হুমায়ুন খান
জন্ম আমার সুন্দরবনের প্রান্তে, সুন্দরবনেই জীবন কেটেছে। একেবারে ছোটবেলায় বাবার কাছে বন্দুক ধরা শিখেছিলাম, বাবার সঙ্গে গিয়ে জঙ্গল চিনেছি, বাঘ দেখেছি, বাঘ মারতে শিখেছি। পরবর্তী জীবনে ছাপ্পান্নটা রয়াল বেঙ্গল বাঘ মেরেছি, তার মধ্যে বিশটা ছিল মানুষখেকো। শিকারী জীবন, বনের জীবন অতি রোমাঞ্চকর। এমন আকর্ষণ আর কোনখানে নেই। কিন্তু এখানে রোমাঞ্চ যেমন আছে আবার ভয়ও রয়েছে পায়ে পায়ে।
যখন বাঘ শিকার করতে যাই তখন এই ক্ষুদ্র আমি যেন অনেক বড় মানুষ হয়ে যাই। আর শিকারী বলেই অনেক বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যলাভের সৌভাগ্যও হয়েছে। বনবিভাগ থেকে গাইড নিযুক্ত হয়ে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা, কখনো দিনের পর দিন তাঁদের ঘনিষ্ঠ সহচর্যে কাটিয়েছি। সেই সব অভিজ্ঞতার নানা স্মৃতি এখন আমার প্রতিদিনের মুহূর্তগুলোকে আশ্চর্য মাধ মাধুর্যে ভরে তোলে।
নেপালের পরলোকগত রাজা মহেন্দ্র ১৯৬৭, সালের শীতকালে এসেছিলেন সুন্দরবনে। তাঁর মত শিকারে উৎসাহী রাজা-বাদশাহ আর কেউ আছেন বা ছিলেন কি না জানি না। রাণী রত্না, ছোট রাজপুত্র এবং জামাতাও তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন, তিন দিনের শিকার যাত্রায় তাঁরা সুন্দরবনের নদীতে নদীতে লঞ্চেই কাটিয়েছিলেন।
রাজার শিকার-সঙ্গী ছিলেন সাবেক পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের ছেলে গওহর আইয়ুব এবং বন কর্মকর্তা আবদু আবদুল আলীম সাহেব, আর সার্বক্ষণিক গাইড হিসাবে ছিলাম আমি। আর অবশ্যই ছিলেন রাজার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা-প্রধান। চাঁদপাই রেজের অন্তর্গত তিনকুনিয়া দ্বীপে অত্যন্ত গভীর ও বিপজ্জনক জঙ্গলে মাচাতে বসে তিনি যখন রয়াল বেঙ্গল শিকারের চেষ্টা করেন তখন একই মাচাতে তাঁর সঙ্গেই বসার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার; আর ছিলেন রাজার নিরাপত্তা প্রধান। শিকার করার জন্যে অশেষ ধৈর্য সহকারে বহু ঘন্টা ধরে তিনি মাচার অসুবিধাজনক আসনে বসেছিলেন।
পরদিন বন্দুক হাতে রাজা আবার লঞ্চের সামনে বসলেন। রাণী রাজার পাশে বসলেন। ধীর গতিতে সেলা নদীর কিনারা ঘেঁষে চলতে লাগল লঞ্চ। সুন্দরবনের অনেক হরিণ, শুয়োর এমন কি বাঘ পর্যন্ত অনেক সময়ে লঞ্চের চলমানতার শব্দ উপেক্ষা করে বনের কিনারায় থাকে, তখন রেঞ্জের ভিতরে এলে লঞ্চ থেকেই গুলি করা যায়; কুমীর তো সাধারণতঃ নৌকা বা লঞ্চ থেকেই শিকার করতে হয়।
সেলা নদীর উভয় পাড়ে গভীর জঙ্গল। বিকাল বেলা উত্তর তীর ধরে পশ্চিমমুখে চলছে লঞ্চ। হঠাৎ জঙ্গল থেকে যেন এক ধাক্কায় এক শূয়োর খোলাতে বের হয়ে এল। এত বড় আকারের শূয়োর সুন্দরবনেও সচরাচর দেখা যায় না, রাজা সঙ্গে সঙ্গে গুলি করলেন, আর একটা মারাত্মক ডাক ছেড়ে আহত শূয়োরটা জঙ্গলের কিনারায় ছিটকে পড়ল। চলমান লঞ্চ থেকে নিক্ষিপ্ত গুলি সম্ভবতঃ শূয়োরের কোমরে লেগেছিল, পরমুহূর্তে উঠে আবার জঙ্গলে ঢুকে গেল।
