সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

ভারত-চায়না সম্পর্ক বর্তমানে ক্রসরোডে -জয়শংকর

  • Update Time : রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪, ২.২৮ পিএম

স্টাফ রাইটার

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয় শংকরের মন্তব্য হলো বাস্তবে চায়না ও ভারতের সম্পর্ক এখন একটা ক্রস রোডে দাঁড়িয়ে। আর এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, চায়না যখন শ্রীলংকার হামবানটোটো পোর্ট ও পাকিস্তানের গোধরা পোর্ট নির্মানের কাজ শুরু করে তার গুরুত্ব ভারত প্রথমে বুঝতে ব্যর্থ হয়। তেমনি ভারতের নিরাপত্তার ধারণার ভেতর সব সময় উত্তর স্থল সীমান্তকে ঘিরে ছিলো। অন্যদিকে গত দুই দশকে চায়না তাদের নৌ শক্তি যেভাবে বৃদ্ধি করেছে তাতে এখন উত্তরের থেকে দক্ষিন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটা সমুদ্র পথ।

 ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয় শংকর

এই অবস্থায় আসার জন্যে জয়শংকর ভারত ও চায়নার সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস টেনে প্রতিটি পদক্ষেপকে বিশ্লেষণ করেছেন। নেহেরু’র আমল থেকে আজ অবধি কোন কোন ক্ষেত্রে চায়নার বিশ্বাস ভঙ্গের বিষয় ছিলো আর কোন কোন বিষয়গুলো ভারত গুরুত্ব দেয়নি বা ওই ভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয় তা তুলে ধরেছেন।

যেমন মাও’র চায়নাকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়া ভারত অনেকটা দুই কাছাকাছি সভ্যতার মিলনের জন্যে এগিয়ে গিয়েছিলো চায়নার দিকে। সে সময়ে মূলত পশ্চিমা বিশ্ব চাইছিলো ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে। সেদিন ভারত তা না করে চায়নাকে বিশ্বাস করেছিলো। যার ফলে চায়না যখন ভারত আক্রমন করে সে সময় ভারতের নিজেকে রক্ষার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের কাছে যেতে হয়। তিনি ততদিনে সময় অনেক গড়িয়ে যায়।

এস জয় শংকরের লেখা বই ‘হোয়াই ভারত ম্যাটার্স’

এর পরে চায়নার সঙ্গে নতুন করে বন্ধুত্ব শুরু হয় ১৯৮৮ সালে রাজীব গান্ধীর চায়না সফরের মধ্য দিয়ে। এই বন্ধুত্বের ধারায় ১৯৯৩ সালে ও ১৯৯৬ সালে ভারত ও চায়নার মধ্যে সীমান্ত নিয়ে যে লাইন অফ একচুয়াল কন্ট্রোল ( এল এ সি) চুক্তি হয় সেখানে সীমান্ত নিয়ে শান্তি বজায় সহ নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য সীমান্তে রাখার চুক্তি হয়।

চায়না সে চুক্তির প্রতি সম্মান না করে তাদের সীমান্ত এলাকায় প্রতিরক্ষা অবকাঠামো গড়ে তোলে দ্রুত গতিতে।

ভারত বাস্তবে তা বুঝতে পারে ২০১৩ সালের দিকে এসে। এর ভেতর বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে চায়না তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সহ টেকনোলজি নিয়ে ভারতে ঢুকে যায় এবং অনেক বড় অবস্থান করে ফেলে। এমনকি ২০০৭ সালে কোয়াড থেকে ভারতের সরে আসা বা কোয়াড কলাপস করার মূল কারণও ছিলো চায়নার আপত্তি।

অথচ ২০১৭তে চায়না যখন বেল্ট এন্ড রোড ইনেশিয়েটিভ (বি্আরআই) ঘোষণা করে তা মূলত ভারতের সার্বভৌমত্বকে অনেকখানি অস্বীকার করে। অন্যদিকে ২০২০ সালে সীমান্তে চায়নার আক্রমন ভারত ও চায়না সম্পর্ককে পুরোপুরি অন্যদিকে নিয়ে যায়।

মি. জয়শংকর লিখেছেন,  ভারত সব সময়্ চায়নার সঙ্গে তাদের সমস্যাগুলো দ্বিপাক্ষিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে। তবে চায়নার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় চায়না সব সময়ই মূল বিষয় এড়িয়ে গিয়ে অপ্রাসাঙ্গিক বিষয় নিয়েই কথা বলে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মি. এস, জয়শংকরের সাম্প্রতিক প্রকাশিত বই, Why Bharat Matters বই এ Dealing with China চ্যাপ্টারে এ কথাগুলো উঠে এসেছে।

তিনি আরো স্পষ্ট করে বলেছেন, চায়না মুখে যে একক এশিয়ার কথা বলে এর কোন বাস্তবতা নেই। এশিয়া এখন মাল্টিপোলার।

অন্যদিকে ২০১৩ থেকে ভারত উত্তর সীমান্তে চায়নার বিশ্বাস ভঙ্গ বুঝতে পেরে যেমন সীমান্ত এলাকায় তাদের প্রতিরক্ষা অবকাঠামো গড়ে তুলছে তেমনি নিজস্ব নৌশক্তির পাশাপাশি এখন ইন্দো- প্যাসিফিক এবং কোয়াড সব কিছু মিলে নতুন বাস্তবতা শুরু হয়েছে।

ভারতের আর্ন্তজাতিক সম্পর্কের বলয় ও সক্ষমতার বলয়ও ইতোমধ্যে বদলে গেছে। এবং এখন ভারত আর চায়নার সম্পর্কটি’র সঙ্গে আর্ন্তজাতিক বিষয়ও স্বাভাবিকভাবে জড়িয়ে পড়েছে।

তাই এখন চায়না ও ভারত সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে হলে, প্রথমে চায়নাকে বাস্তবতার ওপর দাঁড়াতে হবে। এবং বাস্তবতার ওপর দাঁড়িয়ে চায়নাকে গুরুত্ব দিতে হবে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যে সব থেকে বড় হলো, সমস্যাগুলোর প্রকৃত বিশ্লেষণ করা ( ক্লিলিকাল এনালিসিস), আর্ন্তজাতিক পরিস্থিতির বাস্তবতাকে স্বীকার করা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024