সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৪৬) চীন যেভাবে মেক্সিকোকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্য প্রবেশ করাচ্ছে পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলে খেলোয়াড় প্রতি  $১০০,০০০ পুরস্কার ঘোষণা পিসিবি প্রধানের পাকিস্তান ও চায়না সিপিইসি প্রকল্পে সহযোগিতা বাড়াতে অঙ্গীকার করেছে ফের লন্ডনের মেয়র হলেন সাদিক খান – এই নিয়ে টানা তৃতীয়বার ঢাকাসহ বেশ কিছু জায়গায় কালবৈশাখী আঘাত হানতে পারে সবজির বাজারে ‘পঞ্চায়েত সিজন-৩’ এর প্রচার চালাচ্ছে নির্মাতারা কিউবার জন্য একটি অসম্ভাব্য সুযোগ গাজীপুরে আগুনে তুলার গুদাম পুড়ে ছাই আন্তর্জাতিক চাহিদার প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম প্রণয়নের আহ্বান রাষ্ট্রপতির

যদি  বিচারে ট্রাম্প দোষি সাবস্ত্য হন

  • Update Time : সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪, ২.১৯ পিএম
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

নরমাল এল ইসেন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ম্যানহাটানে চলমান বিচারের উপর আলোচনা ও বিতর্ক যতই থাকুক না কেন,  এর অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক,  এই বিচারের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে বিশেষ কোনো মনোযোগ দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে এই বিষয়টিতে যে একজন প্রাক্তন এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য প্রেসিডেন্টের কারাদণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে। ম্যানহাটনের জেলা আইনজীবী অ্যালভিন ব্র্যাগ প্রণীত এই মামলায় প্রথমবারের মত মার্কিন ইতিহাসে একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট একটি ফৌজদারি মামলার আসামি হয়েছেন। ফলে এই মামলার আইনি শক্তি ও সততা নিয়ে, এবং হোয়াইট হাউজ পুনরায় জয় করার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের প্রচেষ্টার উপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে প্রচুর বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

আদালতে ট্রাম্প

নিউ ইয়র্কে একই ধরনের হাজার হাজার মামলার পর্যালোচনায় একটি মারাত্মক তথ্য উঠে এসেছে: ট্রাম্প যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তবে কারাদণ্ড হবার প্রকৃত সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্যই এটা নিশ্চিত নয়, কিন্তু অসম্ভব নয়। এই সপ্তাহে জুরি নির্বাচিত হয়েছে, এবং ট্রাম্পের জন্য সাজার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা খুব তাড়াতাড়ির কোন বিষয়ও নয় – কারাদণ্ডসহ সাজার সম্ভাবনা ট্রাম্পের নির্বাচন ও সেই সাথে যদি তিনি পুনঃনির্বাচিত হন তবে কী ঘটবে তাও বিবেচনা করা যেতে পারে। দেশের জন্য তা কেমন হবে।

আদালতে ট্রাম্প , বাইরে গায়ে আগুন দিলেন যুবক

২০১৬ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এই মামলার মূল বিষয়। ওই সময় ট্রাম্পের তৎকালীন মধ্যস্থতাকারী মাইকেল কোহেন পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ২০১৬ সালে চুপ থাকার জন্য অর্থ প্রদান করেন, যিনি দাবি করেছিলেন ট্রাম্পের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। ব্র্যাগ এই যুক্তি দিয়েছেন যে এই গোপনীয়তা ভোটারদের ট্রাম্প প্রার্থীর যোগ্যতা পূর্ণভাবে মূল্যায়ন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে।

মার্কিন ইতিহাসে এটিই হয়তো প্রথম ফৌজদারি বিচার যেখানে একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জড়িত, কিন্তু দোষী সাব্যস্ত হলে, নিউ ইয়র্ক রাজ্য আদালতে প্রতিটি ফৌজদারি আসামির শাস্তি নির্ধারণে যে মূল বিষয়গুলো প্রভাব ফেলে, সেগুলোর ভিত্তিতেই ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারিত হবে বলে মনে হচ্ছে।

নিউইয়র্কে অবস্থিত ট্রাম্প টাওয়ার

তুলনামূলক মামলাসমূহে সব ধরনের শাস্তি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিচারকদের কাছে প্রাথমিক বিবেচনা হলো অন্যান্য আসামীরা একই ধরনের অপরাধের জন্য কী শাস্তি পেয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে নিউ ইয়র্ক জুড়ে প্রায় ১০,০০০ ফেলোনি ব্যবসায়িক রেকর্ড জাল করার মামলার তদন্ত আমি করেছি। একই সময়কালে ম্যানহাটন জেলা আইনজীবীর দপ্তর ৪০০ এরও বেশি মামলা দায়ের করেছে। ব্র্যাগ এর দায়িত্বকালের প্রথম বছরের মধ্যেই তার দল ৩৪ জন বা কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক রেকর্ড জালিয়াতির প্রথম ডিগ্রীতে ১৬৬টি ফেলোনি অভিযোগ দায়ের করে।

