শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-২)

  • Update Time : শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

 

মাহমুদুল হক

‘তোর দাদাগিরির আমি কানাকড়ি দাম দিই কি না। তোদের মতো আমি লোচ্চা-বেলেল্লা নাকি, যে স্রেফ ফিয়াসে জুটিয়ে বেড়াবো?’

‘তা ঐ বহুবচনের মানেটা কি?’

‘তুই আর তোর ইয়ার-বন্ধুরা!’

‘যোগ্যতা থাকলে তবে না জোটাবি। ফিয়াসে তো আর গাছের শুকনো পাতা নয় যে ডাল ধ’রে নিছক হুপাহুপ বাঁদরামি ক’রে নাড়া দিবি আর ঝুরঝুর ঝ’রে পড়বে। যোগ্যতার মধ্যে ওই একটাই, অযথা খুনসুড়ি পাকানো। কি কূট-কচালে ছুঁড়িরে বাবা! যা, দাড়ি কামাবো, ঝট ক’রে পানি নিয়ে আয়।’

‘সবকিছু নিয়েই তো দিব্যি জাঁক ক’রে গেড়ে বসা হয়েছে, পানিটুকু নিয়ে বসলে গতরের এমন কিছু খেয়ানত হতো না।’

‘বহুৎ লেকচার ঝেড়েছিস, এবার কাজ কর। একটু নাই দিয়েছি কি না দিয়েছি অমনি মুখে খৈ ফুটতে শুরু করেছে। কাজ আছে, বাইরে বেরুতে হবে, নে নে, ঝটপট, জলদি ক্রো জলদি ক্রো-‘

গায়ে টিকে তোলা কাচের বাটিতে খানিকটা পানি নিয়ে এলো রজু, খোকা তখন পানপাতার মতো একটা আয়না চকচকে স্ট্যান্ডের ওপর এঁটে গালে হাত বুলিয়ে মাত্র ক’দিনের অযত্নে লালিত ভয়ানক রকমের রুক্ষ আর তীক্ষ্ণ আদল টিপে টিপে নিরিখ করছিলো।

‘ঠিক যেন একটা গাঁজাখোর! যা চোয়াড়ে মার্কা চেহারা হচ্ছে না তোর দিন দিন। ভালো ক’রে ঠাহর করতে পারছিস কাচের হার্টে, না লাইট জ্বেলে দেব?’

‘ঠাহর কি বে? ঠাহর কি? কথার কি ছিরি, কড়ে আঙ্গুলের মতো পুঁচকে ছুড়ি, তার আবার কথার বহর কত! ঠাহর, চোয়াড়ে, গতর, ঝাল লগড়ানি, কানকো মারা, পানিওয়ালী মাতারি কোথাকার।’

দেয়াল থেকে ক্যালেন্ডার নামিয়ে ঝেড়ে-পুঁছে একটা পাতা উল্টিয়ে সেটাকে আবার যথাস্থানে ঝুলিয়ে রাখলো রঞ্জু। এই মুহূর্তে তাকে নিদারুণ চিন্তাক্লিষ্ট আর গম্ভীর দেখায়। দাড়ি চাঁচতে চাঁচতে আড়চোখে একবার দেখলো খোকা। আজকাল প্রায়ই তার মনে হয় রঞ্জু ইতোমধ্যেই বয়েসের তুলনায় মাত্রা ছাড়া গাম্ভীর্য কুক্ষিগত ক’রে ফেলেছে। সাংসারিকতাকে ঠিক দায়ী করা যায় না এজন্যে, হিসেব ক’রে দেখেছে খোকা, টোল নেই রঞ্জুর গাম্ভীর্যে, কোনো ছিদ্র নেই, মনে হয় সন্ন্যাসিনী; দু’টি আয়ত চোখ মেলে রহস্যময় অচেনা ঘুলঘুলিতে সবসময় কিছু একটা খুঁজে বেড়ায় সে।

‘জানিস দাদা, ক’দিন থেকে আমার শুধু মনে হচ্ছে অন্যান্যবার যা হয় এবার তা হবে না, বাপি সময়মতো এসে পৌঁছুতে পারবে না, তুই দেখিস–‘ এ কথায় তার গলায় বিষাদ ঝ’রে পড়ে।

নাকের ডগা থেকে ক্রীমের ফেনা মুছতে মুছতে খোকা জানতে চাইলো, ‘এ রকম মনে হওয়ার কারণটা জানতে পারি কি?’

ঝালেন্ডারের একটা তারিখের ওপর হাত বুলিয়ে ভাসা ভাসা গলায় রাজু অনেক দূর থেকে বলবে, ‘অন্যবার বাপি আসার তারিখটা প্রায় মনেই থাকেনি, দেখতে না দেখতে দিন কেটে গিয়েছে, টেরই পাওয়া যায়নি, দেখা গেল হট ক’রে একদিন বাপি এসে হাজির। এবারে কোনো রকমেই আর তারিখটা আসতে চায় না; তারিখটা যেন পথ হারিয়ে ফেলে একটা উটের মতো মরুভূমিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে-!”

 

 

জীবন আমার বোন (পর্ব-১)

জীবন আমার বোন (পর্ব-১)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024