বকে দিয়ে তেলের শিশি আনিয়ে মালতী মেয়ের পিঠে মাখিয়ে দিতে আরম্ভ করল।

আনন্দকে প্রহার করেই মালতী শান্ত হয়ে যাবে হেরম্ব সে আশা করেনি। অনাথ যে সত্যই চিরদিনের মতো চলে গেছে তাতে সেও সন্দেহ করে না। মৃত্যুর চেয়ে এভাবে প্রিয়জনকে হারানো বেশী শোকাবহ। এই শোক মালতীর মধ্যে ঠিক কি ধরনের উন্মত্ততায় অভিব্যক্ত হবে তাই ভেবে হেরম্ব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। মালতীর শান্ত ভাবটা সে বুঝতে পারল না। কারণের প্রভাব হওয়াও আশ্চর্য নয়।

 

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৪৩ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৪৩ তম কিস্তি )

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024