০৫:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১৮)

জোনাকি

একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাক, আবুল হোসেন তাই চাচ্ছিলেন।

খুব ভালভাবে তিনি জানেন তাঁর কজায় এমন কোনো দৈবশক্তি নেই যার বদৌলতে উদ্ভূত পরিস্থিতির মোড় ফেরাতে পারেন, সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এমনিতেই এখন অন্তহীন সমস্যা। প্রতিদিনই তা বাড়ছে; ভুঁইফোঁড়, চিরস্থায়ী। একথা তিনি অনেক আগেই বুঝে গিয়েছেন, খুব বেশি একটা কিছু করা তাঁর পক্ষে কোনোদিনই সম্ভব হবে না। নিজের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তিনি পুরোমাত্রায় সজাগ, অসাধ্য সাধনের ছিটেফোঁটা হাতছানিও কখনো তাঁকে প্রলোভিত করেনি।

সংসারের অভ্যন্তরে নিঃশব্দে যা কিছু ঘটছে তা আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়, ঘরের কোণের ঝুলকালির মতোই দিনের পর দিন একটু একটু করে যাবতীয় সমস্যা স্তূপীকৃত হয়েছে; বলা চলে তাঁর চোখের সামনে, নাকের ডগায়, আর এ যাবৎ তিনি দেখেও দেখেননি, বুঝেও বোঝেননি। দৃশ্য পরিবর্তন হয়েছে প্রতিদিন, স্রোতের ছোবলে যেমন পাড় ধসে পড়ে, ঘাটে শ্যাওলা জমে, দেয়ালের বাল্বে আস্তরণ পড়ে ধুলোর, এ-ও তেমনি।

অত্যন্ত রক্ষণশীল মানুষ আবুল হোসেন। সংসারের গরিবি হালে তাঁর এ স্বভাব নিঃশব্দে নিজের ঠাঁই ক’রে নিয়েছিলো এক সময়। এখন বয়েস ও অর্থাভাবের ভারে ন্যুজ। গালের চামড়া ঝুলে পড়েছে, নৈরাশ্য ও দুশ্চিন্তার যাঁতাকলে অতি অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন, এখন কারণে-অকারণে তাঁর মাঝে-মাঝেই চিত্ত-বিভ্রম ঘটে, সবকিছুর ওপর তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

যেমন, এই কিছুদিন থেকে তিনি সংসারধর্ম পালনকে সম্পূর্ণ অর্থহীন বলে মনে করতে শুরু করেছেন। অপরিসীম ক্লান্তি তাঁকে অগোচরে ঘৃণার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কিছু কিছু বিজাতীয় স্বার্থচিন্তাও তাঁকে মাঝে-মাঝে আচ্ছন্ন ক’রে ফেলে, যদিও সে সবের আয়ু খুব বেশিক্ষণের নয়; ‘বড় দুঃসময় যাচ্ছে’-এই ধরনের একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছে আবার তিনি গা-হাত-পা ছেড়ে দেন। তাঁর জীবনে কোনোদিন কোনো উচ্চাশা ছিলো না, এখনো নেই। বেঁচে থাকার জন্যে নিজের মতো ক’রে তিনি সংকীর্ণ অথচ নিরুপদ্রব গণ্ডি কেটে নিয়েছিলেন, পা বাড়াননি কখনো এর বাইরে।

 

 

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১৮)

১২:০০:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

জোনাকি

একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাক, আবুল হোসেন তাই চাচ্ছিলেন।

খুব ভালভাবে তিনি জানেন তাঁর কজায় এমন কোনো দৈবশক্তি নেই যার বদৌলতে উদ্ভূত পরিস্থিতির মোড় ফেরাতে পারেন, সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এমনিতেই এখন অন্তহীন সমস্যা। প্রতিদিনই তা বাড়ছে; ভুঁইফোঁড়, চিরস্থায়ী। একথা তিনি অনেক আগেই বুঝে গিয়েছেন, খুব বেশি একটা কিছু করা তাঁর পক্ষে কোনোদিনই সম্ভব হবে না। নিজের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তিনি পুরোমাত্রায় সজাগ, অসাধ্য সাধনের ছিটেফোঁটা হাতছানিও কখনো তাঁকে প্রলোভিত করেনি।

সংসারের অভ্যন্তরে নিঃশব্দে যা কিছু ঘটছে তা আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়, ঘরের কোণের ঝুলকালির মতোই দিনের পর দিন একটু একটু করে যাবতীয় সমস্যা স্তূপীকৃত হয়েছে; বলা চলে তাঁর চোখের সামনে, নাকের ডগায়, আর এ যাবৎ তিনি দেখেও দেখেননি, বুঝেও বোঝেননি। দৃশ্য পরিবর্তন হয়েছে প্রতিদিন, স্রোতের ছোবলে যেমন পাড় ধসে পড়ে, ঘাটে শ্যাওলা জমে, দেয়ালের বাল্বে আস্তরণ পড়ে ধুলোর, এ-ও তেমনি।

অত্যন্ত রক্ষণশীল মানুষ আবুল হোসেন। সংসারের গরিবি হালে তাঁর এ স্বভাব নিঃশব্দে নিজের ঠাঁই ক’রে নিয়েছিলো এক সময়। এখন বয়েস ও অর্থাভাবের ভারে ন্যুজ। গালের চামড়া ঝুলে পড়েছে, নৈরাশ্য ও দুশ্চিন্তার যাঁতাকলে অতি অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন, এখন কারণে-অকারণে তাঁর মাঝে-মাঝেই চিত্ত-বিভ্রম ঘটে, সবকিছুর ওপর তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

যেমন, এই কিছুদিন থেকে তিনি সংসারধর্ম পালনকে সম্পূর্ণ অর্থহীন বলে মনে করতে শুরু করেছেন। অপরিসীম ক্লান্তি তাঁকে অগোচরে ঘৃণার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কিছু কিছু বিজাতীয় স্বার্থচিন্তাও তাঁকে মাঝে-মাঝে আচ্ছন্ন ক’রে ফেলে, যদিও সে সবের আয়ু খুব বেশিক্ষণের নয়; ‘বড় দুঃসময় যাচ্ছে’-এই ধরনের একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছে আবার তিনি গা-হাত-পা ছেড়ে দেন। তাঁর জীবনে কোনোদিন কোনো উচ্চাশা ছিলো না, এখনো নেই। বেঁচে থাকার জন্যে নিজের মতো ক’রে তিনি সংকীর্ণ অথচ নিরুপদ্রব গণ্ডি কেটে নিয়েছিলেন, পা বাড়াননি কখনো এর বাইরে।