সারাক্ষণ ডেস্ক
আন্তর্জাতিক বন্ডধারীদের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে অক্ষম হওয়ার পর, সঙ্কটে পড়া শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ছে। এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আসন্ন পর্যালোচনার ওপর অনিশ্চয়তার ছায়া ঘনিয়ে উঠছে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশটি মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে যে, ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ পুন তফসিলি করণের বিষয়ে আইএমএফ নির্ধারিত বাধ্যতামূলক শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বন্ডধারীদের সাথে চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।
কলম্বো ভিত্তিক অর্থনীতিবিদ তালাল রাফি বলেছেন, শ্রীলঙ্কা এখনও অনাদায়ী অবস্থায় থাকায় এবং পাশাপাশি ধার রেটিং ও বিদেশী বিনিয়োগে অনিশ্চয়তার ফলে এর অর্থনৈতিক প্রভাব খারাপ হতে পারে। “বড় প্রভাব হলো অনিশ্চয়তা কারনে কেউই চুক্তিটি নিয়ে কোন পরিকল্পনা করতে পারছে না।
গত বছরের মার্চ মাসে আইএমএফ বোর্ড শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক নীতি ও সংস্কারকে সমর্থন করার জন্য এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির (ইএফএফ) আওতায় ৪৮ মাসের ব্যবস্থায় ২.৯ বিলিয়ন ডলারের ত্রাণ প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। শ্রীলঙ্কা বর্তমানে তার দ্বিতীয় পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এই বছরের মার্চ মাসে কর্মকর্তা পর্যায়ের একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য বোর্ডের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ১৯৬৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা আইএমএফের সাথে মোট ১৬ টি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং আইএমএফের সাথে বর্তমান এটিই ১৭তম কর্মসূচি।
রাফি বলেছেন, চুক্তিতে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় জুন মাসে অনুষ্ঠিতব্য শ্রীলঙ্কার আসন্ন আইএমএফ পর্যালোচনাকেও প্রভাবিত করতে পারে। “যেহেতু ঋণ পুন তফসিলই আইএমএফের জন্য অন্যতম মূল শর্ত, তাই এর বোর্ডের অনুমোদন পাওয়ার সময়ে এর প্রভাব পড়তে পারে।”
এই কর্মসূচিটি বিশেষভাবে শ্রীলঙ্কার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ঋণ টেকসই করার প্রচেষ্টা, আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং প্রবৃদ্ধি-ভিত্তিক কাঠামোগত সংস্কারকে সমর্থন করে। ২০২২ সালের এপ্রিলে দেশটি প্রথমবারের মতো তার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, যা তার ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কট ডেকে আনে। সরকারী তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রীলঙ্কার মোট সরকারী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।
তাছাড়া, দেশের আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সরকারের উপর আলোচনা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার চাপ বাড়িয়ে দেয়, যা এমন পরিস্থিতিতে তাড়াহুড়ো করে স্ট্রাইক করা যে কোনো চুক্তির টেকসই থাকার বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। “একটি তাড়াহুড়ো পরিবেশে, এমন একটি অনুকূল চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে সম্মত ঋণ পরিশোধের পরিমাণ আগামী বছরগুলোতে শ্রীলঙ্কা পরিশোধ করতে অক্ষম হতে পারে যা দ্বিতীয়বারের ডিফল্টের দিকে নিয়ে যেতে পারে, ” রাফি উল্লেখ করেছেন শ্রীলঙ্কা সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মধ্যে তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে গোটাবায়া রাজাপাকসে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন, কিন্তু ২০২২ সালে অপরিচালনার কারণে পদত্যাগে বাধ্য হন, যা রনিল বিক্রমসিংহেকে ক্ষমতা গ্রহণ করতে পরিচালিত করে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রতি ৫ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যাঘাতসত্ত্বেও শ্রীলঙ্কার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রাষ্ট্রপতির প্রধান কর্মকর্তা সাগালা রত্নায়াকা বলেছেন, “ আলোচনা চলতে থাকবে।”
তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে সরকারের কাছে বন্ডধারীদের জমা দেওয়া কাউন্টার-প্রস্তাবের দুটি ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কোন “সমাধানে” পৌঁছাতে পারেনি। তবে, রত্নায়াকা সকল অংশীদারদের সম্পৃক্ত করে আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতির উপর জোর দিয়েছেন, যার মধ্যে বন্ড উপদেষ্টা ও আইএমএফ প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
বুধবার শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী শেহান সেমাসিংহে এক বিবৃতিতে বলেন, “পরবর্তী পদক্ষেপ হবে কর্মসূচির মানদণ্ডের সাথে সর্বশেষ প্রস্তাবগুলোর সামঞ্জস্য বিধান সম্পর্কে আইএমএফ কর্মীদের সাথে আরও পরামর্শ গ্রহণ।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করি শ্রীলঙ্কার ইএফএফ কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যালোচনার আইএমএফ বোর্ডের বিবেচনার আগে বন্ডধারীদের সাথে মিল খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে আলোচনা অব্যাহত রাখতে পারি।”
তবে অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের বিশ্বব্যাপী উদীয়মান বাজারের কৌশলের পরিচালক সের্গি লানাউ বলেছেন যে সর্বত্র ঋণ পুনর্গঠনের গতি ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ ঘানা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ডিফল্ট হয় এবং এখনও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। “আমি মনে করি না যে শ্রীলঙ্কায় একটি দ্রুত চুক্তির ব্যাপক প্রত্যাশা রয়েছে।”
প্রথম থেকেই বিশ্বাস ও স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে আলোচনাকে চিহ্নিত করে সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ডব্লিউ.এ. বিজেবর্ধনা জানিয়েছেন, “চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার ফলাফল অপ্রত্যাশিত ছিল না কারণ কোন পক্ষই অন্য পক্ষের কাছে নিজেকে প্রকাশ করার কোন ইচ্ছা রাখেনি।”
বিজেবর্ধনা’র বক্তব্য অনুসারে, একটি ন্যায্য আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্বাস অনুপস্থিত ছিল। “এখন মনে হচ্ছে উভয় পক্ষই মাংসের পাউন্ড চাচ্ছে যা অন্য পক্ষের কাছে বিতরণের কোন পথ নেই।”
Leave a Reply