বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ অপরাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১০৬)

  • Update Time : রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

এই চত্বরের মধ্যস্থলে একটি গৃহের ভিত্তি অদ্যাপি বিরাজমান আছে, তাহা দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সমান ও প্রায় ৩০ হস্ত হইবে। এই সকল ভিত্তি এক্ষণে নিবিড় জঙ্গলে আবৃত, আম্র প্রভৃতি দুই একটি বৃহৎ বৃক্ষও তাহাদের উপর জন্ম গ্রহণ করিয়াছে। দুই একটি পথশ্রান্ত পক্ষী সময়ে সময়ে সেই সকল বৃক্ষের শাখায় বসিয়া সিরাজের সাধের ভবনের ভগ্নাৰ- শেষ দেখিবার জন্ম বিষাদপূর্ণ কণ্ঠে পথিকদিগকে আহ্বান করিয়া থাকে।

সিরাজ উদ্দৌলার সমস্ত’ চিহ্নই প্রায় মুর্শিদাবাদ হইতে লর পাইয়াছে; কেবল ভাগীরথীর পূর্বতীরে তাঁহার নিশ্চিত মদীনাটিও পেয়াজ উদ্দৌলার বাজার প্রভৃতি ছই একটি স্থান অ্যাপি তাঁহার ক্ষীণ চান্তি আনয়ন করিয়া দেয়। আমরা পূর্ব্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, হীরা স্বতিয় প্রাসাদনির্মাণের সময় আলিবন্দী খাঁ সিরাজ উদ্দৌলার জন্ম একটি গঞ্জ স্থাপিত করিয়া দেন এবং তাহার নাম মনসুরগঞ্জ হয়। যে স্কুলে গল্পটি স্থাপিত হইয়াছিল, অদ্যাপি তাহাকে মনসুরগঞ্জ বলে।

* মনসুরগঞ্জ আজিমগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশন হইতে প্রায় এক ক্রোশ দক্ষিণে এবং হীরাঝিলের ভগ্নাবশেষ হইতেও বড় অধিক দূরে নহে। হীরাঝিল হইতে প্রায় অর্দ্ধ ক্রোশ উত্তরে মোরাদবাগ, অবস্থিত ছিল। রেনেলের কাশীমবাজার দ্বীপের মানচিত্রে হীরাঝিল ও মোরাদবাগ উভয়ের নির্দেশ দেখা যায়। মুশিদাবাদের মধ্যে মোরাদবাগ ও মোতিঝিল ইংরেজদিগের প্রিয় বাসস্থান ছিল; পলাশীর যুদ্ধের পর ক্লাইব মোরাদবাগে আসিয়া অবস্থান করেন। মীরজাফরের পুত্র মীরণ এই খানে তাঁহার অভ্যর্থনার নিযুক্ত ছিলেন। ওয়ারেণ হেষ্টিংস মুর্শিদাবাদের রেসিডেন্ট নিযুক্ত হইয়া মোরাদবাগেই বাস করিয়াছিলেন। মীরজাফরকে অপসারিত করিয়া মীর কাসেমের হস্তে রাজ্যভার দিবার জন্য ভান্সিটার্ট মোরাদ- বাগেই আসিয়া বাস করেন।

হীরাঝিলের অব্যবহিত দক্ষিণে একটি ভবনের কিছু কিছু চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। তথায় একটি গৃহের ভিত্তি ও দেওয়ালের ভগ্নার- শেষ অ্যাপি বিদ্যমান আছে। এই ভবনটি রাজা মহেন্দ্র বা রায় দুর্লভের। রায়দুর্লভ সিরাজের রাজত্বকালে মন্ত্রীর কার্য্য করিয়াছিলেন এবং মীরজাফরের সময়েও দেওয়ানের পদে অভিষিক্ত হন। হীরাঝিলের

নিকটেই তাঁহার বাসভবন ছিল। গৃহটির ভগ্নাবশেষ ব্যতীত ভবনের চতুদ্দিকেই ইষ্টকরাশি বিক্ষিপ্ত হইয়া আছে। ভূগর্ভপ্রোথিত সোপানা- ১৮৩ বলীর কয়েকটি সোপানও দৃষ্টিপথে পতিত হয়। মহেন্দ্র সায়ার নামে একটি নাতিদীর্ঘ পুষ্করিণী রাজা মহেন্দ্র বা রায়দুর্লভের নাম ঘোষণা বারে তেছে। বর্ষাকালে তাহার সহিত ভাগীরথীর সংযোগ হয়। এক্ষণে কৃষকগণ রায়দুর্লভের সেই বাসভবনের ভূমি কর্ষণ করিয়া শক্ত কান করিতেছে। কালে সমস্ত মুর্শিদাবাদের যে উক্ত দশা না হইবে, ইহা কে বলিতে পারে!

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024