শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৫১)

  • Update Time : রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

তার বুঝতে অসুবিধে হয় না বেলীর দুঃসাহসী চালে সে ফেঁসে গিয়েছে। বেলী যে তাকে খোঁজে খোকা তাও জানে; তার ইচ্ছে যেভাবেই হোক খোকার সঙ্গে একটা যোগাযোগ রক্ষা ক’রে চলতে। দু’একবার হুট ক’রে একা একা চ’লে এসেছে সে বাড়িতে, কিন্তু সুবিধে করতে পারেনি; খোকা টিপে দিয়েছে রঞ্জুকে, সর্বক্ষণ ছায়ার মতো তার সঙ্গে লেগে থেকেছে রঞ্জু।

কোন্দিকে যাওয়া যায় এখন? স্টেডিয়ামের চারপাশে ঘোরাঘুরি করার ফাঁকে ফাঁকে মনস্থির করতে থাকে খোকা। এখন ইচ্ছে থাকলেও মতিঝিলে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। বেলী কি কদর্য একটা নাম। যে সব বন্ধু কালেভদ্রে পাড়ায় যাতায়াত করে খোকা তাদের মুখে শুনেছে ওখানে নাকি খুব কদর বেলীর। মালা গেঁথে খোঁপা সাজায় মেয়েরা। বাবুদের হাতে হাতে শোভা পায়। ধুন্ধুমার গান-বাজনার ফাঁকে আধমাতাল বাবুর গলায় চৌদ্দ হাত দূর থেকে নির্ভুল তাক ক’রে বেলীর মালা পরিয়ে দেওয়াটাও একটা পুরানো বৈঠকী কেতা। বাড়িউলী মাসীদের বেজায় পছন্দ ওই বেলী নামটি। কচুর লতি খাওয়ার মতো নেহাত সখ ক’রে যে নামটা রাখা হয় তা নয়, কমলি, বিমলি, পটলি, মায়া, শান্তি, টগর-এসবের চেয়ে ওই নামটা নাকি বেজায় পয়মন্ত।

কলতলায় ঠ্যাং ছড়িয়ে ব’সে গোড়ালিতে ঝামা ঘষতে ঘষতে অবাক বিশ্বয়ে দ্যাখে ওই নামের গাছটির ডালপালা তো দূরের কথা, পাতাটি পর্যন্ত দেখা যায় না এত পাখি উড়ে এসে বসে ওই গাছে। নুরুদ্দিন গল্প করেছিলো, একবার সে ভৈরবের বাজেপট্টিতে এমন এক মাসীকে দেখেছে, যার সবক’টি মেয়ের নামই বেলী। কালা বেলী, ধাওলা বেলী, শুটকী বেলী, ধুমসী বেলী, গন্নাকাটা বেলী, খ্যাংরাগুপোরপিয়ারী বেলী, তাড়কা রাক্ষসী বেলী, দেখনহাসি বেলী, খাঁদা বেলী, ঢিপকপালে বেলী, খুঁচিখোঁপা বেলী, বড়িখোঁপা বেলী, এইভাবে আলাদা ক’রে ডাকা হয় তাদের। এলাকাটির নামই নাকি বেলীর বাগান। হাটে-বাজারে-গঞ্জে প্রায়ই নানা জাতের গুজব রটে সেখানে; বেলীর বাগানকে কেন্দ্র ক’রেই যাবতীয় গুজবের উৎপত্তি। যেমন, বেলীর বাগানে আজ জোড়াখুন হয়েছে, বেলীর বাগানে আজ হিজড়েরা জব্বোর নাচ নেচে গেছে, বেলীর বাগানে আজ একজনের পেট থেকে দু’মাথাওয়ালা সাপ বেরিয়েছে, বেলীর বাগানের মাসীর কাড়া নতুন নাঙ বদনার ভিতরে ভ’রে সত্তর ভরির গহনা নিয়ে ভেগেছে, এসব।

ভালোই মানিয়েছে নামটা বেলীর!

স্টেডিয়ামের চারপাশেই ভিড়, ছোট ছোট দলে ভাগ হ’য়ে জটলা পাকাচ্ছে মানুষজন। রিকশার উপর দাঁড়িয়ে স্প্রিং-এর মতো হাত নেড়ে মরিয়া হ’য়ে বক্তৃতা দিচ্ছে কয়েকজন আপনারা ভুলে যাবেন না, ভাইসব, মনে রাখা দরকার গোটা বিশ্ব আজ আমাদের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ হঠকারীদের চক্রান্তে প’ড়ে আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। তাকিয়ে দেখুন সংগ্রামী ভিয়েৎ- নামের দিকে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে কীভাবেই না সেখানকার সংগ্রামী জনতা মোকাবিলা ক’রে চলেছে, এবং একই সাথে প্যারিসে চলছে শান্তি আলোচনা। আলোচনার পথ যদি রুদ্ধ হয়, সংগ্রামের ক্ষেত্র তো আছেই-

হঠাৎ মুরাদের কথা মনে প’ড়ে যায় খোকার। সাত তারিখে একসঙ্গে রেসকোর্স গ্রাউন্ডে যাবার কথা ছিলো, শেষ পর্যন্ত তা আর হ’য়ে ওঠেনি।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024