শ্রী নিখিলনাথ রায়
বালিকার পরিণর প্রদান করিয়াছিলেন। তাহার গাঁয় রূপবতী করা তৎকালে এতদঞ্চলে দূর হইত না। বালিক্ষাবয়সেও তাহার রূপের ছ’। *জ্যোৎদালহরীর ক্ষায় ক্রীড়া করিয়া বেড়াইত। তাহার সৌন্দর্য্যের কথা সরফরাজের কর্ণগোচর হওয়ার তিনি কৌতূহল-পরবশ হইয়া সেই বালিকাকে দেখিবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। নবাব প্রথমতঃ জগৎশেঠকে তজ্জন্ত অনুরোধ করিয়া পাঠান। নবাবের অনুরোধ শুনিয়া, সেই অশীতিপর বৃদ্ধের মস্তকে যেন অশনিপাত হইল। তিনি নবাবকে বিরত হইতে বিশেষ করিয়া অনুরোধ করিলেন।
এরূপ করিলে, তাঁহার বংশে কলঙ্ক ঘাঁটবে ও তাঁহাকে জাত্যংশে হেয় হইতে হইবে, একথাও বুঝাইয়া বলিলেন। নবাব তাঁহার কথা শুনিয়া প্রথমে বিরত হইয়াছিলেন। কিন্তু অবশেষে অদমনীয় কৌতূহলের বশবর্তী হইয়া, লোক পাঠাইয়। জগৎশেঠের বাটী অবরোধপূর্ব্বক সেই বালিকাকে নিজ বাটীতে আনয়ন করেন, এবং দর্শনপিপাসা মিটাইয়া তাহাকে পুনঃপ্রেরণ করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহাকে স্পর্শপর্যান্ত করেন নাই।
জগৎশেঠের গৃহলক্ষ্মীকে নিজ ভবনে লইয়া যাওয়ায়, সরফরাজের সিংহাসন কম্পিত হইয়া উঠে বলিয়া ইংরেজ ঐতিহাসিক- গণ নির্দেশ করিয়া থাকেন। তাঁহারা আবার এরূপ ভাবও প্রকাশ করেন যে, সরফরাজ ইন্দ্রিয়লালসা পরিতৃপ্তির আশায় তাহাকে নিজ অধিকারস্থ করিবার ইচ্ছা করিয়াছিলেন। আমরা কিন্তু তাঁহা-দের নিজের লিখিত বর্ণনানুসারে একটি কিঞ্চিঙ্গ্যূন একাদশবর্ষীয়া বালিকার প্রতি কু-অভিপ্রায় প্রকাশের কোন অর্থ বুঝিতে পারি না।
যে দেশে বিংশতির অধিকবয়স্কা রমণীও বালিকাপদবাচ্য হইয়া থাকে, সে দেশের ঐতিহাসিকগণ একটি দশবর্ষীয়া বালিকার প্রতি জনৈক অধিকবয়স্ক পুরুষের কু অভিপ্রায়ের কথা কেমন করিয়া ব্যক্ত করিলেন, তাহা তাঁহারাই বলিতে পারেন। তাহার পর, তাঁহাদের লিখিত ঘটনা সায়র মুতাক্ষরীন বা রিয়াজুস্ সালাতীন প্রভৃতি দেশীয় কোন গ্রন্থেই ‘দৃষ্ট হয় না। সুতরাং এ বিষয়ের সত্যাসত্য যে সবিশেষ অনুধাবনীয়, তদ্বিষয়ে সন্দেহ নাই। ইংরেজ ঐতিহাসিকেরা যে স্থানে দেশীয় শাসন- কর্তৃগণের কোনরূপ ছিদ্র পাইয়াছেন, সেই খানে তাহা অতিরঞ্জিত করিতে ত্রুটি করেন নাই।
যাহা হউক, সরফরাজকে পদচ্যুত করিবার জন্য এক ষড়যন্ত্রের আয়ো- জন হইল। হাজী আহম্মদ, আলমচাঁদ ও জগৎশেঠ সকলেই অবমানিত হওয়ায়, নিজ নিজ অবমাননার প্রতিশোধার্থ পাটনা হইতে আলিবর্দী খাকে আহ্বান করিলেন।
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৭)
Leave a Reply