শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৫৯)

  • Update Time : শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

অতঃপর ইংরেজ ও মীর কাশেমের সহিত শাহ আলমের সন্ধি স্থাপিত হইলে, মীর কাশেম বিহারে অবস্থান করিবার ইচ্ছা করিয়া –মুঙ্গের দুর্গ সুদৃঢ় করেন ও তথায় অবস্থিতি করিতে থাকেন। এই সময়ে বাণিজ্যঘটিত শুল্কব্যাপার লইয়া ক্রমে ইংরেজদিগের সহিত মীর কাশেমের বিবাদ বাধিয়া উঠে। প্রথমতঃ ইংরেজদিগের মধ্যে দুইটি দল হইয়াছিল। এক দল মীর কাশেমের পক্ষপাতী; এই দলের মধ্যে গবর্ণর ভান্সিটার্ট, ওয়ারেণ হেষ্টিংস প্রভৃতি প্রধান। অন্য দল নবাবের ঘোরতর বিপক্ষ; এলিস, আমিয়ট প্রভৃতি কাউন্সিলের সভ্যগণ সেই দলের নেতা। এলিস পাটনা কুঠীর অধ্যক্ষ নিযুক্ত হইয়া, মীর কাশেমকে অপদস্থ করিতে চেষ্টা করায়, তাঁহার প্রতি নবাবের অত্যন্ত ক্রোধ উপস্থিত হয়।

এই ক্রোধের জন্য অবশেষে আমিয়ট ও এলিস দুই জনকেই প্রাণ বিসর্জন দিতে হইয়াছিল। কিন্তু অবশেষে মীর কাশেমও ইংরেজ-কোপানলে দগ্ধ হইয়া বঙ্গরাজ্য হইতে পলায়ন করিতে বাধ্য হন। ইংরেজেরা আপনাদিগের বাণিজ্যের সুবিধার জন্য কলিকাতা কাউন্সিল হইতে এইরূপ এক নিয়ম জারি করেন যে, কাউন্সিলের অনুমতিপত্র লইয়া, যে কোন জাতি বিনা শুল্কে সমস্ত পণ্যদ্রব্যের আমদানি- রপ্তানি করিতে পারিবে। কিন্তু অন্যান্য লোকে বাণিজ্য দ্রব্যের আমদানি রপ্তানি করিতে হইলে, তাহাদিগকে অধিকপরিমাণে শুল্ক প্রদান করিতে হইবে।

এইরূপ নিয়ম প্রচারিত হওয়ায়, যে সমস্ত নৌকায় কেবল ব্রিটিশ নিশান ও ইংরেজ সিপাহীর ন্যায় পরিচ্ছদধারী আরোহিগণ থাকিত, তাহারাও নবাবের কর্মচারীদিগের অনুসন্ধান হইতে নিষ্কৃতি পাইত। এই কারণে কেবল কোম্পানী নহে, কোম্পানীর কর্মচারিগণের মধ্যে যাঁহাদের গুপ্তব্যবসায় প্রচলিত ছিল, তাঁহারা পর্যন্ত যথেষ্ট অর্থ সঞ্চয় করিতে লাগিলেন। এই রূপ অবাধবাণিজ্যে ক্রমে ক্রমে সমস্ত ব্যবসায় তাঁহাদিগের একচেটিয়া হইয়া উঠিল। দেশীয় ব্যবসায়িগণ ক্রমশঃ অর্থহীন হওয়ায়, তাহাদের ধ্বংসমুখে পতিত হইবার উপক্রম হইল; নবাবের রাজস্বেরও যথেষ্ট ক্ষতি হইতে লাগিল। সাধারণ বণিক্সণ ব্রিটিশ নিশান ও ইংরেজ সিপাহীর পরিচ্ছদ ধারণ করিয়া অবাধে বাণিজ্যকাৰ্য্য চালাইতে লাগিল।

যে যে স্থানে নবাবের কর্মচারিগণ অনুমতিপত্রের অনুসন্ধানের জন্য চেষ্টা করিয়াছিল, তত্তৎস্থানে নিকটবর্তী ই’রেজকুঠীর অধ্যক্ষ কর্তৃক ধৃত হইয়া তাহাদিগকে যৎপরোনাস্তি লাঞ্ছনা ও অবমাননা ভোগ করিতে হইয়াছিল। এইরূপে রাজস্বের ক্ষতি হওয়ায়, মীর কাশেম কলিকাতা কাউন্সিলে বারংবার লিখিয়া পাঠাইলেন; কিন্তু কলিকাতা কাউন্সিল তাহাতে কর্ণপাত করিলেন না। গবর্ণর ভান্সিটার্ট কাউন্সিলের সভ্যদিগকে এ বিষয়ে বিবেচনা করিতে বলিয়াছিলেন; কিন্তু তাঁহার অনুরোধও গ্রাহ্য হয় নাই। অবশেষে কাউন্সিলের সভ্যগণের পরামর্শানুসারে ভান্সিটার্ট নবাবের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া সমস্ত গোলযোগের মীমাংসার জন্য মুঙ্গের যাত্রা করেন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024