এই ধারণার বিপরীত যে ব্যবসায়িক রেকর্ড জালিয়াতির জন্য কোন কারাদণ্ডের বিধান নেই, গুরুতর অপকর্মের সাথে জড়িত ফেলোনি অপরাধের দায়ে কিছু কারাদণ্ডেরও বিধান আছে। আমার সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে প্রথম ডিগ্রীতে ব্যবসায়িক রেকর্ড জালিয়াতি প্রথম গুরুতর অভিযোগ হিসেবে উঠে আসে এমন প্রায় দশটির একটি মামলায়, এবং যেখানে আদালত চূড়ান্ত শাস্তির আদেশ জারি করে, সেখানে কারাদণ্ডের বিধান থাকে।

আদালতের বাইরে এই যুবক নিজের গায়ে আগুন দেয়

যাই হোক, এই মামলাগুলোর ট্রাম্পের মামলা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে,  এগুলোতে সাধারণত শুধু রেকর্ড জালিয়াতির চেয়েও অতিরিক্ত অভিযোগগুলোও থাকে। ফলে ট্রাম্পের যদি দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে কী আশা করা যায় সেটি বোঝা এ মুহূর্তে দুরূহ।

তাছাড়া এমন অনেক আগের মামলাও আছে যেখানে ব্যবসায়িক রেকর্ড জালিয়াতির সাথে অন্যান্য অভিযোগও ছিল, এবং ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তুলনায় এসবের গুরু্ত্ব কম, তবুও কারাদণ্ডের বিধান ছিল। উদাহরণস্বরূপ, রিচার্ড লুথম্যানকে ভোটারদের প্রতারণা করার চেষ্টা, নির্বাচনী প্রচারণাকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে সামাজিক মাধ্যমে নিউ ইয়র্ক রাজনীতিবিদদের ছদ্মবেশ ধারণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। প্রথম ডিগ্রীর ব্যবসায়িক রেকর্ড জালিয়াতির (এবং অন্যান্য অভিযোগে) তিনটি মামলায় তিনি দোষ স্বীকার করেন। ফেলোনি জালিয়াতির অভিযোগে তিনি কারাদণ্ড পান (যদিও এই সাজা শুধুমাত্র দোষ স্বীকারোক্তির কারণে প্রযোজ্য হয়নি)।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন মার্কিন লেখিকা ই জঁ ক্যারল। ১৯৯০-এর দশকে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের একটি স্টোরের ড্রেসিংরুমে ট্রাম্প তাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

আরেকটি মামলায় আসামিকে তার নিয়োগকর্তার নিকট থেকে ৫০,০০০ ডলারেরও বেশি চুরি এবং এই স্কিমের অংশ হিসেবে চালানপত্র জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। সেখানে প্রধান লুটের অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয় এবং চূড়ান্তভাবে প্রায় ১০,০০০ ডলারের ভুল চালানপত্রের একটি ব্যবসায়িক রেকর্ড জালিয়াতির দায়ে সে দোষ স্বীকার করে। তাকে ৩৬৪ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

অবশ্যই সাধারণ ব্যবসায়িক রেকর্ড জালিয়াতির প্রথমবারের অপরাধীর ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের সম্ভাবনা কম। অন্যদিকে, ট্রাম্পকে ৩৪টি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে যা মার্কিন ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারত এমন আচরণ নিয়ে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জর্জিয়াতেও মামলা হয়েছে

অপরাধের গুরুত্ব। ব্র্যাগ অভিযোগ করেছেন যে ট্রাম্প ভোটারদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেছেন (বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক চাপা দেওয়ার জন্য হাসমানি দিয়েছেন) যা তার প্রচারে জন্য ক্ষতিকর হতে পারত, বিশেষত যদি অন্য একটি কেলেঙ্কারীর প্রকাশের পরে তা প্রকাশ্যে আসতো – সেটা ছিল “অ্যাক্সেস হলিউড” টেপ। প্রমাণিত হলে, সেটা কেবল দুর্ভাগ্যজনক ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, জাস্টিস জুয়ান মার্চান এটাকে “২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে বেআইনীভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা” হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারেন।

ইতিহাস ও চরিত্র। এখন পর্যন্ত ট্রাম্প এই মামলায় অভিযুক্ত ঘটনাবলী নিয়ে অনুশোচনাহীন এবং দোষী সাব্যস্ত হলেও এটা পরিবর্তন হবে না বলে বিশ্বাস করার সব কারণ আছে।

