২৩ শে নবেম্বর ফল্কা হইতে মেজর কিল্- প্যাট্রিক পুনর্ব্বার জগৎশেঠকে লিখিয়া পাঠান যে, তাঁহারই উপর সমস্ত বিষয় নির্ভর করিতেছে এবং একমাত্র তাঁহারই দ্বারা তাঁহারা নবাবের সহিত বিবাদনিষ্পত্তির আশা করেন। এইসমূয়ে ওয়ারেন হেষ্টিংস কাশীম- বাজার কুঠী হইতে বন্দী হইয়া মুর্শিদাবাদে অবস্থিতি করিতেছিলেন। তিনিও আপনাদিগের উদ্ধারার্থ গোপনে জগৎশেঠের সহিত পরামর্শ করিতেন। ইংরেজদিগের ন্যায় ফরাসীদিগের সহিতও জগৎশেঠগণের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল। তাঁহারাও জগৎশেঠের দ্বারা আপনাদের সমুদায় আবেদনাদি নবাব-দরবারে প্রেরণ করিতেন।
এই সময়ে চন্দননগরের ফরাসী গবর্ণ- মেণ্টের নিকট জগৎশেঠদিগের ১৫ লক্ষ টাকা পাওনা ছিল। কলিকাতা-আক্রমণে ইংরেজদিগের যে দুর্দশা উপস্থিত হয় তাহার সংবাদ মান্দ্রাজে পৌঁছিলে, তথা হইতে ক্লাইব ও ওয়াট্ট্সন আসিয়া কলিকাতার পুনরুদ্ধার এবং চন্দননগর ও হুগলী অধিকার করিয়া নবাবের সহিত সন্ধিস্থাপন করেন। নবাবের সহিত সন্ধিস্থাপনের জন্য ক্লাইব জগৎশেঠকে পত্র লিখিয়াছিলেন। ইংরেজেরা নবাবের সাহত সন্ধিস্থাপন করিলেন বটে, কিন্তু গোপনে গোপনে তাঁহার সর্ব্বনাশের চেষ্টা করিতে লাগিলেন।
এদিকে সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রও গুরুতর ‘ভাব ধারণ করিল। এই ষড়যন্ত্রের মন্ত্রণা ও মন্ত্রণাস্থল লইয়া নানারূপ- প্রবাদ প্রচলিত আছে। কোন কোন প্রবাদানুসারে জগৎশেঠের বাটীতে এই মন্ত্রণা-সভার অধিবেশন হয়। সেই সভায় রাজা মহেন্দ্র (দুর্লভ রাম), রাজা রামনারায়ণ, রাজা রাজবল্লভ, কৃষ্ণদাস, মীরজাফর প্রভৃতি, উপস্থিত ছিলেন। সভাতে অনেক তর্কবিতর্কের পর কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত না হওয়ায়, নদীয়াধিপতি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের অপেক্ষার সে দিবস সভা-ভঙ্গ হয়। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নিকট সংবাদ পাঠাইলে, তিনি প্রথমে স্বীয় দেওয়ান কালীপ্রসাদ সিংহকে প্রেরণ করেন।
কালীপ্রসাদ তাঁহাদিগের উদ্দেশ্য অবগত হইয়া, রাজাকে সমস্ত বিষয় জ্ঞাপন করিলে, রাজা তৎপরে নিজেই মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হন। পুন- জীর জগৎশেঠের বাটীতে মন্ত্রণা-সভার অধিবেশন হয়। সভাতে কেহ কেহ যবনাধিকারের পরিবর্তে হিন্দুশাসনের প্রস্তাব করেন। রাজা কৃষ্ণ- চন্দ্র প্রথমে এ বিষয়ে কোন উত্তর দেন নাই; পরে তিনি বলিলেন যে, যে মন্ত্রণা সভায় মীরজাফর এক জন নেতা, সেখানে যবনাধিকার নিরাকৃত হওয়া সঙ্গত বলিয়া বোধ হয় না।
Leave a Reply