লঞ্চ থামানোমাত্র রাজা বন্দুক হাতে সেলা গাঙের কিনারায় লাফ দিয়ে পড়লেন, গভীর কাদায় তাঁর হাঁটু পর্যন্ত ডুবে গেল। তৎক্ষণাৎ একদিক থেকে বন কর্মকর্তা আলীম সাহেব এবং আরেকদিক থেকে আমি লাফ দিয়ে কাদায় পড়ে তাঁর দুই হাতে ধরলাম আইয়ুব সাহেবও বন্দুক হাতে নেমে পড়লেন। কিন্তু আমাদের সাহায্য ছাড়া রাজা নিজেই কাদা পার হয়ে শুকনা পাড়ে উঠলেন এবং অতি দ্রুত আহত শুয়োরের পিছনে পিছনে ছুটলেন।
অত্যন্ত গভীর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে সকল বিপদ উপেক্ষা করে তিনি শিকারকে অনুসরণ করতে লাগলেন। সুন্দরবনের যে কোন স্থানে মারাত্মক বিষধর সাপের ভয় রয়েছে, আর হরিণ বা শূয়োর যেখানে থাকে তাঁর কাছেধারে সব সময়েই বাঘের গোপন উপস্থিতিরও সম্ভাবনা থাকে।
ত্রিশ হাত সামনে গিয়ে আমরা শূয়োর পেলাম, এক গেওয়া গাছের কাছে কাত হয়ে পড়ে আছে। রাজা আবার গুলি করলেন, বিশাল আকারের শূয়োর মুখ থুবড়ে ছিটকে পড়ল, চার পা শূন্যে তুলেও কাত হল এবং অসম্ভব শক্তিশালী জন্তু আবার খাড়া হয়ে হেলতে হেলতে ঘন গরানের পিছনে চলে গেল।
মাথায় বা বুকে না লাগলে শূয়োর সঙ্গে সঙ্গে মরে না, পর পর দুই গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত এই শূয়োরও তৎক্ষণাৎ মরল না-যদিও আর বেশীক্ষণ জীবিতও থাকতে পারবেন।
রাজা গরান ঝোপের দিকে অগ্রসর হলেন কিন্তু এবার তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সম্বন্ধে গওহর আইয়ুব সাহেব ও আলীম সাহেব শঙ্কিত হয়ে উঠলেন, তাঁরা’ কিছুতেই তাঁকে আর সামনে অগ্রসর হতে দিলেন না।
প্রচুর রক্ত ধরে ধরে আমরা আবার জঙ্গলের কিনারায় ফিরে এলাম। কিন্তু শুয়োর যে জায়গাটায় প্রথম গুলি খেয়ে পড়েছিল তার মাত্র ছয় হাত পূর্বদিকে নরম মাটির উপরে আলীম সাহেব যখন মস্ত বড় বড় বাঘের পারা আবিষ্কার করলেন তখন আমরা সবাই চমকিত ও শঙ্কিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। অন্ততঃ দশ ফুট লম্বা বাঘার তাজা পারা, শূয়োর যেদিক দিয়ে জঙ্গলে ঢুকেছে তার প্রায় সমান্তরাল পূবদিক দিয়ে বাঘ তাকে অনুসরণ করেছে।
সাবেক পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬৬-৬৭-এর শীতকালে কুমীর শিকার করতে সুন্দরবনে এসেছিলেন। গভর্ণর মোনয়েম খান আমাকে খুবই ভালবাসতেন, এতটা ভালবাসতেন যে সুন্দরবনে যখনি তিনি শিকার করতে আসতেন প্রতিবারেই আমাকে সঙ্গী করে নিতেন। একবার আমাকে ঢাকা নিয়ে গিয়েছিলেন এবং গভর্ণমেন্ট হাউজে তাঁর ব্যক্তিগত মেহমান হবার গৌরবদান করেছিলেন। তাঁর সামরিক সেক্রেটারীর নির্দেশে আমার প্রথম টেলিভিশন অনুষ্ঠানেরও ব্যবস্থা হয়েছিল। মোনয়েম খান সাহেবের নির্দেশেই হয়ত হবে, এবং খুলনার বন-কর্মকর্তা আলীম সাহেবের সিদ্ধান্তে তো অবশ্যই, যে আইয়ুব খানের শিকার-সঙ্গী হবার সৌভাগ্যও আমার হয়েছিল।
সুন্দরবনের গহীনে প্রায় সব নদীর চরেই কুমীর দেখা যায়, বিশেষ করে শীতের সকালে বেশী। একটা, কি কয়েকটাই, ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে চরে পড়ে থাকে আর রৌদ্র পোহায়। লঞ্চ বা নৌকা করে যেতে নদীতেও অনেক সময়ে পোড়া কাঠের মত ভাসমান কুমীর চোখে পড়ে। তবু প্রেসিডেন্টকে এমন কোন নির্দিষ্ট এলাকায় নিয়ে যাওয়া উচিত যেখানে তিনি একটা বড় কুমীর শিকার করতে পারেন, বিবেচনা করে বন-কর্মকর্তাগণ কটকা নদী নির্বাচন করলেন।
