শ্রী নিখিলনাথ রায়
কিন্তু জগৎশেঠ তাহার কোন সন্তোষজনক উত্তর প্রদান করিতে পারিলেন না। এই অবহেলার ক্ষতিপূরণের জন্য সিরাজ জগৎশেঠকে বণির্মহাজনদিগের নিকট হইতে তিন কোটি টাকা সংগ্রহ করিবার জন্য আদেশ দিলেন। জগৎশেঠ পীড়িত লোকদিগকে পুনঃপীড়ন করিয়া অর্থশোষণ করা সঙ্গত মনে করিলেন না। তিনি নবাবের আদেশের প্রতিবাদ করায় সিরাজ ক্রোধোন্মত্ত হইয়া তাঁহার মুখে এক মুষ্ট্যাঘাত করেন। পরে তাঁহাকে বন্দী করিয়া রাখিতে আদেশ দেন।। মীরজাফর প্রভৃতি প্রত্যাবৃত্ত হইয়া জগৎশেঠকে মুক্ত করার জন্য নবাবকে অনুরোধ করেন। নবাৰ তাঁহাদের কথায় প্রথমে কর্ণপাত করেন নাই; পরে ক্রোধের উপশম হইলে জগৎশেঠকে নিষ্কৃতি দিয়াছিলেন।
এই রূপে অবমানিত হইয়া জগৎশেঠ সিরাজের উচ্ছেদসাধনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হইলেন। দিল্লীর বাদশাহ যাঁহাদিগকে বংশানুক্রমে সম্মান প্রদর্শন করিয়া আসিতেছেন, তাঁহারা সিরাজের গ্লায় চঞ্চলমতি নবাবের কৃত অপমান কদাচ সহ্য করিতে পারেন না। সিরাজকৃত অবথা অবমাননার জন্য তাঁহার মনোমধ্যে প্রতি হিংসার অগ্নি গ্রহলিত হইয়া উঠিল এবং সেই অগ্নি ক্রমে বদ্ধিতায়তন হইয়া, সিরাজের সহিত সমস্ত মুসল্যানরাজ্য ভস্মীভূত করিয়া ফেলিল। কিরূপে তিনি সিরাজের প্রতি তৎকৃত অবমাননার প্রতিশোধ লইতে চেষ্টা করেন, তাহা ক্রমে প্রদর্শিত হইতেছে।
যৎকালে জগৎশেঠ প্রভৃতি প্রধান প্রধান ব্যক্তিগণ সিরাজের দমনার্থ সুযোগ অন্বেষণ করিতেছিলেন, সেই সময়ে তাঁহার সহিত ইংরেজ দিগের বিবাদ উপস্থিত হয়। জগৎশেঠ, মীরজাফর ও রায়দুর্লভ প্রভৃতি একমত হইয়া ইংরেজদের সাহায্য করিতে কৃতসঙ্কল্প হইলেন। পূর্ব্বে বলা হইয়াছে, আলিবন্দী খাঁর সময় হইতে শেঠদিগের সহিত ইংরেজদিগের সম্বন্ধ গাঢ়তর হইতে আরম্ভ হয়।
ইংরেজ দিগের সহিত বিবাদারম্ভের প্রথমে, জগৎশেঠের বিশেষরূপে অবমাননার পূর্ব্বে, কলিকাতার অধ্যক্ষ হল্ওয়েল সাহেব ইংরেজদের প্রতি সিরাজের ক্রোধোপশনের জন্য জগৎশেঠকে অতান্ত অনুরোধ করিয়া পাঠাইয়াছিলেন। নবাবের কলিকাতাক্রমণের পর, যখন ইংরেজেরা পলায়ন করিয়া ফলতায় অবস্থিতি করিতেছিলেন, তখন তাঁহারা জগৎশেঠকে সম্মান- সহকারে পত্র লিখিয়া, নবাব-দরবারে তাঁহাদের পক্ষ হইয়া কাৰ্য্য করিতে অনুরোধ করেন। ২২ শে জুন কলিকাতা অধিকৃত হয়; ইংরেজেরা ২২ শে আগষ্ট জগৎশেঠকে উক্ত পত্র লিখিয়াছিলেন। তাঁহারা জগৎ- শেঠের প্রতিনিধি আমীরচাঁদ বা আমীন চাঁদের (উমিচাঁদ) দ্বারা পত্রাদি পাঠাইতেন। এই সেপ্টেম্বর ইংরেজেরা জগৎশেঠকে আর ‘এক পত্র পাঠাইতে চান। কিন্তু আমীরচাঁদ নিজের কোন কারণবশতঃ তাহা পাঠাইতে অস্বীকৃত হন।
Leave a Reply