শ্রী নিখিলনাথ রায়
এই সময়ে শেঠদিগের উন্নতি চরমসীমার উপনীত হয়। তাঁহাদের ঐশ্বর্য্যের সীমা ছিল না। শেঠদিগের গদীতে অনবরত ১০ কোট টাকার কারবার চলিত। জমীদার মহাজন ও অন্তার ব্যবসায়ী সকলেই অর্থের জন্ম শেঠদিগের নিকট উপস্থিত হইতেন। ইংরেজ, ফরাসী প্রভৃতি বৈদে- শিক বণিকগণ তাঁহাদের নিকট হইতে টাকা কর্জ লইতেন।
ফতেচাদের মৃত্যুর পর নবাব আলিবর্দী খাঁ জগৎশেঠ মহাতপচাঁদকে যথেষ্ট সমাদর করিতেন, এবং ফতেচাদের চায় তাঁহারাও পরামর্শ গ্রহণ করিতে ত্রুটি করিতেন না। এই সময় হইতে শেঠদিগের সহিত ইংরেজদের সম্বন্ধ প্রগাঢ় হইতে আরম্ভ হয়। ১৭৪৯ খৃঃ অব্দে ইংরেজগণ কতকগুলি আর্মেনীয় বণিকের প্রতি অযথা অত্যাচার করায়, নবাব ইংরেজদিগকে দমন করার জন্য কতকগুলি সৈন্য প্রেরণ করিয়াছিলেন। তাহারা কাশীমবাজার কুঠী অবরোধ করিলে, ইংরেজেরা নবাবের নিকট ক্ষমা-প্রার্থনা করেন।
নবাব তাঁহাদিগের ১২ লক্ষ টাকা জরিমানা করায় ইংরেজেরা শেঠদিগের নিকট হইতে উক্ত টাকা লইয়া নবাবের ক্রোধ শান্ত করিতে বাধ্য হন। ডিরেক্টরগণ অনেক দিন হইতে কলিকাতার একটি স্বতন্ত্র টাকশাল নির্মাণের জন্য তথাকার অধ্যক্ষকে বারংবার লিখিয়া পাঠাইতেছিলেন। উক্ত টাকশালস্থাপনের জন্ত যত টাকা ব্যয়ের আবশ্যক, তাহা প্রদান করিতে তাঁহারা সম্মত ছিলেন। ১৭৫৩ খৃঃ অব্দে কলিকাতার তদানীন্তন অধ্যক্ষ তাহার এইরূপ উত্তর দেন যে, “এ কাৰ্য্য আত গোপনভাবে সম্পন্ন করাই কর্তব্য। নবাবের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করিলে, তিনি এ বিষয়ে জগৎশেঠ দিগের মতামত জিজ্ঞাসা করিবেন। আমরা যতই কেন অর্থব্যয় করি না, জগৎশেঠ কিছুতেই সম্মতি প্রদান করিবেন না।
মুদ্রানির্মাণের জন্য যে সমস্ত সোণারূপার আমদানী হয়, তৎসমস্তই জগৎশেঠগণ একাকী ক্রয় করিয়া থাকেন এবং তজ্জন্য তাঁহাদের যথেষ্ট লাভও হয়। এ প্রস্তাবে তাঁহাদের লাভের ব্যত্যয় ঘটিবার সম্ভাবনা; সুতরাং তাঁহারা স্বীকৃত হইবেন বলিয়া বোধ হয় না। তবে তাঁহাদের অজ্ঞাতসারে যদি দিল্লীর দরবার হইতে অনুমতি লওয়া যায়, তাহা হইলে কিয়ৎ- পরিমাণে কার্যসিদ্ধির সম্ভাবনা আছে। ইহাতে দুই লক্ষেরও অধিক অর্থব্যয় হইতে পারে। কিন্তু জগৎশেঠগণ জানিতে পারিলে সেখানেও বাধা দিতে পারেন। কারণ, সম্রাটদরবারেও তাঁহাদের ক্ষমতা বড় কম নহে।”। নবাব ও বাদসাহ উভয়ের দরবারে শেঠদিগের প্রাধান্য থাকায় তাঁহাদের ক্ষমতা প্রতিহত করা অত্যন্ত দুষ্কর হইত।
Leave a Reply