জাস্টিস মার্চানের মূল্যায়নকে অন্যান্য রায় যেমন ট্রাম্পের বারবার ব্যবসায়িক প্রতারণায় জড়িত থাকার অভিযোগে, জাস্টিস আর্থার ইঙ্গোরনের সিদ্ধান্ত, ই জিন ক্যারোলকে যৌন নির্যাতন এবং মানহানির জন্য জুরি কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত করার রায় এবং একটি দ্বিতীয় জুরি কর্তৃক সম্পর্কিত মানহানির রায় প্রভাবিত করতে পারে।

জাস্টিস মার্চান এটাও বিবেচনা করতে পারেন যে রাজ্য এবং ফেডারেল বিচারকদের দ্বারা ট্রাম্পকে বারবার অবমাননা, সতর্কীকরণ, জরিমানা এবং নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাক্ষী, বিচার ব্যবস্থার ব্যক্তিদের এবং তাদের পরিবারের প্রতি বিপদজনক মন্তব্য করা। সম্প্রতি ট্রাম্প জাস্টিস মার্চানের কন্যাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন, যার ফলে এই মামলায় নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানো হয়েছে। এখন তার বিরুদ্ধে সাক্ষীদের বিষয়ে মন্তব্য করার অভিযোগে আরেকবার নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এতে যা বোঝা যায় তা হলো, ট্রাম্পের কারাদণ্ডের সম্ভাবনা একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের জন্য নিশ্চিত না হলেও এটি উড়িয়ে দেবার সুযোগ নে্ই । যদি তিনি কারাদণ্ড পান, সবচেয়ে সম্ভাব্য মেয়াদ হবে ছয় মাস, যদিও ট্রাম্প নিজেই সাক্ষ্য দিতে চান বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং বিচারক যদি বিশ্বাস করেন যে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাহলে চার বছর পর্যন্ত হতে পারে। প্রোবেশন এবং এক বছর প্রতি সপ্তাহান্তে জেলে কাটানোর মতো নমনীয় পদ্ধতিও বিবেচনা করা যেতে পারে।

বিচারের শেষ হতে মধ্য জুন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, তারপর বিচারক সাজা ঘোষণার ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্য সব বিষয় পরিস্কার হবে। যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে গ্রীষ্মকালের শেষে বা শরৎকালের শুরুতে সাজা দেয়া হতে পারে। নির্বাচনী বছরের মাঝামাঝি একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান প্রার্থীর সাজা দেওয়ার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে জাস্টিস মার্চানকে বিবেচনা করতে হবে।

যদি ট্রাম্পকে কারাদণ্ড দেয়া হয়, মার্কিন জনগণের প্রতিক্রিয়া আমাদের নির্বাচকমণ্ডলীর মতোই বিভক্ত থাকবে বলে মনে হয়। তবে কিছু জরিপে দেখা যায় – অবশ্যই রেসের শুরুতে ভবিষ্যদ্বাণী বিষয়ক প্রশ্ন জিজ্ঞাসার ক্ষেত্রে আমাদের সর্বদা সতর্ক থাকা উচিত – গুরুত্বপূর্ণ সুইং রাজ্যের অনেক ভোটার বলেছেন তারা কোন ফেলনের জন্য ভোট দেবেন না।

যদি ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হন এবং পরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যান, তাহলে আপীল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে সম্ভবত জামিন দেওয়া হবে, যেটি প্রায় এক বছর সময় নেবে। অর্থাৎ আপীল ব্যর্থ হলে, তাকে আগামী বছরের কোনো যে কোন একটা সময় থেকে যেকোনো সাজা ভোগ করতে  হবে। তিনি তার সিক্রেট সার্ভিস সুরক্ষাকর্মীদের সাথে পৃথক থাকবেন – যদি এক বছরের কম হয়, তাহলে সম্ভবত রাইকার্স দ্বীপে। তার সুরক্ষার জন্য তিনি নিশ্চিতভাবে অন্যান্য বন্দীদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবেন, তাই তার মূল সঙ্গী হবে সম্ভবত তার সুরক্ষাকর্মীরা।

যদি ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হন, তিনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না কারণ এটি একটি রাজ্য মামলা। তিনি সম্ভবত তার সাজাকে চ্যালেঞ্জ করতে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে নির্দেশ দেবেন, এবং এই ধরনের মতামত প্রকাশিত হয়েছে যে একজন বর্তমান প্রেসিডেন্টকে কারাগারে পাঠানো যাবে না, কারণ তা প্রেসিডেন্টকে অফিসের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখবে। আদালতগুলোও এ ব্যাপারে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সাথে একমত হতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024