বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২০ অপরাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৮৩)

  • Update Time : সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪, ১০.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

কে দ্যাখে তবে ?

‘বেলী যে আমার ঘর অমন লণ্ডভণ্ড কারে দিয়ে গেল, তুই কিছু বলতে পারিসনি? উচিত ছিলো না বলা?’

‘ওর ভালো লেগেছে ও করেছে, আমি বাধা দেব কেন ?”

‘ইচ্ছে করলে তুই ওকে লজ্জা দিতে পারতিস।’

‘মানুষকে কাঁদাতে খুব ভালো লাগে, না?”

‘আমি বুঝি সবাইকে কাঁদাচ্ছি?’

‘তবে কে?’

‘তুই একটা মিথ্যুক।’

‘তোর মতো কেউ এমন নিষ্ঠুর নয়। আমাকে একা বাড়িতে ফেলে সারাদিন ড্যাংড্যাং ক’রে ঢাকা শহর ঘুরে বেড়ানোর সময় কোনো কিছু মনে থাকে না তোর। যা ভয় লাগে! এই গন্ডগোলের সময় এতবড় বাড়িতে একা থাকা যায়, না?’

‘ঠিক আছে, কাল থেকে দেখিস, পায়ে এক্কেবারে তালাচাবি। যদি কোথাও যাই তোকেও নিয়ে যাবো পোঁটলা বেঁধে, যাবি তো?”

‘সকাল পর্যন্ত মনে থাকলে হয়।’

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর হঠাৎ খোকা বললে, ‘আচ্ছা এমন যদি হ’তো, আমরা চিরকাল ঠিক এখনকার মতোই ছোট থেকে গেলাম, কিহ’তো তাহলে?

‘ভালোই হ’তো–‘

‘তোর ইচ্ছে করে?’

‘করেই তো!’

‘সত্যি বলছিস?’

‘না মিথ্যে বলছি, হ’লো তো!’

‘আচ্ছা ধর, আমি যদি হঠাৎ ম’রে যাই তোর কি রকম লাগবে, খুব কাঁদবি না? ভেবে দ্যাখ ঝগড়া করার মতো তোর আর কেউ নেই তখন–‘

আমার খুব মজা হবে ‘বুঝলাম–‘

ও স্ববিন আমার কোন ‘ ‘মজাই তো! ছাদে বেড়াবো, ছেলেদের দিকে তাকিয়ে হাসবো, প্রেমপত্র লিখবো, বিছানা এলোমেলো ক’রে দেবো, যা ইচ্ছে তাই ক’রে বেড়াবো–

‘ইচ্ছে হ’লে এখনো তা করতে পারিস?’

‘পারি-ই তো! আমি কি তোর ভয় করি?’

‘আমি বুঝি তাই বলেছি?’

‘ওনার ভয়ে আমার ঘুম হচ্ছে না কিনা–‘

‘রেগে যাচ্ছিস কেন, তোকে নিয়ে এক মুশকিলই হয়েছে।’

‘নিজে সাধুপুরুষ–‘

‘এই বুড়ি, ও কি রে হঠাৎ ঝুঁকে প’ড়ে রঞ্জুর একটা হাত ধ’রে খোকা বললে, ‘চোখে পানি কেন, কাঁদছিস বুঝি? এই পাগলি কাঁদছিস কেন, কান্নার কি আছে–‘

কোনো উত্তর দিলো না রঞ্জু, কেবল একটু জোরে সে ফুপিয়ে উঠলো। ওর হাত ধ’রে ঝাঁকুনি দিয়ে খোকা বললে, ‘কি তাজ্জব কথা, হ’লো কি তোর? কথায় কথায় ভেঁপু–

‘মরার কথা তোলার সময় খেয়াল থাকে না!’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024