ফয়সাল আহমেদ
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এক কাব্যে শুধু সাপের বিষ ঘটনার মূল নায়ক হয়ে ওঠেনি, এই সাপের বিষকে নিয়ে যেমন ভয় আছে মানুষের তেমনি এ নিয়ে আছে নানান রকম ধারনা। আর যে কারণে সাপ দেখলেই সকলে আৎকে ওঠে। ভয় পায়। অথচ শতকরা নব্বই ভাগ সাপেরই কোন বিষ নেই। বিষ আছে মাত্র দশভাগ সাপের। আর বিষ শুধু যে সাপের আছে তা নয়, অনেক প্রাণীরই বিষ আছে।
প্রাণী তার প্রয়োজনেই নিজের দেহে বিষ তৈরি করে। দুই কারনে তৈরি করে এ বিষ। এক, আত্নরক্ষা ও শিকার ধরা । দুই, পরিপাকগত ব্যবস্থাপনা ।সাপ ছাড়া মাকড়সা, বিছা,মৌমাছি ,কিছু মাছ প্রজাতি ,টিকটিকি এবং কিছু মেরুদন্ডী প্রাণীর বিষ রয়েছে। সাপের বিষ আমাদের কাছে যেমন ভয়াবহ তেমন চিকিৎসাবিদ্যায় এর প্রচুর ব্যাবহার রয়েছে । সাপের বিষে ২০ প্রকারের পৃথক বিজারকের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সাপের বিষ গ্রন্থিতে যে বিষ পাওয়া যায় তা কিছুটা হলদেটে এবং এ বিষ তৈরি হয় লালাগ্রন্থিতে। সাধারন সাপের তুলনায় সামুদ্রিক সাপের বিষ বেশি হয়ে থাকে। আমাদের পরিচিত গোখরো সাপের তুলনায় তা দ্বিগুন। সাপের অধিবিষ বা টক্রিন প্রধান ডি-টিউবোকিউরানিন জাতীয়ো। এছাড়া সাপের বিষে থাকে বিটা-বানগারোক্সিন। এই অধিবিষ বিজারক এসিটালকোলিন নিঃসরন নিয়োমে বিঘ্ন ঘটিয়ে স্নায়ুতন্ত্রকে বিকল করে ফেলে। প্রোটিইনেজেস এবং এল-এমিনোএসিড অক্সিডেজ ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের বিষে পাওয়া যায় যা প্রাণী দেহে রক্ত প্রবাহ জমাট বাধায় ও ক্ষতস্থানে পচন ঘটায়।
চিকিৎসা সম্পর্কিত আদি ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায় সাপের বিষ ও বিষক্রিয়া সম্পর্কে জানতো সেই আদিকাল থেকেই । সাধারনত সাপের বিষ মুখ দিয়ে টেনে নিলে কোন বিষক্রিয়া হয় না । মানুষের চামড়ার নিচে রক্তে মিশে গেলে তবেই বিষক্রিয়া হয়। তবে সকল সাপের বিষ হয় না। শতকরা ১০% সাপের কামড়ে বিষক্রিয়া হয় তাই সকল সাপ দেখলেই যে ভয়ের এমনটি নয় ।
তবে কোন বিষধর সাপ কামড়ালে যত দ্রুত সম্ভব হাপাতালে নিতে হবে । স্থানান্তরে দেরি হলে অস্থির না হয়ে শান্ত হয়ে বসে থাকতে হয় । সাপে কাটা স্থানকে বিশ্রামে রাখতে হয়। হাতে বা পায়ে কামড়ালে ক্ষত স্থানের দুই ইঞ্চি উপরে কিছু দিয়ে শক্ত করে বেধে নিতে হবে। তাতে বিষ সীমিত স্থানে আটকে থাকবে ।
এর পর ক্ষত স্থানের নিচে ৪/৫ ইঞ্চি গভির করে ৪/৫ টা কাটা দিতে হবে আর বার বার পানি দিয়ে ধুয়ে দিলে বিষক্রিয়া কমে যায় । প্রাথমিক চিকিৎসা চলা কালিন রোগীকে গ্লুকোজ স্যালাইন ইনজেকশন দেয় অনেক সময়। বর্তমানে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন পাওয়া যায় যা বিষক্রিয়াকে নষ্ট করতে সাহায্য করে। সাপের বিষের ভ্যাকসিন প্রথম ১৮৮৩ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী আলবার্ট কালমেট তৈরি করেন। যা শুধু গোখরো সাপের ক্ষেত্রে কাজ করতো পরবর্তিতে ব্রাজিলীয় বিজ্ঞানী ভিটাল ১৯০১ সালে একাধিক সাপের প্রজাতির ভ্যাকসিন তৈরি করেন।
আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে ধারে কাছে হাসপাতাল না থাকলে রুগিকে নিয়ে বসে না থেকে ক্ষতস্থান নিদিষ্ট করে কেটে চুষে নেওয়া যেতে পারে। এতে অনেকটাই ভাল হয় । সাপে কামড়ালেই ভয় পেলে ক্ষতি। প্রয়োজন দ্রুত সঠিক চিকিৎসা । কেননা সাপের কামোড়ের থেকে মানুষ ভয় পেয়েই বেশী মারা যায় ।সাপ হলেই যে বিষধর তা ঠিক নয়।পৃথিবীর সকল প্রজাতির সাপের মাত্র ১০ ভাগ বিষধর। সাপ আমদের অনেক উপকারে আসে ।এদের ঘিরে রয়েছে নানামুখী গবেষণা ও বাণিজ্য ।সাপ পরিবেশ চক্রের এক অবিছেদ্য অংশ।
Leave a Reply