মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১২ পূর্বাহ্ন

বেসরকারি খাতে নাগরিকের তথ্য ভান্ডার তুলে দেয়া সংবিধান পরিপন্থী

  • Update Time : শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৮.০০ পিএম
সারাক্ষণ ডেস্ক
আজ ২০ এপ্রিল ২০২৪ শনিবার সকাল ১১ঃ৩০ মিনিটে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সংলগ্ন একটি হোটেলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন এর উদ্যোগে নাগরিকদের ব্যক্তিদের তথ্য বেসরকারি খাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 
সংবাদ সম্মেলনে সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বিটিআরসি এধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। নাগরিকদের তথ্যের নিরাপত্তা সংবিধানে বলা হয়েছে। যেখানে নাগরিকদের তথ্য ও সুরক্ষার জন্য আলাদা বিধি-বিধান আইনের প্রয়োজন সেখানে নতুন করে তথ্য সুরক্ষার বদলে বেসরকারি খাতে নাগরিকদের তথ্য তুলে দেয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যারা এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন তাদেরকেও আগামীতে বিচারের আওতায় আনা হবে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহা বলেন, এর মাধ্যমে নাগরিকদের অর্থের নিরাপত্তা সাথে সাথে ভূমি এবং তার সম্পদের নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করবে। বিশ্বের কোন দেশেই নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য বেসরকারি খাতে দেয়ার নজির নেই।
সুপ্রিম কোর্টের সেনারা আইনজীবী এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট ইসরাত হাসান বলেন, গত ২০ মার্চ মহামান্য হাইকোর্ট থেকে এ ব্যাপারে একটি রোল নিশি জারি করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে বেসরকারি খাতে নাগরিকের তথ্য ভান্ডার তৈরী করা কেন অবৈধ হবে না? আদালত এবং সংবিধান অনুযায়ী এবং আন্তর্জাতিক মানব অধিকার এক অনুযায়ী নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য বেসরকারি হাতে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মূল প্রবন্ধে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের ৪৩ এর (খ) ধারায় নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করার কথা বলা রয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে সরকারের নেয়া শপথ অনুযায়ী সংবিধান রক্ষা করা তথা নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ও নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক।
প্রযুক্তি দুনিয়ায় গ্লোবাল ভিলেজে নাগরিকের তথ্য এমনিতেই বর্তমানে হুমকির মুখে। গত বছর থেকে আমরা লক্ষ্য করছি সরকারি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে জন্ম নিবন্ধনকারী সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নাগরিকের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। যখন আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে লক্ষ্য করি পাঁচ কোটি নাগরিকের তথ্য ভেসে বেড়াচ্ছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেরাই যখন নাগরিকের ব্যক্তিত্ব তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না সেই সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডার গড়তে দেয়া সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে বলে আমরা মনে করছি।
সেই সাথে নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আমরা মনে করি। বর্তমানে প্রায় ১৯ কোটি ২৬ লক্ষ সক্রিয় সিম এর তথ্য এম এন ও অপারেটর নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কেবলমাত্র তথ্য যাচাইয়ের জন্য ৫ টাকা চার্জ দিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা গণমাধ্যম এবং অপারেটরদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি এই তথ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে তাদের গুনতে তে হবে ১০ টাকা। দিনশেষে এই অতিরিক্ত অর্থ গ্রাহকদের কাছ থেকেই আদায় করা হবে।

আর এর মাধ্যমে গ্রাহকদের আরেক দফা খরচ বৃদ্ধি করা হচ্ছে পাশাপাশি  অ-নিরাপত্তার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যেই জানতে পারলাম গত ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ বিটিআরসি থেকে অপারেটর থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখের মধ্যে তথ্যভাণ্ডার তৈরির অগ্রগতি জানাতে হবে। যদিও এখন পর্যন্ত অপারেটর রা তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেনি এজন্য অপারেটররা ধন্যবাদ পেতেই পারেন।

আমরা আরো লক্ষ করলাম যে তথ্য ভান্ডার বেসরকারি খাতে না দেয়ার জন্য মহামান্য হাইকোর্টে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রিট পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। আমরা আশা করি আদালত নাগরিকদের তথ্যের নিরাপত্তা এবং সুবিচার করবেন। তবে আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আমরা বলতে চাই আদালত থেকে যে রায় দেয়া হবে আমরা সেটি মেনে নিতে বাধ্য।

নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রণয়ন এর দাবিতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্ন সময় ইতিপূর্বে মানববন্ধন এবং সভা সমাবেশ অনুষ্ঠান প্রতিপালন করেছি। সরকার এবং সরকারের পক্ষে বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং আইনমন্ত্রী মহোদয় নিজেও দ্রুত নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করার কথা বলেছেন ইতিপূর্বে। এখানে একটি কথা না বললেই নয় যে, নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করতে ১৬ ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে।
সংবিধান এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও প্রয়োজন অনুসারে সরকারের চাহিদা মাফিক জনগণ সরকারকে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি সময় নির্বাচন কমিশনকে ইতিপূর্বে সব ধরনের তথ্য প্রদান করেছে। যে তথ্য সংরক্ষণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকার নির্দেশিত সেবা সমূহের জন্য নাগরিকের তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করা একান্তই সরকারের নির্দেশিত বিষয়।
জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য তাই সরকারের কাছে গচ্ছিত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আমানত। যা সরকার সংবিধান অনুসারে নিরাপত্তা সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করবেন। আমরা মনে করি এই তথ্য কেবলমাত্র নির্বাচন কমিশন অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সরকারের নির্দেশিত আইন অনুযায়ী সরকারের কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে সংরক্ষণ ও সংরক্ষিত থাকবে এটাই নাগরিকদের প্রত্যাশা। আমাদের সর্বশেষ দাবি কোনভাবেই নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ও উপাত্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা যাবে না।
অর্থাৎ শুধুমাত্র হস্তান্তর না, হস্তান্তর ব্যবস্থাপনা বা অনুপ্রবেশের অধিকার কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে দেয়া যাবে না। যারা এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকবেন তারা সংবিধান লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবুবক্কর সিদ্দিক, সহ সভাপতি লায়ন সাব্বির আহমেদ হাজরা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিলা, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সংগঠনের শেখ ফরিদ প্রমুখ

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024