শ্রী নিখিলনাথ রায়
আলিবর্দী সসৈন্তে মুর্শিদাবাদাভিমুখে অগ্রসর হইয়া নিজ যাত্রার কথা জগৎশেঠকে’ ও নবাবকে লিখিয়া পাঠান। নবাবকে চতুরতাপূর্ব্বক তিনি যে পত্র লিখিয়াছিলেন, তাহাও জগৎ- শেঠের নিকট প্রথমে প্রেরিত হয়। জগৎশেঠ পরে তাহা নবাবকে প্রদান করেন। গিরিয়ার প্রান্তরে সরফরাজের সহিত আলিবন্দীর ভীষণ যুদ্ধ উপস্থিত হয়। সায়র মুতাক্ষরীনে লিখিত আছে যে, নবাবপক্ষকর্তৃক জগৎশেঠ আলিবদী খাঁর সৈন্যাধ্যক্ষদিগের নিকট টিপ প্রেরণ করিতে নিযুক্ত হন। টিপপ্রেরণের এইরূপ উদ্দেশ্য ছিল যে, আলিবর্দীর কর্ম- চারিগণ অর্থ পাইয়া তাঁহাকে ধৃত করিয়া সরফরাজের নিকট উপস্থিত করিবে। কিন্তু মুতাক্ষরীনের অনুবাদক বলেন, আলিবর্দী খাঁ নিজেই ঐরূপ কৌশল করিয়া স্বীয় বন্ধু জগৎশেঠের দ্বারা সরফরাজের কর্মচারি- গণকে বশীভূত করিতে চেষ্টা করিলেন এবং ইহাই সাধারণ লোকে অবগত ছিল।
অনুবাদকের সময় সরফরাজের এক জন কর্মচারী জীবিত ছিল; সে এইরূপ প্রকাশ করিয়াছিল যে তাহাকে ৪ হাজার টাকার একখানি ‘টিপ দেওয়া হয়। তাহা পাইয়া সে বারুদের পরিবর্তে ধূলামাটি পূর্ণ করিয়া তোপ ছাড়িতে ইচ্ছা করিয়াছিল। অনু- বাদক বলেন, অনেকে বাস্তবিকই ঐরূপ ধূলামাটি পূর্ণ করিয়া কামান ছাড়িয়াছিল।
সিংহাসনে অধিরূঢ় হন। কিন্তু ইহাতে জগৎশেঠ প্রভৃতির প্রশংসা করা যায় না। ফতেচাঁদের ন্যায় এক গুন বার্দ্ধক্যদশায় উপনীত লোকের বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের দ্বারা নিজ অবমাননার প্রতিশোধ লইতে ইচ্ছা করা কদাচ সঙ্গত বলিয়া বোধ হয় না। বিশেষতঃ শেঠ- বংশীয়দের প্রবাদানুসারে ব স্তবিক যদি মুর্শিদকুলীর গচ্ছিত অর্থ প্রত্য- গণ না করায়, সরফরাজের সহিত তাঁহার মনোবিবাদ ঘটিয়া থাকে, তাহা হইলে, তাঁহার ব্যবহার যে নিতান্ত নিন্দনীয়, সে বিষয়ে কিছুমাত্র সন্দেহ থাকিতে পারে না।
যদি সরফরাজের প্রতি তাঁহার বিশিষ্টরূপ বিরক্তি জন্মিয়া থাকিত, তিনি অনায়াসে তাহার অন্য উপায় করিতে পারিতেন। বাদশাহ-দরবারে তাঁহাদের যেরূপ প্রতিপত্তি ছিল, তাহ্লাতে তাঁহারা নবাবের অত্যাচার বাদশাহের কর্ণগোচর করিয়া, প্রকাশ্যভাবে তাঁহার পদচ্যুতি ঘটাইতে পারিতেন ফলতঃ ফতেচাঁদের ঈদৃশ ব্যবহার আমরা কোন রূপে সমর্থন করিতে পারি না।
Leave a Reply