শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন

রূপের ডালি খেলা (পর্ব-২৪)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪, ৪.০০ পিএম

ইউ. ইয়াকভলেভ

স্কেটস, বগলে ছেলেটা-১৩

দেখা যাচ্ছে, ভাবনাও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মন্থর হয়ে আসে তার গতি। বন্ধ করে ছোটাছুটি। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ে না। অপেক্ষা করে।

ক্লান্তভাবে ছেলেটা মাথা হেলান দেয় দেয়ালে। তাকিয়ে থাকে স্থির একটি বিন্দুতে। ট্যাঙ্কবিধ্বংসী কামানের ট্রেন্ট বা ফ্যাসিস্ট ট্যাঙ্ক এখন আর সে কিছু দেখছে না।

‘বাতিউকভের জন্যে কে এসেছে?’

চমকে ছেলেটা লাফিয়ে ওঠে বেন্ডি থেকে।

‘আমি!’

সামনে তার একজন বর্ষীয়সী নার্স দাঁড়িয়ে। অত্যন্ত মোটা সে, মনে হয় যেন অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্রেচার-বাহকদের মতো স্মক পরে আছে ওভারকোটের ওপর।

তুই?’ গাঢ়, প্রায় পুরুষালী গলায় জিজ্ঞেস করে নার্স।

‘ তারপর থেমে থেমে বলে যায় সে, যেন কাগজ থেকে পড়ে শোনাচ্ছে।

‘খুব কঠিন অপারেশন। অনেক রক্ত গেছে রোগীর। তবে সবই ভালোয় ভালোয় উৎরেছে।’ তারপর হঠাৎ সে মেয়ের মতোই মমতাভরে তাকায় ছেলেটার দিকে, কথা বলে একেবারেই অন্য সুরে, মেয়েলী গলায়, ‘ভাবনা নেই রে, ভাবনা নেই। বাপ তোর বে’চে থাকবে। ধাত ওর খুব শক্ত।’

‘ভালো হতে কদ্দিন লাগবে?’

‘সবুজ পাতা ফোটা পর্যন্ত শুয়ে থাকতে হবে,’ বলে নার্স’, ‘এবার বাড়ি যা। মাকে বলিস ভাবনা নেই… আর এটা তুই রেখে দে স্মৃতি হিশেবে।’ মরচে ধরা এক টুকরো লোহা এগিয়ে দিল সে।

‘কী এটা?’ জিজ্ঞাসু চোখে ছেলেটা চাইল নার্সের দিকে।

‘শেলের টুকরো।’

এটা সেই টুকরো, যুদ্ধ শেষ হবার বহু বছর পরে যা হঠাৎ চাঙ্গা হয়ে ওঠে, ওরেলের কাছে যা পারে নি, চেষ্টা করে সেটি করতে, সৈনিকের হার্টকে বিকল করে দিতে।

‘একেবারে হার্টের কাছ থেকে বার করতে হয়েছে,’ বোঝালে নার্স, তারপর সচকিত হয়ে তাড়া দিলে, ‘নে, আমার আর সময় নেই। বাপকে কিছু বলতে হবে?’

একটু ভাবনায় পড়ল ছেলেটা। রুগ্ন বাপেদের কাছে সাধারণত কী কথা বলে পাঠায় তাদের ছেলেরা?

‘বলে দেবেন যে বাড়িতে সব ঠিক আছে। চুমু পাঠাচ্ছে তাকে… সবাই। আর তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে উঠুক।’

কথাগুলো ওর কাছে মনে কেমন কাটখোট্টা, কিন্তু অন্য কোনো কথা ওর জানা ছিল না। টুকরোটা মুঠোয় নিয়ে চাপলে সে, বেশ ব্যথা লাগল- কানাগুলো ওর

ধারালো।

চলে গেল নার্স।

গেল সেখানে, যেখানে আগাগোড়া ব্যান্ডেজ বাঁধা হয়ে শুয়ে আছে ভূতপূর্ব সার্জেন্ট-মেজর বাতিউকভ। শুয়ে আছে চোখ মেলে, দাঁত কড়মড় করছে যন্ত্রণায়।

নার্স তার কাছে গিয়ে বালিশ ঠিক করে দিলে, তারপর যেন এমনি, হঠাৎ করে

বললে:

‘কী ভালো আপনার ছেলেটি!’

‘ছেলে?’ ব্যথা ভুলে ক্ষীণ হাসলে বাতিউকভ।

‘গোটা অপারেশনটা ও ভর্তির ঘরে বসে ছিল। ছটফট করছিল।’

‘ছেলে,’ ফিসফিসিয়ে বললে বাতিউকভ, মনে হল যন্ত্রণা যেন কমে এসেছে। টেলিগ্রাম তাইলে ঠিক সময়েই পৌঁছেছে। ছেলে তাহলে ওর রোগের কথা শুনতেই ছুটির কথা ভুলে ছুটে এসেছে শহরে!..

লোকটার খেয়ালই হল না যে এত তাড়াতাড়ি কোনো টেলিগ্রামই ওই দূরে সাপোজক শহরে পৌঁছতে পারে না, ছেলে এসে পৌঁছনো তো দূরের কথা।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024