সারাক্ষণ ডেস্ক
এই মূহুর্তে বাংলাদেশের ১২টি জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যন্ত। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৮ জনের মুত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ইতোমধ্যে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিভিন্ন সাহায্য সামগ্রী নিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে শিক্ষার্থী ছাত্র- শিক্ষকসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ এগিয়ে এসেছেন। অন্তরবর্তীকালীন সরকারও পানি বন্দী মানুষকে উদ্ধার এবং জরুরি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
কেন্দ্রিয়ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, টিএসসিসহ বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র সমাজ এবং অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকে সাহায্য সামগ্রী সংগ্রহ করে বন্যার্তদের জন্য পাঠানো হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে এ ধরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে আমরা খবর পাচ্ছি। এই সকল উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। বৈষম্যবিারোধী ছাত্র সমাজের আহবানেটি এস সি কেন্দ্রে নগদ অর্থ সহায়তা ও সাহায্য সামগ্রীনিয়ে আসা অসংখ্য মানুষের ভিড় দুর্যোগ মূহুর্তে আমাদের দেশের সচেতন ও সাধারণ মানুষ যে কতটা সংবেদনশীল এবং অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে আন্তরিকভাবে আগ্রহী ও উদগ্রীব এটা তারই সাক্ষ্য বহন করে। এ ধরণের উৎসাহব্যাঞ্জক খবর ঢাকার বাইরের অনেক জায়গা থেকেও পাওয়া যাচ্ছে।
এই ভয়াবহ বন্যাসৃষ্ট দুর্যোগ মূহুর্ত নাগরিক সমাজের, বিশেষত বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও নাগরিক সংস্থাগুলিকে আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন এবং বন্যার্তদের পাশে সমন্বিতভাবে দাঁড়াতে বিশেষভাবে আহবান জানাচ্ছি এবং সেইসাথে নিম্নোক্ত বিষয়গুলির প্রতি দৃষ্টি প্রদান করার বিশেষভাবে অনুরোধ জানাই।
১. যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়াতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা এবং শুকনা খাবার, পানীয় জল, পোষাক, জরুরী ঔষধ, নগদ অর্থ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রী দ্রুত সংগ্রহ করে নিকটস্থ শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ত্রাণ কেন্দ্রে পৌছানো বানিজেদের কোন সমন্বিত কার্যক্রম থাকলে সেখানে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। এছাড়াও প্রয়োজনে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা এবং তাদের সহায়তা গ্রহণ করা।
২. বন্যাকবলিত জেলাগুলির যোগাযোগ ব্যবস্থা শুধু বিপর্যন্ত হয়নি, পরিবহন খরচও নানা কারণে অত্যাধিক বেড়ে গেছে। সে কারণে আলাদা আলাদাভাবে ত্রাণ সামগ্রী বন্যার্তদের কাছে নিয়ে যাবার বদলে সমন্বিতভাবে ঐ সব সামগ্রী পৌছানোর ব্যবস্থা করলে পরিবহন ব্যয় সাশ্রয় হবে। এবং সহায়তার পরিমানও বেশি দেয়া যাবে।
৩. সহায়তার দ্রব্য-সামগ্রী বিতরণের সময় দূরবর্তী এবং দুর্গম এলাকার পানি-বন্দী মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৪. সামাজিকভাবেযারা বৈষম্যের শিকার সেই সব সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক মানুষ যেমন গ্রামীন নারী, শিশু, অসুস্থ প্রবীণ নারী-পুরুষ, প্রতিবন্ধী, দলিত, আদিবাসী ও তৃতীয় লিঙ্গের কোন মানুষ থাকলে তাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
৫. বন্যা দুর্যোগের সময় অনেক ধরণের অপরাধ সংঘটিত হতে পারে, মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাও অতীতে ঘটেছে। নারীদের যৌন হয়রানির বিষয়টিও এ সময় ঘটতে পারে বলে আমরা অভিজ্ঞতা থেকে জানি। এই সব বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা এবং কোন ঘটনার তথ্য পেলে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে যা করণীয় তা দ্রুত করার চেষ্টা করা। এ ব্যাপারে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হচ্ছে।
৬. জরুরী ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের সময় বন্যার্তদের জন্য মধ্য-মেয়াদী ও দীর্ঘ-মেয়াদী চাহিদা বা প্রয়োজনের তথ্য বা তালিকাও প্রাথমিকভাবে করে ফেলা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সামগ্রী, আশ্রয়হীনদের অস্থায়ী বা স্থায়ী আশ্রয়, অসুস্থদের চিকিৎসা ইত্যাদির ব্যাপারে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই কাজটিও সমন্বিতভাবে করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
৭. কোন কোন বন্যা পীড়িত এলাকায় সহায়তার কাজে নয়, এক শ্রেণীর মানুষ অপ্রয়োজনীয় ভিড় বাড়াচ্ছেন এবং বন্যার্তদের বিরক্তি ও হয়রানির কারণ হয়ে উঠছেন বলে অভিযোগ আসছে। এই সকল দর্শণার্থীদের বন্যার্তদের এলাকায় যাওয়া রোধ কিংবা নিরুৎসাহিত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য সামাজিক সংগঠন ও শিক্ষার্থী সমাজের প্রতিও আমরা বিশেষ আহবান রাখছি।
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন-
১. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
২. খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি
৩. অ্যাড. জেড আই খান পান্না, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
৪. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৫. রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট
৬. তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৭. এড. সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
৮. ড. পারভীন হাসান, ভাইস চ্যান্সেলর, সেন্টাল উইম্যান ইউনিভার্সিটি
৯. এড. সালমা আলী, নির্বাহী পরিচালক, বি এন ডব্লিউ এল এ
১০. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এসোসিয়েশ ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি)
১১. জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ
১২. ফিরদৌস আজিম, অধ্যাপক, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়
১৩. কাজল দেবনাথ, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
১৪ . প্রফেসর নায়লা জে. খান, ডিরেক্টর, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন
১৫. মো: নূর খান, মানবাধিকার কর্মী
১৬. জোবায়দা নাসরিন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৭. এড. সাইদুর রহমান, প্রধান নির্বাহী, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন
১৮. মাইদুল ইসলাম, পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, পেন্সেলভিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
১৯. রোজিনা বেগম, মাহিডন বিশ্ববিদ্যালয়, থাইল্যান্ড
২০. সাঈদা গুলরুখ, সাংবাদিক
২১. অ্যাড, তবারক হোসেইন, সহ-সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২২. অ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২৩. দীপায়ন খীসা, কেন্দ্রিয় সদস্য, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
২৪. হানা শামস আহমেদ, আদিবাসী অধিকার কর্মী
২৫. ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২৬. ব্যারিস্টার শাহাদাত আলম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২৭. মুক্তাশ্রী চাকমা, কোর গ্রুপ মেম্বার, সাঙ্গাত
Leave a Reply