সুন্দরবনের সব বাঘ মানুষখেকো নয়, কিন্তু সব কুমীরই মানুষখেকো। কটকা নদীর বিশেষ একটা এলাকায় বিশাল বড় আকারের ভয়ঙ্কর এক কুমীর ছিল, এটা আমরা সবাই জানতাম। বহু মানুষ তার পেটে গিয়েছিল এবং অনেক সময়ে সে জেলে- বাওয়ালীদের নৌকার পিছনে পর্যন্ত ধাওয়া করত। প্রেসিডেন্টকে সেই কুমীরটা শিকারের সুয়োগ করে দেওয়াই স্থির হল।
দুইটি লঞ্জ নিয়ে আমরা আগে থেকেই কটকা গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম, নির্দিষ্ট তারিখে সী-প্লেনে প্রেসিডেন্ট কটকা গিয়ে নামলেন এবং সকাল সাতটার মধ্যেই লঞ্চে চড়ে শিকারে বেরু হলেন। তাঁর সঙ্গে একই লঞ্চে আলীম সাহেব এবং আমি উঠলাম।
কুমীরটার চলাচলের এলাকায় গিয়ে লঞ্চের গতি মন্থর করে দেওয়া হল। তার মালে আধঘন্টার মধ্যেই আমরা কুমীর দেখতে পেলাম, কিন্তু চরে নয়, পানিতে। কয়েক শ গজ যেতে দুইলার কুমীরের পিঠ ভেসে উঠল এবং আমরা চিনলাম যে এটা সেই কুমীর, কিন্তু আইয়ুব খান রাইফেল তুলেও গুলি করার সুবিধা পেলেন না। মাথায় ও ঘাড়ে গুলি না লাগলে কুমীর মরে না, দুইবার তিনি পিঠে গুলি করতে পারতেন, কিন্তু তাতে আহত কুমীর তলিয়ে যেত, মরত না।
সেখান থেকে আরো মাইলখানেক যেতে লঞ্চ থেকে খুবই কাছে নদীর চরে আরেকটা কুমীর পেয়ে গেলাম। আমরা আশান্বিত হলাম যে প্রেসিডেন্ট অন্ততঃ একটা কুমীর শিকার করার সুযোগ পেলেন। রেঞ্জের ভিতরে আসতে রাইফেল কাঁধে তুলে তিনি ভাল করে লক্ষ্য করে দেখলেন যে সেটা একটা ছোট কুমীর। তিনি সেটা মারলেন না, রাইফেল নামিয়ে নিলেন।
বেলা বারোটা পর্যন্ত সামনে এগিয়ে তারপর আবার আমরা ফিরে চললাম। হিংস্র বড় কুমীরটার অবস্থানের কাছাকাছি এসে আবার লঞ্চের গতি মন্থর করে দেওয়া হল, কিন্তু কুমীর আর দেখা গেল না।
দেখা গেল কটকা নদীর উভয় পাড়ে হরিণ। কয়েক জায়গায়। কাছাকাছি এবং খুবই রেঞ্জের ভিতরে একটা খোলা জায়গায় একসঙ্গে অন্ততঃ চৌদ্দ-পনেরটা হরিণ ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তিনি শুধু মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন, একটা হরিণ মারলেন না।
ছোট-বড় সবার সঙ্গে করমর্দন করে তিনি লঞ্চ থেকে নেমে গিয়ে সী-প্লেনে উঠলেন।
পরের বৎসর, অর্থাৎ ১৯৬৮ সালে, সাবেক পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান আমাকে ‘সনদ ই-খিদমত’ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করেন।
১৯৫৮-৫৯ সালে শীতকালে খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জনাব আলীম আমার বাড়ীতে বিশেষ লোক মারফত খবর পাঠালেন যে, সাবেক পূর্ব-পাকিস্তানে নিযুক্ত প্রথম সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল ওমরাও খান সুন্দরবনে শিকার করতে আসবেন, আমি যেন অতি অবশ্যই এবং অবিলম্বে খুলনা গিয়ে দেখা করি, আমাকে জেনারেল সাহেবের গাইড হতে হবে। সে অনুযায়ী খুলনা গেলে তিনি আমাকে সেখান থেকে চাঁদপাই রেঞ্জের কাঁকড়ামারী কূপ অফিসে গিয়ে যে কোন সময়ের জন্যে অপেক্ষমান থাকতে বললেন; আরো বললেন যে আমার যাবতীয় খরচ বন দফতরই বহন করবে।
