শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৮ অপরাহ্ন

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ২৩ তম কিস্তি )

  • Update Time : রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪, ১২.০০ পিএম
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।


দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়


মনোরম কুঞ্চন, তার স্বপ্নাতুর চোখে কালো ছায়ার গাঢ় অতল রহস্য মিথ্যা নয়। তার ওষ্ঠে তাই শুধু স্পর্শই নয়, জ্যোৎস্নাও আছে। ওর মুখের প্রত্যেকটি অণুর সঙ্গে পরিচিত হবার ইচ্ছা আর তাই অর্থহীন নয়। এমন একটি মুখকে তিল তিল করে মনের মধ্যে সঞ্চয় করার আর অপরাধ নেই, সময়ের অপচয় নেই।

এতকাল হেরম্ব এক মুহূর্ত বিশ্লেষণ ছাড়া থাকতে পারেনি। সূক্ষ্ম হতে সুক্ষ্মতর হয়ে এলে এবার তার বিশ্লেষণ-লব্ধ সত্য সুক্ষ্মতার সীমায় পৌঁছেছে। আর তার বুঝবার কিছুই ক্ষমতা নেই। কিন্তু হেরম্বের আপসোস তা নয়। এই অক্ষমতার পরিচয় তার জানা: এই তার চরম জ্ঞান। সে বিজ্ঞান মানে, আজ বিজ্ঞানীর মন নিয়ে কাব্যকে মানল। চোখ যখন আছে, চোখ দেখুক। দেহ যখন আছে, দেহে রোমাঞ্চ হোক। হেরম্ব গ্রাহ্য করে না। অনাবৃত আনন্দের দেহ থেকে জ্যোৎস্নার আবরণ আজ কিসে ঘোচাতে পারবে? লক্ষ আলিঙ্গনও নয়, কোটি চুম্বনও নয়।

‘আছেন বললে ঈশ্বর অস্তিত্ব পান এবং সে অস্তিত্ব মিথ্যা নয়, কারণ ‘আছেন’ বলাটাই স্ব-সম্পূর্ণ সত্য, আর কোন প্রমাণসাপেক্ষ সত্যের উপর নির্ভরশীল নয়। হেরম্বের প্রেমও শুধু আছে বলেই সত্য। কল্পনার সীমা আছে বলে নয়, যে অনুভূতির স্রোত তার জীবন তার ঐতিহাসিকতায় নেই বলে নয়, নিজের সমগ্র সচেতন আমিত্ব দিয়ে আয়ত্ত করতে পারছে না বলে নয়। প্রেম আছে বলে প্রেম আছে। কাম-পঙ্কের পদ্ম এর উপমা নয়। মানুষের মধ্যে যতখানি মানুষের নাগালের বাইরে, প্রেম তারই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

প্রেমকে হেরম্ব অনুভব করছে না, উপলব্ধি করছে না, চিন্তা করছে না- সে প্রেম করছে। এ তার নব ইন্দ্রিয়ের নবলব্ধ ধর্ম।

আনন্দের মুখে দৃষ্টি নিবন্ধ রেখে, দু’হাতের তালুতে পৃথিবীর সবুজ নমনীয় প্রাণবাণ তৃণের স্পর্শ অনুভব করে হেরম্ব খুশী হয়ে উঠল। প্রশান্ত চিত্তে সে ভাবল, পূর্ণিমার নাচ শেষ করে অমাবস্যায় ফিরে না গিয়ে আনন্দ ভালই করেছে।

 

 

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ২২ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ২২ তম কিস্তি )

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024