জোনাকি
মরিয়মকে জিজ্ঞেস করে জানলেন, ওরা দু’জনে বাইরে।
মরিয়মের চোখে-মুখে বিরক্তি ছিলো। আবুল হোসেন আর সাহস করেননি বেশিদূর এগোতে। ভেতরে ভেতরে তিনি জব্দ হয়েছিলেন, মরিয়মের কঠিন দৃষ্টির সম্মুখে চিরকালই তাঁর নিজেকে অপরাধী মনে হয়। তাছাড়া এই যে জমাজমির ব্যাপারে তিনি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, এটাও একটা দুর্বলতা, না ঘাঁটিয়ে পারতপক্ষে তিনি নিজেই মরিয়মকে এড়িয়ে চলতে চাচ্ছিলেন।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামলো, তারপর সন্ধ্যা। ভেতরে ভেতরে তিনি অস্থির হয়ে উঠলেন। বুলু আজকাল প্রায়ই বাইরে যাচ্ছে, তিনি জানতেন। এ নিয়ে চোটপাট করেছেন দু’এক সময়; কিন্তু কষে উঠতে পারেননি ঠিকমতো, মরিয়ম সবসময় বুলুর পক্ষ নিয়ে তাঁকে থামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এ কি ধরনের আচরণ, নাগার দৌরাত্ম্যে তিনি কিছুদিন যাবৎ দুশ্চিন্তাকাতর হয়ে পড়েছিলেন, বুলুও সেই সঙ্গে তাল মিলিয়েছে।
বেশ বুঝতে পারছিলেন তিনি, নাগা আর এখন তাঁর আয়ত্তের মধ্যে নেই, সে স্বেচ্ছাচারিতার পথই বেছে নিয়েছে, বলা যায়, সে এখন যুগধর্মের ধ্বজাধারী। নাগার বন্ধু-বান্ধবদের মূর্তি দেখে মাঝেমাঝে শিউরে ওঠেন আবুল হোসেন। বিশেষ করে কামরান বলে নাগার একটি বন্ধুকে দেখে তার বিপথগামিতা সম্পর্কে তিনি নিঃসন্দেহ হয়েছেন। কামরানকে দেখেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ভীষণ গোঁয়ার আর বেপরোয়া বিত্তবান পরিবারের এই তরুণটি, ধুলো ওড়ানোর মতোই অতি সহজে যে
টাকা ওড়াতে পারে। নিতান্ত খেলাচ্ছলে একটি পরিবারকে এলোমেলো তছনছ করে দিতে পারে। কামরানের বিশাল গাড়ি যখন পৈশাচিক আর্তনাদ করে আচমকা বাড়ির সামনে থামে, কিংবা ধুপধাপ পা ফেলে গয়ংগচ্ছভাবে কামরান যখন বাড়ির ভেতর ঢোকে, তখন জাদুবলে সবকিছু বদলে যায়, তুমুল শোরগোল শুরু হয় তাকে নিয়ে, সাজ সাজ রব পড়ে যায়। এক সময় দেখা যায় কোথাও না কোথাও বেরিয়ে পড়েছে সকলে, হাওয়া খেতে, থিয়েটারে, সিনেমায়, কিংবা কোনো চীনা রেস্তরাঁয়।