দুইদিন পরে তিনটি লঞ্চ নিয়ে জেনারেল ওমরাও খান রাত দশটায় কাঁকড়ামারী পৌঁছলেন এবং সেখান থেকে আমাকে তুলে নিয়েই আবার লঞ্চ ছেড়ে রওনা হলেন।
ওমরাও খানের স্ত্রীও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। শিকার-দলে আর ছিলেন এয়ার মার্শাল আসগর খানের ভাই ব্রিগেডিয়ার আসলাম খান এবং আরো কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা। তাঁর লঞ্চের সারেঙ ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ফতেপুর গ্রামের আবদুস সোবহান।
সেলা নদী ধরে গিয়ে আমরা হরমল নদীতে পড়লাম এবং একটা সুবিন্ধাজনক স্থানে তিনটি লঞ্চই নোঙর করে সেখানে, রাত কাটালাম। খুব সকালে আবার লঞ্চ ছাড়ল। প্রথম বড় লঞ্চের সামনে রাইফেল হাতে বসলেন ওমরাও খান, বাম পাশে তাঁর স্ত্রী, আর ডান পাশে আসলাম খান, তাঁরও হাতে রাইফেল, এবং আরও চারজন; ওমরাও খানের পিছনে ছিলাম আমি ও দোভাষী। জেনারেল আমাকে যা কিছু জিজ্ঞেস করেছিলেন বা আমি যা বলছিলাম সবই দোভাষীর মাধ্যমে।
হরমল নদী ধরে লঞ্চ, দক্ষিণমুখে এগিয়ে চলল। আমরা লঞ্চে নাশতা করলাম, দুপুরের খাবারও খেলাম। তার আগে নদীর চর থেকে আসলাম খান খুব সহজেই এক কুমীর মারলেন, মাঝারি আকারের। আমরা সবাই মোটা দড়ি বেঁধে টেনে সেই কুমীর তোললাম লঞ্চের ছাদে।
বিকাল সাড়ে তিনটায় গিয়ে পড়লাম চরপুটি নদীতে, সোজা দক্ষিণমুখে এগুতে লাগলাম। প্রায় চারটার সময়ে নদীর ডান পাড়ে, কিনারা থেকে আন্দাজ দুইশ হাত দূরে হবে, বাঘ দেখলাম, জঙ্গল ও চরের কিনারা ধরে হেঁটে আসছে। লঞ্চের গতি সঙ্গে সঙ্গে মন্থর করে গাঙের কিনারায় নেওয়া হল। ওমরাও খানের একটি বিষয়ের কথা আমি এখানে উল্লেখ না করে পারি না; এত বড় সেনাপতি, রাইফেলের রেজ তো তাঁর না জানার কথা নয়, তথাপি লঞ্চ এগুতে থাকতে তিনি রাইফেল শুধু নিশানা করে রইলেন, আমি, ‘এখন গুলি করুন’ না বলাঁ পর্যন্ত গুলি করলেন না। অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী মানুষ না হলে অপরের অভিজ্ঞতার উপরে কেউ এভাবে নির্ভর করতে পারেন না।
লঞ্চের আওয়াজ শুনে এক সময়ে বাঘ জঙ্গলের কিনারায় বসল-কুকুর যেমন করে বসে ঠিক তেমনি সামনে ঝুঁকে। আমি বলামাত্র তিনি গুলি করলেন কিন্তু প্রথম গুলি লাগল না-পরে দেখেছিলাম যে বাঘের মাথার উপর দিয়ে গিয়ে গাছে বিধেছিল। বাঘ কিন্তু বসেই রইল। এমন হতে পারে যে লঞ্চের আওয়াজ শুনতে শুনতে রাইফেলের আওয়াজ বুঝতে পারেনি। পরমুহূর্তে দ্বিতীয় গুলি পেটে লাগতেই ‘হুঙ্ক!’ করে লাফ দিয়ে উঠল আর চক্ষের পলকে জঙ্গলে অদৃশ্য হয়ে গেল। ওমরাও খান এবং আসলাম খান দুইজনেই লঞ্চ থেকে নেমে জঙ্গলে বাঘকে অনুসরণ করতে চাইলেন কিন্তু আমি বারণ করলাম; সুন্দরবনের পড়ন্ত সন্ধ্যায় দ্রুত মিলিয়ে যাওয়া আলোতে আহত বাঘকে অনুসরণ করা সেদিন আর কিছুতেই নিরাপদ ছিল না।
