রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

ইউএনএসকাপ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ও থাইল্যান্ড-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ৪.৪৭ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’ সমর্থন করে বাংলাদেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এসকাপ(ESCAP) এর নির্বাহী সচিব মিস আরমিদা সালসিয়াহ আলিস জাহাবানা বৃহস্পতিবার(২৫ এপ্রিল,২০২৪) ব্যাংককের ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স সেন্টারের মিটিংরুমে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রের এসকাপ হলে (৩য় তলা) জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসকাপ) ৮০তম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।

৬ দিনের সরকারি সফরে বুধবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে পৌঁছান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা।তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সংলাপের মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিরসন করতে হবে। জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা অবশ্যই সর্বাগ্রে থাকতে হবে।’

শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট অবসানে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বিশেষ করে আসিয়ানকে তাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যা ছাড়া আঞ্চলিক যোগাযোগ, সংহতকরণ ও সমৃদ্ধির সব প্রচেষ্টা একটি অনুপস্থিত ধাঁধা দ্বারা চিহ্নিত করা অব্যাহত থাকবে।

তিনি উল্লেখ করেন, তাদের সংকটের উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত এই সমাধান নাগালের বাইরে থাকবে, ততক্ষণ আঞ্চলিক সংযোগ, সংহতি ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের সব প্রচেষ্টা একটি অনুপস্থিত ধাঁধা দ্বারা চিহ্নিত হতে থাকবে। আসুন আমরা সেই ধাঁধাটিকে আবার জায়গায় ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করি।’

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে পালিয়ে এলে বাংলাদেশ তাদের সাময়িক আশ্রয়ের প্রস্তাব দেয়।

তিনি আরও বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যায় যা এখন বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক পরিস্থিতিতে পরিণত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারে চলমান সশস্ত্র সংঘাতের প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হচ্ছে।তিনি বলেন, ‘যা আমাদের ভূখণ্ডের ভেতরে ও বাইরে গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে।’

প্রধানমন্ত্রীর সাথে এসকাপ সচিব

তিনি মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সমাধানে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিশেষ করে আসিয়ানকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে দ্রুততম সময়ে দেশে ফিরে যেতে পারে তা আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে অবশ্যই দারিদ্র্য ও ক্ষুধার অভিন্ন শত্রুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০০৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। একই সময়ে চরম দারিদ্র্যের হার ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণে আমরা প্রত্যয়ী।’

তিনি উল্লেখ করেন, মাতৃ ও শিশু পুষ্টির ওপর গুরুত্বারোপের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বর্তমান অগ্রাধিকার হলো আয় বণ্টন, সম্পদের মালিকানা ও সামাজিক সুরক্ষার মাধ্যমে বৈষম্য দূর করা।’

বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড কূটনৈতিক সম্পর্ক

১৯৭২ সালের ৫ অক্টোবর থাইল্যান্ড বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৭৪ সালে থাইল্যান্ড ঢাকায় তার দূতাবাস খোলে এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে ১৯৭৫ সালে ব্যাংককে তার দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করে।

আবাসিক মিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে উভয় দেশ পারস্পরিক সুবিধার জন্য তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উপভোগ করে যাতে দুই দেশের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত সম্পর্ক গভীরভাবে নিহিত। গণতন্ত্র, উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি যৌথ অঙ্গীকার দুই দেশকে পারস্পরিক স্বার্থের অনেক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর ও জোরদার করা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারে থাইল্যান্ড প্রকৃতপক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন গতি গত চার বছরে রাজনৈতিক পর্যায়ে অধিক সফর, অফিসিয়াল মিথস্ক্রিয়া এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ২০১২ সাল ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বছর। এ বছর ছিল বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিস ইংলাক সিনাওয়াত্রা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ২১-২২ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে বাংলাদেশে একটি সরকারী সফর করেন।

প্রায় এক দশকের মধ্যে থাইল্যান্ডের কোনো সরকারপ্রধানের বাংলাদেশে এটিই প্রথম সরকারি সফর। থাই প্রধানমন্ত্রী ১০৮-সদস্যের একটি অফিসিয়াল এবং ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন, যাতে অন্যদের মধ্যে, উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

এই সফর বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। ডিসেম্বর ২০১১, ফেব্রুয়ারী ২০১০ এবং মে ২০১৮-এ দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তিনবার তার রয়্যাল হাইনেস প্রিন্সেস মহা চক্রী সিরিন্ধর্নের অত্যন্ত সফল বাংলাদেশে সফরও দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পৃক্ততাকে আরও গতিশীল করেছে।

বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ড ঘনিষ্ঠ অংশীদার এবং তাদের নিজ নিজ বৈদেশিক নীতির ম্যাট্রিক্সে একে অপরকে অনেক মূল্য দেয়। জনাব কাসিত পিরোম্যা, থাইল্যান্ডের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাধারণ স্বার্থের বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক পরামর্শের জন্য জুন ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সফর করেন।

বাংলাদেশের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ দীপু মনির থাইল্যান্ডে একটি ফিরতি সফর জুলাই ২০০৯ এবং ডিসেম্বর ২০১০ এ হয়েছিল।

এই সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আলাপচারিতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছে এবং আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দিগন্তকে প্রসারিত করেছে।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024