পৃথিবীতে মানুষকে সফল হতে হলে সব ক্ষেত্রে নেতৃত্বের গুনাবলী অর্জন করতে হয়। নেতা মানে কখনও এই নয় যে সে অন্যকে নেতৃত্ব দিবে। নিজের প্রতিটি কাজের নেতাও নিজেকে হতে হয়। এ কারণে জীবনে সব থেকে বেশি প্রয়োজন নেতৃত্বের গুনগুলো নিজের জীবনা চারণের মধ্যে নিয়ে আসা। মানুষ দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও সফল মানুষের জীবন বিশ্লেষণ করে নেতৃত্বের নানান গুন বা আচরণ নির্ধারণ করেছে।
সারাক্ষণে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে তেমনি কিছু স্মার্ট নেতা হবার গুনাবলী।
নেতা হিসেবে ম্যান্ডেলাকে কেন সামনে রাখা হয়
নেলসন ম্যান্ডেলার মতো পৃথিবীতে অনেক নেতাই সংগ্রাম করেছেন। তাদের যৌবনের বড় অংশ তার সংগ্রামে দিয়েছেন। সাধারণ দল, টিম বা কোম্পানি বা কোন প্রফেসনের নেতাকেও যৌবনে একই রকম সংগ্রাম করতে হয়। কিন্তু তার গন্ডি তার কোম্পানির মধ্যে না হয় তার প্রফেসনের মধ্যে। তাই এই ছোট গন্ডি থেকে সেটা বের হয়ে আসে না। এবং এদের অনেককে জেল খাটতে হয় না বিপ্লবী নেতার মতো- তাই তারা প্রেস কভারও পায় না বা যেহেতু তাদের অনেকখানি ব্যক্তিগত বলে মনে হয়, তাই তাদেরকে সমাজ বা রাষ্ট্রের নেতা বলা হয় না। যদিও বর্তমান বিশ্বেন ধীরে ধীরে এ ধারা বদলে যাচ্ছে। প্রফেশনাল ও কোম্পানির নেতারা অনেক দেশে মূল নেতা হয়ে উঠেছেন। যেমন ওয়ারেন বাফেট, বিল গেটস, স্টীব জোবস, ফরিদ জাকারিয়া, শচীন টেন্ডুলকর, ত্রিকেটার ইমরান খান, কনসার্ট গায়িকা সুইফট তার নিজ নিজ দেশের সরকার প্রধান বা অতীতের বিপ্লবী নেতাদের থেকে কম সম্মানীয় নন। এবং তাদের অবদানও কম নয় মানুষের ও দেশের ও পৃথিবীর সার্বিক কল্যানে।
তবে তারপরেও গত একশ বছরে পৃথিবীর নেতৃত্বকে যদি বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে নি:সন্দেহে নেলসন ম্যান্ডেলাই সামনে আসবেন। কেন তিনি সামনে আসবেন?
নেলসন ম্যান্ডেলাকে কোন ছোট পরিসরে বিশ্লেষণ করা যায় না
তবে তারপরেও কয়েকটি উল্লেখ যোগ্য দিক এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে- যা সকল শ্রেনী পেশার নেতাকে করতে হয়।
১, এক নেতা কোন কাজে বিজয়ী হতে পারে বা তার দল বিজয়ী হতে পারে বা সাফল্য অর্জন করতে পারে। সাধারণ নেতা বা বড় নেতারা এই বিজয়ের ফলকে ঘরে তোলার অর্থ মনে করে এর সবটুকু ফল সে নিজে ভোগ করবে। বা তার দল বা কোম্পানি বা টিম ভোগ করবে।
নেতাকে এই বিজয়ের অংশীদার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষকে যেমন খুঁজতে হয় তেমনি যারা বিজয়ী হয়নি তাদেরকে খুঁজতে হয়। এবং কীভাবে এর ফল ভাগ করা সম্ভব হয় সে পথ বের করতে হয়। যাতে বিজয়ী সবটুকু না পায়।
মনে রাখা দরকার, কোন বিজয় শুধু নেতার একক কারণে নয়, সময় ও পরিস্থিতিও একটি বড় বিষয়। তাই বিজয়ের ফল কখনও বিজয়ীকে একা নিতে নেই। যে নেতা বিজয়ের ফল একা নিতে চায় সে বাস্তবে নেতা নয়, নেতার নামে একটা অন্য কিছু। এবং দেখা যায় ঘটনা প্রবাহ তাকে নেতা থেকে ভিন্ন কাতারে নিয়ে যায়। কারণ, মনে রাখা দরকার নেতা ও গ্যাং স্টার এক নয়।
নেলসন ম্যান্ডেলাই গত একশ বছরে একমাত্র নেতা তিনি এই সত্য বুঝেছিলেন। তাই তিনি বিজয়ী হলেও সবটুকু নিজের থলিতে রাখেননি।
২. নেতার সব থেকে বড় গুন কখন সরে দাঁড়াতে হয়। যে নেতা বাঘের পিঠে ওঠে বা কাজের চাপে তলিয়ে যায় সে আসলে নেতা নয়। সে অদ্ভুত বোকা এক সওয়ারি মাত্র। গত একশ বছরে পৃথিবীতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নেলসন ম্যান্ডেলা এই সত্য বুঝেছেন। আর বানিজ্য ক্ষেত্রে অনেকে বুঝেছেন। যারা বুঝতে পারেনি তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্টান তাদের জীবদশ্মাতেই ক্ষয় হতে শুরু হয়েছে। ঠিক এমনি প্রফেসশনালকেও এভাবে উত্তরাধিকারী তৈরি করে নিয়ে ভাগ করে নিতে হয়। এবং নিজের অর্জিত জ্ঞান একটা নির্দিষ্ট সময় থেকে নিউ জেনারেশানের মধ্যে জেনারেট করতে হয়। যা ম্যান্ডেলা করেছিলেন। হয়তো তার উত্তরসূরীরা সেটা গ্রহন করতে পারেনি। এ অবশ্য তাঁর ব্যর্থতা নয়।
Leave a Reply