সারারাত হরমল নদীতে লঞ্চে রইলাম, সকাল আন্দাজ সাতটায় কুয়াশার ভাব কেটে গেলে আমরা মোট আটজন পাড়ে নামলাম। তাঁদের মধ্যে আমি, দোভাষী ও সারেঙ সোবহান ছিলাম বাঙালী, আটজনের প্রত্যেকের হাতেই রাইফেল বা বন্দুক।
চর পার হয়ে জঙ্গলের কিনারায় পৌছাতেই বাঘের রক্ত পেলাম, গুলিতে কাটা কিছু লোমও পেলাম। বুঝলাম যে বাঘ নিশ্চিত আহত হয়েছে।
বনের ভিতরে বাঘের রক্ত ও পারা অনুসরণ করে প্রায় পঞ্চাশ হাত এগুলাম, কিন্তু একটু পরিষ্কারমতন জায়গায় গিয়ে আর রক্ত পেলাম না। তখন অপেক্ষাকৃত নরম মাটিতে পারা খুঁজে খুঁজে অগ্রসর হলাম। হঠাৎ আমাদের পঞ্চাশ-ষাট হাত সামনে থেকে আহত বাঘ বের হল, এদিকে আমাদের আক্রমণ করল না, জঙ্গল ভেঙে পূর্বদিকে ছুটে গিয়ে এক খালে পড়ল। আমরা ঝপ্ করে ভারী জানোয়ার পানিতে পড়ার সেই আওয়াজ শুনতে পেলাম।
আটটি বন্দুক ও রাইফেল উদ্যত করে একটু একটু করে অগ্রসর হলাম। খালে গিয়ে দেখি বাঘ খাল পার হয়ে ওদিকের জঙ্গলে ঢুকে গেছে। পানি-কাদা ভেঙে ঠিক সেখানে সেই মুহূর্তে খাল পার হলাম না, লঞ্চে ফিরে এলাম এবং সেখান থেকে স্পীডবোটে করে আটজনেই নদী ঘুরে গিয়ে খালে ঢুকলাম এবং বাঘ যেখানে খাল পার হয়েছে তার হাত বিশেক পিছনে নামলাম।
আহত বাঘের পারা ধরে ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগুতে লাগলাম। আগে আমি, পিছনে আর সবাই। পূর্বদিকে বিশ-ত্রিশ হাত যেতেই একটা ছোট জলা জায়গা পড়ল, বাঘ এক লাফে সেই জায়গাটা পার হয়ে গেছে। সে পর্যন্ত গিয়ে আমি আর অগ্রসর হওয়া নিরাপদ বোধ করলাম না, সকলকে বারণ করলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই যে মারাত্মক ঘটনাটি ঘটবে তা তাঁরা আমার পূর্ব-সতর্কতা থেকে আন্দাজ করতে পারলেন না এবং আহত রয়াল বেঙ্গলের প্রকৃতি সম্বন্ধে বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে সকলেই বললেন যে, অগ্রসর হবেন।
জলা জায়গা পার হয়ে ওপারে শক্ত মাটিতে আবার বাঘের পারা হারালাম। লাফ দিয়ে প্রথমে গিয়ে যেখানে পড়েছিল সেখানে হালকা ছাপ, কিন্তু তার পরে আর কোন কিছু নেই। এখানে এসে আর একটা পা সামনে বাড়া অসম্ভব হয়ে পড়ল।
কয়েক মিনিট এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে আমরা আটজন দুই দলে বিভক্ত হয়ে সামনের জঙ্গলের দুইপাশ ঘিরে অগ্রসর হতে লাগলাম। মাঝখানে রইল হাত বিশেক প্রশস্ত জঙ্গল। প্রত্যেকের হাতে উদ্যত রাইফেল ও বন্দুক, প্রতি মুহূর্তে দুই-চার হাত দূর থেকে দুনিয়াতে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জন্তুর গর্জন ও আক্রমণ প্রত্যাশা করে বহুক্ষণে আমরা প্রায় একশ হাত পূবে গিয়ে আবার আটজন একত্র হলাম। দুঃখের বিষয়, তন্ন তন্ন করে দেখা সত্ত্বেও উভয় দলের মাঝখানের বিশ হাত প্রশস্ত ও একশ হাত দীর্ঘ জঙ্গলের মধ্যে বাঘ পিছনে পড়ে রইল।
