শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৬৩)

  • Update Time : সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

গঞ্জালেস উঠে দাঁড়ালো। বললে, ‘আমি আর বসতে পারছি না, কিছু কাজ আছে, আবার দেখা হবে-‘
সন্ধ্যা পার হ’য়ে গিয়েছে। রাত্রির রঙ এখনো ঘনীভূত হয়নি; ধূসর আচ্ছন্নতার গায়ে অনুলিপ্ত ঘন নীল, আকাশ আড়াল হ’তে আর খুব বেশি দেরি নেই। খুব দূরে কোথায় রক্তাভ ধূমকুন্ডলী হলহল ক’রে ঊর্ধ্বমুখে ঠেলে উঠছে। আকাশের গায়ে ঝাঁকা একটা খেপলা জালের মতো ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ছে; ভূগর্ভের কোনো এক প্রেতায়িত ধূমাগারের খোল ফেটে গলগলিয়ে বেরিয়ে আসছে, কখনো বা একটা স্তম্ভ, আকাশকে যা নিদারুণভাবে বিদ্ধ করবে। খোকার চোখের সামনে পার্থেনন তৈরি হয়।
* কোথাও আগুন জ্বলছে-‘ খুব আচ্ছন্নভাবে বললে ইয়াসিন। ‘কোনদিকে মনে হয়?’
‘ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।’
চতুর্দিকে নীল অন্ধকার মসলিনের ফিনফিনে যবনিকার মতো নড়ছে, দুলে দুলে উঠছে। দীর্ঘ বনস্পতি আর অবগুণ্ঠিত কুঞ্জবনের ক্ষীণ নিঃশ্বাসের পালকে নিজেকে সাজিয়ে এক নির্ভার জিপসী ঘাঘরা দুলিয়ে যেন উদ্যানময় নৃত্য করে ফিরছে। পানির ছাদে ব্যাঙের লাফ, ঝিঝিপোকার ঐকতান, সামান্য কয়েকটি খুচরো শব্দেই অর্থময় হ’য়ে উঠছে সন্ধ্যা; মনোরম যবনিকা স’রে গেলেই রহস্যময় ছায়ানৃত্যের জিপসী তার কাঁধ থেকে দড়াম ক’রে কাঠের এই পাটাতনে একটি ছাগশিশু ছুড়ে দেবে, ভিতরে ভিতরে এইসব অনুভূতি সিঁদ কাটে।
‘আমি হাঁপিয়ে উঠছি মুরাদ, আর ভালো লাগছে না-‘
‘তোর তো মাঝে মাঝেই এরকম হয়। বলতে পারিস কখন তোর ভালো লাগে?’
‘ঠিক সে রকম নয়, মনে হচ্ছে দমবন্ধ হ’য়ে মারা যাবো!’
‘দূরের ওই আগুনটা দেখেই বোধহয় এরকম মনে হচ্ছে তোর। আমার এসবে কোনো প্রতিক্রিয়াই হয় না’ মুরাদ বললে, ‘যা অনিবার্য তা ঘটবেই, তোর আমার যতই বুক ঢিপঢিপ করুক!’
ইয়াসিন কিছু একটা ভেবে ঘড়ঘড়ে গলায় বললে, ‘বন্দুকের দোকানগুলো সব লুট হলো, জেল ভেঙে কয়েদীরা সব ভাগতে শুরু করছে, এখানে আগুন ওখানে আগুন, লুটপাট। মোটেই ভালো লক্ষণ না এসব।’
‘ওই তো বললাম, সব ঘটনার মুখ একই দিকে, ভালোভাবে যাচাই ক’রে দেখলেই বুঝতে পারবি।’
খোকা গা ছেড়ে দিয়ে বললে, ‘আমার একেবারেই ভালো লাগছে না, তুই খুলে বল।’
মুরাদের চোখমুখ জ্বলজ্বল ক’রে উঠলো। নিষ্পলক দৃষ্টিতে খোকা তাকে নিরিখ ক’রে চলেছে, সে বুঝতে পারে। সতর্ক হ’লেও খোকার চোখের ভাষা এই মুহূর্তে তার কাছে জটিল কুহেলিকাচ্ছন্ন মনে হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024