বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ অপরাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৩৩)

  • Update Time : বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

খোশবাগের সহিত বৈরাগ্যের যেরূপ সংমিশ্রণ, অনেক স্থলে সেরূপ দেখিতে পাওয়া যায় না। যে সিরাজের নাম বাঙ্গলার আবাল-বৃদ্ধবনিতার মুখে প্রবাদবাক্য রূপে প্রতিনিয়ত উচ্চারিত হইয়া থাকে, তাঁহার সমাধি- দর্শনে তাঁহার ভীষণ শোচনীয় পরিণামচিন্তা স্বতই হৃদয়ক্ষেত্রে আবির্ভূত হইয়া নিতান্ত বিষয়ী লোকেরও বৈরাগ্য উৎপাদন করিয়া থাকে। বিনি একসময়ে বঙ্গরাজ্যের অধীশ্বর হইয়া ক্ষমতাশালী ইংরেজ জাতিকে উন্মলিত করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, তাঁহার শেষ দুর্গতি ও বর্তমান পুলিশয়ন মনে পড়িলে, কাহার না সংসারবৈরাগ্য উপস্থিত হয়?

প্রাকৃতিক অবস্থান ও ভাবোদ্বোধনহেতু খোশবাগ একটি শ্রেষ্ঠ বৈরাগ্যভূমি বলিয়া অনুমিত হয়। এই নির্জন স্থানে লোকজনের প্রায়ই গতায়াত- নাই। সমাধিরক্ষকেরা সময়ে সময়ে উপস্থিত হইয়া থাকে। এখানে কেবল দলবদ্ধ শাখামৃগগণ ব্যতীত আর কাহারও সহিত সাক্ষাৎ হইবার সম্ভাবনা নাই।

খোশবাগের সমাধিভবন প্রধানতঃ দুইটি চত্বরে বিভক্ত। প্রথমটি প্রবেশদ্বার হইতে আরম্ভ হইয়াছে। দ্বিতীয় চত্বরটি প্রথমটির পশ্চিম দিকে। এই দ্বিতীয় চত্বরে প্রবেশ করিবার জন্যও আর একটি প্রবেশ দ্বার আছে। ভাগীরথীতীর হইতে অতি অল্প দূরেই খোশবাগের সমাধি- ভবন অবস্থিত; ইহার চতুদ্দিক প্রাচীরবেষ্টিত। প্রবেশদ্বারটি পূর্ব্বমুখ; প্রবেশদ্বারের দুই পার্শ্বে, দুইটি প্রকোষ্ঠ আছে। প্রবেশদ্বারটি এত বৃহৎ যে, তাহার মধ্য দিয়া অনায়াসে হস্তী গমনাগমন করিতে পারে। ‘প্রাচীরের উত্তরপূর্ব্ব ও দক্ষিণপূর্ব্ব কোণে দুইটি গুষ্ঠী বা প্রহরীদিগের বাসস্থান।

প্রবেশদ্বারের দক্ষিণ পার্শ্ব দিয়া তাহার শীর্ষোপরি উঠিতে পারা যায়; দ্বারের মস্তকে একটি নাতিপ্রশস্ত চাতাল; এই চাতালে দাঁড়াইয়া ভাগীরথীর তরঙ্গলীলা ও পরপারস্থিত বর্তমান মুর্শিদাবাদ নগরের সুন্দরদৃশ্য নয়নপথে পতিত হইয়া থাকে। প্রবেশদ্বার অতিক্রম করিয়া, প্রথম চত্বরে পদার্পণ করিতে হয়; চত্বরটি আম্র প্রভৃতি বৃহৎ বৃহৎ বৃক্ষ ও নানাবিধ পুষ্পবৃক্ষে পরিপূর্ণ। চত্বরের মধ্যস্থলে একটি প্রাচীরবেষ্টিত উন্মুক্ত স্থল; তাহাতে তিনটি সমাধি রক্ষিত হইয়াছে।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024