আটজন এক জায়গায় বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে বাঘের পায়ের ছাপ খুঁজছি এমন সময়ে পিছন থেকে ক্রুদ্ধ গর্জন করে বাঘ আক্রমণ করল। বন্দুক তাক করার আগেই গাঁ-গাঁ করে এসে সারেঙের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমার মাত্র দুই হাতের মধ্যে দাঁড়ানো সারেঙ বন্দুকের ট্রিগার টিপার সময় পেলেন না, লাঠিয়াল যেমন করে লাঠির বাড়ি প্রতিহত করে ঠিক তেমনি দুই হাতে টোটাভরা বন্দুক ধরে সারেঙ সোবহান বাঘকে রুখতে চেষ্টা করলেন। বাঘ পিছনের দুই পায়ের উপরে খাড়া হয়ে বন্দুকের নলের উপর দিয়ে তাঁর মাথায় ও হাতে নলি বিধিয়ে দিল। আক্রমণের ধাক্কায় ও বাঘের দেহের ভারে সারেঙ চীৎ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন, বাঘও সামনের পায়ের ভর হারিয়ে তাঁর পাশে পড়ে গিয়ে পরমুহূর্তে উঠে দাঁড়াল; আর তখন বন্দুকের নল বাঘের ঘাড়ে চেপে আমি ট্রিগার টানলাম।
পরের দশ সেকেণ্ড সময়ের মধ্যে কেমন করে রক্তাক্ত সারেঙ সমেত কম্পমান সাতজন মানুষ একসঙ্গে একদিকে এবং আমি একা আরেক দিকে মরা বাঘ থেকে ত্রিশ হাত দূরে ছুটে গিয়েছিলাম তা আমি বলতে পারব না, মুহূর্তের চেতনায় কি সাহসে যে সেভাবে বাঘকে গুলি করেছিলাম তাও বর্ণনা করতে পারব না; বাঘের বুক-পেটের উঠানামা সম্পূর্ণ থেমে যাওয়ার পরও আমি কেবল হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে রইলাম।
আমি ছিলাম বাঘ থেকে উত্তর দিকে আর বাকী সবাই পশ্চিম দিকে। সোবহান মাটিতে পড়ে রইলেন, আর ছয়জন বাঘের দিকে বৃষ্টিপাতের মত গুলি ছুঁড়তে লাগলেন। প্রায় পনের মিনিট পরে বাঘের কাছে প্রথম এগিয়ে গেলাম আমি, তারপরেই আসলাম খান এসে বাঘের ঊর্ধ্বমুখী হা করা মুখে রাইফেলের নল ঢুকিয়ে ট্রিগার টিপে দিলেন এবং আর একটুও দেরী না করে রক্তাপুত সারেঙকে নিয়ে লঞ্চের দিকে রওনা হলেন।
আসলামু খানের তদারকীতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁকে খুলনায় পাঠিয়ে দেওয়া হল। এক বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার শেষে সাড়ে দশ লম্বা বিশাল বাঘ বহন করে প্রনে কুমীরের পাশেই লঞ্চের ছাদে তোলা হল। লঞ্চ পূর্ণবেগে খুলনামুখী চললে তখন ওমরাও খান আমার সঙ্গে অত্যন্ত সহৃদয়তায় অকৃত্রিম ধন্যবাদের করমর্দন করলেন এবং আমাকে তাঁর পাশে বসালেন। যখন শোনলেন, যে আমার নিজের বন্দুক নেই, বর্ন অফিস থেকে বন্দুক নিয়ে গিয়ে শিকার করে থাকি, তখন তিনি আশ্চর্য হলেন এবং দুঃখিতও বোধ করলেন। খুলনা পৌঁছেই তিনি এবং আসলাম খান দুইজনে জিলা প্রশাসককে সুপরিশ করলেন আমাকে যেন শিকার করার জন্যে বিনামূল্যে একটি বন্দুক দেওয়া হয়। জিলা প্রশাসক ছিলেন আমাদেরই বাঙালী ভাই মোয়াজ্জম হোসেন চৌধুরী, তিনি নিজে মালখানায় গিয়ে সেখান থেকে খুব সুন্দর একটা দোনলা বন্দুক বাছাই করে আমাকে উপহার দেন। সেই বন্দুকটি দিয়ে আমি ষোলটি বাঘ মেরেছিলাম। পরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে লাইসেন্সসমেত বন্দুকটি আমি থানায় জমা দিয়েছিলাম, কিন্তু দেশ স্বাধীন হবার পরে বন্দুকটি বা লাইসেন্স কোনটিই আর আমি ফেরত পাইনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোন সন্ধান করতে পারিনি।
