শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩০ পূর্বাহ্ন

নীলের বিশ্বায়ন – নীল ও ঔপনিবেশিক বাংলায় গোয়েন্দাগিরি (পর্ব-৪৪)

  • Update Time : রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪, ১০.০০ পিএম

পিয়ের পল দারাক ও ভেলাম ভান সেন্দেল

অনুবাদ : ফওজুল করিম


বাংলা পদ্ধতিতে নীল চাষ করা ছাড়া আরও একটি পদ্ধতি আছে ভারতে। এ মুহূর্তে অবশ্য ওই পদ্ধতির কদর কম, তবে সাম্প্রতিককালে ওই পদ্ধতির জনপ্রিয়তা মুহূর্তে অবশ্য পড়িতে। আমরা হিন্দুস্তানের উত্তরা পেদ্ধতির পদ্ধতির কথা বাড়ছে দ্রুতই পিদ্ধতির পরিচয় দেব সংক্ষেপেয়োজন পতিতাই এই যে বলছিলাম নীল চাষ করতে নদী বিধৌত জমির প্রয়োজন নাই। তাই, যে সব ফরাসী উপনিবেশে বঙ্গদেশের মত বাৎসরিক বন্যা হয় না সে সব জায়গার জন্য এই পদ্ধতি বিশেষভাবে উপযোগী।

যেভাবে যে কোনো গাছের মত নীলের চাষাবাদ নির্ভর করে মাটির গুণাগুণের উপর এবং যে দেশে আবাদ করা হচ্ছে সে দেশের সামগ্রিক পরিবেশের উপর। একইভাবে সবখানে নীলচাষ করা যায় না, কেননা এক এক দেশের এক এক রকম সুবিধা বা এক এক ধরনের অসুবিধা। প্রকৃতি ও বাস্তবতার এই অমোধ বিধান সপ্রমাণের জন্য ভারতের নীল চাষ একটি চমৎকার উদাহরণ। নীল চাষের এই দুরকম পদ্ধতি থেকে এই প্রভেদ চমৎকার বোঝা যাবে।

“বঙ্গদেশে নীল গাছ জন্মায় বছরে একবার। আর হিন্দুস্তানে নীল গাছের ফলন হয়, সম্বৎসর। একই দেশের দুই অঞ্চলের এই পার্থক্যের কারণ হল, বঙ্গদেশের নীলের জমি বাৎসরিক বন্যায় হয় নিমজ্জিত এবং এর ফলস্বরূপ নীলগাছ তিন চার দিন পর নিমজ্জিত থাকার পর মারা যায়। বঙ্গদেশে তাই নীল গাছে বুনতে হয় বছর বছর। হিন্দুস্তানে এরকম নয়। সেখানে একবার নীল গাছ বুনলে তা থাকে তিন চার বছর অর্থাৎ যত দিন পর্যন্ত নীল গাছের ফলনক্ষমতা থাকে। এজন্যে হিন্দুস্তানের সুবিধা হল সেখানে যথোপযুক্ত সময়ের কয়েক মাস পরে নীলের গাছ বুনলেও নিশ্চিন্ত থাকা যায় যে, নীল হবেই। কিন্তু বাংলাদেশে তা হবার নয়। বীজ বপনের সময় একেবারে নির্দিষ্ট। তারপর নীলের বীজ বুনলে তা থেকে ফলোদয় হবে না।

যদিও হিন্দুস্তানের জমি প্রতি বছর বন্যাপ্লাবিত হয় না, তবুও সে জমি নীলচাষের জন্য যথেষ্ঠ উপযুক্ত। একমাত্র পাহাড়ি জমি ছাড়া উত্তর ভারতের জমিতে বালির ভাগ একটু বেশি। সেসব জমিতে লবণের ভাগ একটু বেশী। এমনকি জমির উপরিভাগেও কিঞ্চিত লবণাক্ত। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এখান থেকে ঘোড়া সংগ্রহ করে রফতানী করে। বাংলাদেশের মাটির মত হিন্দুস্তানের মাটিতে বছরের পর বছর একাধিক্রমে নীলচাষ করা যায় না। হিন্দুস্তানের মাটি তার উপযুক্ত নয়। এর কারণ এই যে প্রচুর পরিমাণে সবল নীল গাছ এসব ক্ষেত্রে জন্মালে মাটির পুষ্টিগুণ কমে যায়। বিশেষভাবে বছরের দু’টি নীলের ফসল আর তৃতীয়বার বীজের নীলের গাছ জন্মালে মাটির গুণ নষ্ট হয়ে যায়। এজন্যে হিন্দুস্তানের নীলকররা কোনো ক্ষেত্রে তিন বছর নীল জন্মালে সে ক্ষেত ফেলে রাখে। এই ফেলে রাখার অর্থ হচ্ছে এই সময়ে আবহাওয়ার প্রভাবে ও শুধুমাত্র বিশ্রামের কারণে ক্ষেতের ফলনশক্তি আবার ফিরে আসে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024