শ্রী নিখিলনাথ রায়
আলিবর্দী খাঁ সিংহাসনে অরোহণের পর, জগৎশেঠ ফতেচাঁদকে বিশিউরূপ সম্মান প্রদর্শন করিয়া সমস্ত কার্য্যেই তাঁহার পরামর্শ গ্রহণ করিতেন। নবাব আলিবন্দী খাঁর রাজত্বকালে মহারাষ্ট্রীয়গণ বারংবার বাঙ্গলা আক্রমণ করেন। তাঁহারা বাঙ্গলার ভিন্ন ভিন্ন স্থান লুণ্ঠন করিয়া গৃহে ও শস্যস্তূপে অগ্নিপ্রদানপূর্ব্বক সাধারণ প্রজাবর্গের যথেষ্ট ক্ষতি করিয়াছিলেন। ভাগীরথীর পশ্চিম তীরবর্তী কাটোয়া প্রভৃতি প্রদেশ অনেক দিন পর্য্যন্ত তাঁহাদের অধিকারস্থ থাকে।
১৭৪২ খৃঃ অব্দে নবাব উড়িষ্যা হইতে মুর্শিদাবাদে প্রত্যাগমনকালে যে সময়ে ভাস্কর পণ্ডিতের অধীন মহারাষ্ট্রীয়গণকর্তৃক আক্রান্ত হইয়া কাটোয়ায় অবস্থিতি করিতে- ছিলেন, সেই সময়ে সুজাউদ্দীনের জামাতা, উড়িষ্যার ভূতপূর্ব্ব শাসন- কর্তা দ্বিতীয় মুর্শিদকুলীর জনৈক কর্মচারী মীর হাবীব মহারাষ্ট্রীয়দিগেরসহিত যোগ দিয়া, এক দল মহারাষ্ট্রীয় সৈন্যের সাহায্যে মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করে। তৎকালে মুর্শিদাবাদ প্রাচীরাদির দ্বারা বেষ্টিত না থাকায়, তাহাদের প্রবেশের বিলক্ষণ সুবিধা ঘটিয়াছিল। কেহই তাহাদিগকে বাধা প্রদান করিতে সাহসী হয় নাই।
মীর হাবীব মুর্শিদা- বাদের অন্যান্য স্থানের লুণ্ঠনের সঙ্গে শেঠদিগের গদীও লুণ্ঠন করে এবং পূর্ণ দুই কোটি আর্কট মুদ্রা ও অন্যান্য অনেক দ্রব্য লইয়া যায়। কিন্তু ইহাতে শেঠদিগের কোনই ক্ষতি হয় নাই। মুতাক্ষরীনকার বলেন যে, সেই দুই কোটি মুদ্রা তাঁহাদের নিকট দুই গুচ্ছ তৃণের সমান ছিল। ইহার পরও তাঁহারা, সরকারে পূর্ব্বের ন্যায়ই প্রতিবারে এক কোটি টাকার দর্শনী প্রদান করিতেন।।
১৭৪৪ খৃঃ অব্দে ফতেটাদের মৃত্যু হয়। ফতেচাদের আনন্দচাঁদ, দয়াচার ও মহাচাদ নামে তিন পুত্র জন্মে। আনন্দচার ও দয়াচাদ, পিতার জীবদ্দশাতেই পরলোক গমন করার, পৌত্র মহাতপচাঁদ ও স্বরূপচাঁদকে ফতেচাঁদ উত্তরাধিকারী মনোনীত করিয়া যান। মহাতপচাঁদ আনন্দ চাঁদের ও স্বরূপচাঁদ দয়াচাঁদের পুত্র। বাদশাহের নিকট হইতে মহাতপচাদ “জগৎশেঠ” ও স্বরূপচাঁদ “মহারাজ” উপাধি লাভ করেন।
Leave a Reply