বাঘের নলি সারেঙ আবদুস সোবহানের মাথার খুলি ভেদ করেনি, হাতের কব্জিতে যদিও গভীর হয়ে বিঁধেছিল। খুলনাতে কিছুদিন চিকিৎসার পরে তাঁর মাথা ও হাতের ঘা শুকায় এবং তিনি আবার সুস্থ হয়ে উঠেন।
ফরাসী বংশোদ্ভূত সীন ফ্লায়েন সাহেব আমাকে দেওয়া প্রশংসাপত্রে যদিও নিজের নামের শেষে লিখেছিলেন, পর্যটক, প্যারিস, ফ্রান্স’, কিন্তু বন’কর্মকর্তাগণের নিকটে শুনেছি যে তিনি বর্তমানে আমেরিকাতে বসবাসকারী একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক। তিনি শিকারের নেশায় সুন্দরবনে এলে আলীম সাহেব ওয়ারলেসযোগে আমার বাড়ীতে সংবাদ পাঠালেন। আমি সঙ্গে সঙ্গেই খুলনা গেলে তিনি আমাকে সাহেবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং তাঁকে বললেন যে, তিনি সুন্দরবনের সকল অবস্থায় এই গাইড, অর্থাৎ আমার উপর নির্ভর করতে পারেন।
খুলনা থেকে লঞ্চে করে আমরা বুড়ী গোয়ালিনী রেঞ্জ অফিসে পৌছলাম এবং সেখান থেকে চারজন বনমাঝিসহ বন অফিসেরই বোটে করে একেবারে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি কৈখালী বন অফিসে গিয়ে পৌঁছলাম। এখানে এলে শিকারের সঠিক স্থান নির্বাচন, ইত্যাদি বিষয়ে সাহায্য করার জন্যে কৈখালীর ফরেস্টার সাহেবও আমাদের সঙ্গে এসে বোটে উঠলেন।
রাতভর নৌকা চালিয়ে ভোররাত্রে আমরা যমুনা নদীর পাড়ে বয়ারশিঙ পৌঁছলাম। এই অত্যন্ত গহন এলাকায় এক, দুই কি * তিন দিন অপেক্ষা করলে বাঘকে গুলি করার একটা সুযোগ যে পাওয়া যাবেই তাতে আমাদের কারুরই কোন সন্দেহ ছিল না।
নদীর পার থেকে শ দেড়েক হাত ভিতরে, চারদিকে গভীর বন, মাঝখানটায় কিছুটা হালকা, এ রকম একটি স্থানে একটা বড় কেওড়া গাছে মাচা বাঁধা স্থির হল। দুপুর বারোটার মধ্যে মাটি থেকে হাতবারো উপরে দুইজনের বসার উপযোগী প্রশস্ত মাচা তৈরী হয়ে গেলে তখন আমরা বোটে ফিরলাম। ফ্লায়েন সাহেব প্রচুর ফলমূল সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি ভাত না খেয়ে ফলমূলই খেলেন; তারপর তাঁর টাকায়ই কিনা বেশ বড় একটা ছাগল সঙ্গে নিয়ে আমরা আবার জঙ্গলে ঢুকলাম।
বেলা ঠিক দুইটায় ফ্লায়েন সাহেব রাইফেল এব আমি একটি দোনলা বন্দুক নিয়ে গিয়ে মাচার উপরে সাবুদ’ হয়ে বসলাম। আমার নির্দেশমত বনমাঝিরা ছাগল বাঁধল আমাদের গাছের গোড়া থেকে পনের হাত দূরে গভীর ঝোপের ধারে-একটু খোলাতে। সেই জঙ্গলের ভিতর দিয়ে আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে বাঘ ছাগলের কাছাকাছি হয়ত আসতে পারবে, কিন্তু ছাগল ধরতে হলে তাকে খোলাতে মুখ বাড়াতেই হবে, তখন দৃষ্টি এড়াতে পারবে না। ফরেস্টার সাহেব বনমাঝিদের নিয়ে বোটে চলে গেলে আমরা মাচার উপরে তৈরী হয়ে বসলাম।
বনের গভীরে আমরা যখন বাঘের জন্যে অপেক্ষমান থাকি তখন কখনো ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে মশার কামড় সহ্য করি, শব্দ করে মশা মারি না বা তাড়াতেও পারি না। জোরে নিঃশ্বাসটি পর্যন্ত নিই না, এবং আমার ধূমপানের অভ্যাস থাকা সত্ত্বেও সে সময়ে তা হারাম জ্ঞান করি। ফ্লায়েন সাহেবকে এ বিষয়গুলো সম্বন্ধে আগেই সচেতন করে দেওয়া হয়েছিল। তিনিও যতক্ষণ মাচাতে ছিলেন এর একটি জঙ্গলের আইন ভঙ্গ করেননি, কিন্তু এক ঘন্টাকাল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে সতর্ক থাকার পরে তিনি আর পারলেন না, বই পড়তে লাগলেন।
