শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৮)

  • Update Time : রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়   

                                                                  রোশনীবাগ

                                                                     ফর্হাবাগ

মুর্শিদাবাদের বর্তমান নবাব-প্রাসাদের সম্মুখে, ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে একটি সুন্দর ছায়াময় ও শান্তিময় উদ্যান দৃষ্ট হইয়া থাকে; এই উদ্যানটির নাম রোশনীবাগ। রোশনীবাগ ডাহাপাড়া গ্রামে অবস্থিত। উদ্যানটি আকারে বৃহৎ না হইলেও ইহার রমণীয়তা সর্ব্বজন-প্রশংসনীয়। এই উদ্যানের সম্মুখে পূর্ব্বে নবাবদিগের আলোকোৎসব হইত বলিয়া সাধারণতঃ সেই স্থানকে রোশনীবাগ বলে।

আম্র প্রভৃতি বৃক্ষরাজি আপনাদিগের শ্যামপত্রপূর্ণ শাখা বিস্তার করিয়া পরস্পর পরস্পরকে আলিঙ্গন করিয়া থাকায়, রোশনীবাগের অভ্যন্তরে সূর্যরশ্মি প্রবেশ করিতে পারে না; এই জন্য স্থানটিকে অত্যন্ত ছায়াময় করিয়া রাখি- য়াছে। নিদাঘের মধ্যাহ্ন-সময়ে এই রমণীয় উদ্যানের ছায়াতলে উপস্থিত হইলে, শরীর স্নিগ্ধ হইয়া যায়; এবং ধীরে ধীরে মলয়সমীরণ প্রবাহিত হইয়া শরীরকে শীতল করিয়া তুলে। সেই সময়ে উদ্যানের চারি পাশ হইতে নানাবিধ সুকণ্ঠ বিহঙ্গের মধুরধ্বনি কর্ণকুহরে অমৃত ঢালিয়া দেয়। আবার উদ্যানের স্থানে স্থানে নানাবিধ প্রস্ফুটিত পুষ্প চারিদিকে সুগন্ধ বিস্তার করিয়া মনঃপ্রাণ প্রফুল্ল করিতে থাকে।

এই রমণীয় উদ্যানের ছায়াতলে মুর্শিদাবাদের দ্বিতীয় নবাব সুজা- উদ্দীন চিরসমাহিত আছেন। সুজা উদ্দীন মুর্শিদকুলী জাফর খাঁর জামাতা। সুজা পূর্ব্বে উড়িষ্যার শাসনকর্তৃত্বপদে নিযুক্ত ছিলেন, তাঁহার উড়িষ্যার অবস্থানকালে, আলিবর্দী খাঁ ও তাঁহার জ্যেষ্ঠভ্রাতা হাজী আহাম্মদ সুজার অধীনতায় কার্য্যে নিযুক্ত হন; পরে তাঁহার নিজামতী সময়ে তাঁহাদিগের আরও উন্নতি হয়।

সুজা উদ্দীনের তুল্য ন্যায়পর নবাব অল্পই দৃষ্ট হইয়া থাকে। তাঁহার ন্যায় পরোপকারিতা অমা- রিক ব্যবহার ও ন্যায়ানুমোদিত শাসন মুর্শিদাবাদের কোন নবাবে দেখিতে পাওয়া যায় না। মুর্শিদাবাদের নবাব দিগের মধ্যে তিনিই প্রথমে হিন্দু মুসলমান উভয় জাতিকে সমভাবে প্রতিপালন করিতে আরম্ভ করেন। মুতাক্ষরীণকার, নওশেরোয়াঁর রাজত্বের সহিত তাঁহার রাজত্বের তুলনা করিয়াছেন।

মুর্শিদকুলী খাঁ যে সমস্ত জমীদারদিগকে বন্দী অবস্থায় রাখিয়া অশেষ কষ্ট প্রদান করিয়াছিলেন, সুজা উদ্দীন তাঁহাদিগকে মুক্ত করিয়া এবং মুর্শিদকুলীর হিন্দুদিগের প্রতি অত্যাচারী কৰ্ম্ম- চারীদিগের প্রাণদণ্ডের আদেশ দিয়া সর্ব্বাপেক্ষা ন্যায়পরতার দৃষ্টান্ত দেখাইয়া গিয়াছেন। তাঁহার শাসনে হিন্দু-মুসলমান উভয়বিধ প্রজাই প্রীত ছিল।

 

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৭)

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৭)

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024