মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন।
মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে।
তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু।
তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক
ধর্ম আর রাজনীতি ব্যবসার রাঘব-বোয়ালরা ভেজাল ওষুধের কারবারী কিংবা পচা মাছ বিক্রেতার চেয়েও জাতে নিকৃষ্ট–এই জ্ঞান যখন টনটনে হয় ততদিনে সংগ্রামী ছাত্রজীবনের আয়ুও শেষ, অতএব কোমরে গামছা বেঁধে সি. এস. এস. অথবা ঐ জাতীয় একটা কিছুতে ঝপাং ক’রে লাফ না দিলে পাপস্খলনের সুযোগ তাদের জন্যে বারবার ফিরে আসে না। অন্ধের পায়ের পাতার চেয়েও সন্ধানী আর সতর্ক প্রগতিশীল অথবা বামপন্থী গণ্যমান্যদের অনেকেই এখন ইন্টারকনের লোলুপ নিভৃতে ব’সে কাটিশার্কব্যালেন্টাইনের মাহাত্ম্যের প্রসঙ্গে দূর থেকে নমস্কার করে স্কটল্যান্ডকে। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ, পুঁজি, মুনাফা, শ্রেণীসংগ্রাম, রিয়েলিটি, গণতন্ত্রের গ্যাঁড়াকল, নিও হ-য, আলট্রা ব-র-ল, এসবও যথারীতি মোচড় মেরে স্থান পায়, এবং পিঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো অতি সহজে সিল্ক খুলে ফেলে মেয়েদের–রাত যখন গভীর হয় কিংবা দিন যখন রাত্রিকালের গভীরতম প্রদেশ ব’লে ভ্রম হয়; অর্থাৎ বামাপন্থী হওয়াই সব কথার শেষ কথা।
আইজেন-স্টাইনের ছবির প্রসঙ্গ তুলে মুগুর ভাঁজাভাঁজি, পাবলো নেরুদার কবিতার চচ্চড়ি খাবলানো, পিকাশোর দেয়ালচিত্র নিয়ে গাবাগাবি, এখন আর তেমন দানা বাঁধে না; কেমন যেন স্যাঁতস্যাঁতে, মাটি মাটি, ফ্যাঙ্গাস ধরেছে এইসবে, বরং ভেনেসা রেদগ্রেভের নির্ভার স্বপ্ন মঞ্জরিত হ’য়ে ওঠে, অধিকার করে সবকিছু। সংগঠনের বস্তাপচা কামড়া-কামড়ি খামচা-খামচির খবরের মাঝখানে জাব্দা দেয়ালের ফুটো দিয়ে আসা এলসা মার্টিনেলির পায়ের গড়ন আরো বাতাস বৃষ্টির ঝাপটার কাজ করে, সোফিয়া লোরেনের বুকের মাপ বিদ্যুতের অলৌকিক চাবুক হয়ে লেজ নাড়তে শেখায় রিং মাস্টারের নাকের ডগায়; বালকের বিধ্বংসী হাতে রবারের লাল বেলুনের মতো অমন বুক হাতে এলে বিপ্লবকে তিনকুড়ি বছর বস্তাবন্দী ক’রে গুদামে পুরে রাখা যায়।
টনটনে রৌদ্রে হাবার মতো ঠায় দাঁড়িয়ে এসব কি ভাবছি-খোকা মনে মনে কতকটা কাদা মেখে উঠে এলো। একটা নির্বোধ উত্তেজনা স্নায়ুতন্ত্রীকে আচ্ছামতো কাবু ক’রে ফেলেছে। কিসের প্রত্যাশায় খুঁটিগাড়া হ’য়ে দাঁড়িয়ে আছি এখানে, নূহের নৌকো আসন্ন কোনো দিগন্ত প্রবাহী সর্বনাশা জলস্রোত থেকে শস্যবীজের মতো তুলে নেবে ব’লে, কেন দাঁড়িয়ে আছি, খোকা নিজের ওপর বিরক্ত হয়। সবকিছু সহজভাবে নিতে না পারাটা একটা বিদকুটে মানসিক দুরবস্থা, জটিলতাজর্জর অস্বাচ্ছন্দ্য; এইসব নচ্ছার এলোমেলোমির কোনো হাতপা নেই- হিজিবিজিকাটা একটা দলামোচড়া কাগজ মনের ভিতরের পকেটে ফশ ক’রে হাত চালিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় রাস্তায়।
Leave a Reply