তাঁকে রাইফেল ধরতে বলে আমি মাচা থেকে মাটিতে নামলাম এবং বাঘের ডাক দিলাম। মিনিট দশেক নীচে থেকে পর পর কয়েকবার ডাক দিলাম, তারপর দ্রুত মাচাতে উঠে আবার বন্দুক তুলে নিলাম। সুন্দরবনের এই এলাকাটা বাঘের জন্যে বেশী বিখ্যাত। গোটা বনে এ রকম কয়েকটি এলাকা আছে যেখানে অন্যান্য যায়গার চেয়ে বেশীসংখ্যায় বাঘ থাকে। কাজেই আমার ডাকের জবাবে বাঘ আসবেই এটা আমি খুব বেশী আশা করলাম। ফ্লায়েন সাহেব আধাঘন্টাতক রাইফেল ধরে রেখে আবার বই তুলে নিলেন। তিনি যদি আর মাত্র দশ মিনিট ধৈর্য ধরতে পারতেন তাহলে ব্লাঘের গায়ে প্রথম গুলিটা তিনিই করতে পারতেন।
দ্বিতীয়বার মাচাতে উঠে বসার মিনিট চল্লিশেক পরে বাঘ এল। ছাগলটা একটু পর পরই ডাকছিল, অবশ্যই ভয়ে; কিন্তু বাঘ তার মাত্র চার হাত দূরে আসা সত্ত্বেও সে উপস্থিতি টের পায়নি। ছাগলের সামান্য পিছনে হঠাৎ পাতার মচ্ মচ্ আওয়াজ শোনামাত্র আমি বন্দুক কাঁধে তোললাম; পরের এক মিনিটের মধ্যে জঙ্গলের ভিতর থেকে-আমার সেই মুহূর্তে মনে মনে হয়েছিল যেন মাটির তলা থেকে বাঘ ছাগল ধরার জন্যে মুখ বাড়াল। তৎক্ষণাৎ মাথায় গুলি করলাম, আর বাঘ আধা-জঙ্গল আধা- খোলাতে উপুড় হয়ে পড়ে গেল। পরমুহূর্তে ফ্লায়েন সাহেব বাঘের পাঁজরে দ্বিতীয় গুলি করলেন।
উত্তেজনার বশে তিনি তক্ষুণি মাচা থেকে নীচে নামতে গেলেন। কিন্তু সেই মারাত্মক ভুল করতে না দিয়ে আমি বহু কষ্টে তাঁকে জাপটে ধরে রাখলাম। তিনি সেই অবস্থায় থেকেও বাঘের রক্তের স্রোত দেখিয়ে বলতে লাগলেন ‘রক্ত। রক্ত।’ অর্থাৎ এত রক্ত, কাজেই বাঘ মরেছে। কিন্তু মহাশক্তিশালী রয়াল বেঙ্গল বাঘ গুলি খেয়ে মরার মত পড়ে থাকলেও তার তাৎক্ষণিক মৃত্যু সম্বন্ধে সব সময়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না। আমি মাচার উপরে থেকেই দুই হাত গৌল করে মুখে ধরে ডাক দিলাম, ‘আল্লা-আল্লা-আল্লা- আল্লা-আল্লাহ।’ সঙ্গে সঙ্গে বোট থেকে বনমাঝিদের সম্মিলিত ফিরতি ডাক ভেসে এল, ‘আল্লা-আল্লা-আল্লা-আল্লা-আল্লাহ্!’
ফরেস্টার সাহেবের উদ্যত বন্দুকের পিছনে বনমাঝিরা লাঠিবাড়ি নিয়ে হৈ-চৈ করতে করতে গাছতলায় এলে তখন আগে আমি এবং তারপর ফ্লায়েন সাহেব গাছ থেকে নামলেন। বাঘ নিয়ে বোটে ফিরে তার ঘন্টা দুই পরে তিনি আমাকে একটি প্রশংসাপত্র লিখে দিলেন। আর অগুনতি ছবি তোললেন।
পরদিন সকালে কৈখালী বন অফিসের সামনে মৃত বাঘের পাশে আমার ও ফ্লায়েন সাহেবের ছবি তোললেন ফরেস্টার সাহেব। দেশে ফিরে গিয়ে তিনি খুলনাতে আলীম সাহেবের বরাবর সেই ছবির কপি আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আর বাঘের চামড়া নিয়ে মহা সন্তুষ্ট হয়ে দেশে রওনা হয়ে যাবার আগে দুই শ টাকা, তাঁর তোষক-বালিশ- কম্বল এবং, বলাই বাহুল্য যে, সেই ছাগলটিও আমাকে উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন।
Leave a Reply