আমার মতে মীরজাফরকে সহায় করিয়া ইংরেজদিগের সহিত যোগ দিয়া সিরাজকে পদচ্যুত করা যাইতে পারে। ইংরেজদিগের সহিত আমার বিলক্ষণ পরিচয় আছে; সুতরাং এবিষয়ে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করিতে পারিব। জগৎশেঠ কহিলেন, ব্যবসায়সম্বন্ধে তাঁহাদের সহিত আমারও বিলক্ষণ পরিচয় হইয়াছে।.
অতএব মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের প্রস্তাবই সঙ্গত। তৎপরে সকলেই একবাক্যে সেই প্রস্তাবে সম্মতি প্রদান করিলে, ক্লাইব সাহেবকে সমস্ত বিষয় জ্ঞাপন করা হয়।। কিন্তু ইতিহাসে এই মন্ত্রণা-সভার উল্লেখ দেখা যায় না। মন্ত্রণা সভা হউক বা না হউক, পূর্ব্বোক্ত ব্যক্তিগণ সিরাজের পদচ্যুতির জন্য যে যার পর নাই চেষ্টা করিয়াছিলেন, তাহার অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। ইতিহাসে উল্লেখ আছে যে, জগৎশেঠ আমীরচাদের দ্বারা সিরাজের বিরুদ্ধে ইংরেজদিগকে ক্রমাগত উত্তেজিত করিতেন। ক্রমে ক্রমে যখন এই সমস্ত ষড়যন্ত্রের।
কথা নবাব কিয়ৎপরিমাণে বুঝিতে সক্ষম হন, সেই সময়ে জগৎশেঠও সতর্কতা অবলম্বন করেন। তিনি ইংরেজদের পক্ষ হইয়া নবাব দরবারে ‘আর কোন বিষয়ের উল্লেখ করিতে সাহসী হইতেন না। তাঁহারা রণজিৎ রায় নামে আপনাদিগের একজন প্রতিনিধির দ্বারা ইংরেজ- দিগের কথাবার্তা নবাব দরবারে উপস্থিত করিতেন।
ইয়ার লতিব খাঁ নামে নবাবের এক জন সৈন্যাধ্যক্ষ অধীন দুই সহস্র অশ্বারোহী শেঠদিগের প্রদত্ত বৃত্তির দ্বারা রক্ষিত হইত। নবাব শেঠদিগের অনিষ্ট করিতে ইচ্ছা করিলে, ইয়ার লতিব শেঠদিগের বৃত্তির জন্য তাঁহাদিগকে রক্ষা করিতে প্রতিশ্রুত হন। উক্ত খাঁ ইংরেজদিগকে গোপনে সংবাদ দেন যে, যদি ইংরেজেরা তাঁহাকে নবাবী প্রদান করিতে অঙ্গীকার করেন, তাহা হইলে তিনি সিরাজের বিরুদ্ধে তাঁহাদিগকে সাহায্য করিতে পারেন এবং তজ্জন্য শেঠেরা তাঁহার সাহায্য করিতে স্বীকৃত আছেন। এই সময়ে মীরজাফরও নবাবীর আশায় ইংরেজদিগকে সাহায্য করিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
Leave a Reply