শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন

ওয়েস্ট আফ্রিকান নেভীর দাসবহনকারী জাহাজ ধরার অভিযান

  • Update Time : সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪, ৯.০০ এএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

ওয়েস্ট আফ্রিকা স্কোয়াড্রন ১৯ শতকের শুরুর দিকে তার প্রথম মিশনে নামার প্রস্তুতি নেয়। তাদের ক্রুরা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সমুদ্র অভিযানকারীদের একটিকে প্রতিনিধিত্ব করতো। বাস্তবে এই নাবিকরা অত্যন্ত অপ্রতুল সম্পদ নিয়ে কাজ করতো কিন্তু তারা ছিলো মানবিক উদ্দীপনায় উজ্জীবিত। 

১৮৪০-এর দশকের শীর্ষে স্কোয়াড্রনের কেবলমাত্র ২৭টি জাহাজ ছিল। এই জাহাজগুলি বেশিভাগ ধীরগতির ও কম দক্ষ নাবিকদের দ্বারা পরিচালিত ছিলো।অন্যদিকে দাস ব্যবসায়ীদের জাহাজগুলি এত দ্রুত ছিল যে এক পর্যায়ে রয়্যাল নেভি তাদের পুরানোজাহাজগুলো যা এক সময়ে দাস ব্যবসায়ীদের ছিলো সেগুলোকে দাস ব্যবাসায়ীদের জাহাজ মোকাবেলার জন্য পাঠিয়েছিলো।

একারনে শীঘ্রই দাস ব্যবসায়ীদের জাহাজের ক্যাপ্টেনরা শনাক্তকরণ এড়ানোর জন্য আরও চতুর কৌশল অবলম্বন  শুরু করে।  এবং এর প্রতিক্রিয়ায় রয়েল অ্যাডমিরাল আরও বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল অনুসরণ করতে শুরু করে। এর মধ্যে স্থাপিত দাস ব্যবসায়িক বন্দর এবং নদীগুলির অবরোধ এবং উপকূলীয় বসতিগুলির ওপর গোলাগুলি প্রভৃতি কৌশল নিতে থাকে। এই বসতিগুলো বলেত মূলত সেই বিল্ডিংগুলো দাস ব্যবসায়ীরা আফ্রিকানদের প্রতিপালনের স্থান হিসেবে তৈরি করেছিলো-  যাকে বলা হতো ‘বারাকুনস’।

 তবে এক্ষেত্রেও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয় ১৮৪৫ সালে সিয়েরা লিওনের গালিনাস নদীর  থেকে এ ধরনের এক আক্রমণে কয়েকটি গ্রাম ধ্বংস হয়, যা স্থানীয়দের ক্ষুব্ধ করে এবং স্কোয়াড্রনের ‘মানবিক’ উদ্দেশ্যগুলিকে প্রশ্নবিদ্ধও করে।

স্কোয়াড্রন সাগরপথে নয়া আন্তর্জাতিক চুক্তির অধীনে টহল দিত যে চুক্তির বলে রয়্যাল নেভি অন্যান্য জাতির দাস ব্যবসায়ীরজাহাজগুলি আটক করার ক্ষমতা পেয়েছিলো।  যে কোন একটি দাস জাহাজ আটক করলে, ব্রিটিশ নাবিকরা ‘প্রাইজ ভয়েজ’ এ যেত।  যার অর্থ  আটক করা জাহাজটিকে পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে সিয়েরা লিওনে নিয়ে যেত। যে কাজে তাদের কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতো। আটক করা জাহাজের জন্য প্রাইজমানি পেতো তা  ক্রু ও আটক করা জাহাজের আফ্রিকান দাসদের মধ্যে বিতরণ করা হতো।

কিছু জাহাজ আটক করার সময় খালি থাকতো  কিন্তু অনেক জাহাজ দাস হিসেবে নেয়া আফ্রিকান মানুষে ঠাসা থাকতো। এক একটি জাহাজে ৩০০ বা ৪০০ দাস (মানুষ) ঠাসাঠাসি করে রাখা হত। এই যন্ত্রণাদায়ক ভ্রমণের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যপ্রমাণ এখন দুর্লভ। অতীতের দাস ছিলেন এমন একজন মুহাম্মদ বর্ডোয়ো বাকুয়া বলেন, “আমার সে সব দুর্দশা বর্ণনা করতে পারি না- এই দাস জাহাজগুলির ভয়াবহতাকে ভুলে যাবার যেমন কোন উপায় নেই তেমনি ভয়াবহতা প্রকাশেরও কোন উপমা নেই।”

দুঃস্বপ্নের গল্পগুলি

ওয়েস্ট আফ্রিকা স্কোয়াড্রনের কমোডোর স্যার জর্জ রালফ কলিয়ারের একটি প্রতিকৃতি। নেপোলিয়ন যুদ্ধের এই অভিজ্ঞ সৈনিক যা তিনি আটক দাস জাহাজগুলিতে দেখেছিলেন তা দ্বারা আতঙ্কিত হয়েছিলেন।

প্রাইজ ভয়েজে দাসদের আনার পরেও তাদের দুর্দশা সহজে দূর করা যেতো না। যদিও তারা আর দাস জাহাজ বা দাস জাহাজের  ক্রুর অধীনে থাকতো না, তারপরে আফ্রিকান বন্দিদের জন্যে জাহাজে স্থান স্বল্পতা এবং পরিবেশও ছিলো মানবেতর। জনাকীর্ণতা, পানিশূন্যতা, বায়ুদূষণ এবং রোগের শিকার হওয়া ছিলো তাদের সহযাত্রী। রোগগুলোর মধ্যে ছিলো ডিসেন্টারি, গুটি বসন্ত এবং চোখের রোগ । ১৮৪১ সালে একজন অফিসার লিখেছিলেন, “আমি নিশ্চিত যে আমাদের প্রাইজটি আজ সকালে যে জটিল দুর্দশা দেখিয়েছে তা কখনও দেখিনি।” একটি পর্তুগিজ প্রাইজ জাহাজে ৩৯২ জন দাস মানুষ ছিল।


এসব ভয়াবহ পরিস্থিতি নাবিকদের এবং বন্দী আফ্রিকানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। স্যামুয়েল আজাই ক্রোথারের বিবরণ – একজন পর্তুগিজ দাস জাহাজ থেকে মুক্তি পেয়ে পরবর্তীতে মিশনারি এবং প্রথম অ্যাংলিকান আফ্রিকান বিশপ হয়ে ওঠেন তিনিও প্রথম প্রথম সন্দেহ করতেন ইউরোপীয় নাবিকদের। তিনি লিখেছেন, “আমরা নিজেদের নতুন বিজেতাদের হাতে পেয়েছিলাম,যাদের প্রথমে আমরা খুব ভয় পেতাম তারা দীর্ঘ তরোয়াল সজ্জিত থাকতো।”

নাবিকদের গল্পে অনেক সহানুভূতির বিবরণ থাকলেও, নৌ বাহিনীর পুরুষদের কীভাবে দাসপ্রথা তারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছিল সে বিষয়ে লেখার ক্ষেত্রে  একটা সেন্সরশীপের প্রমাণও রয়েছে। লেফটেন্যান্ট জেমস স্টোডার্ট লিখেছিলেন যে তিনি ১৮৩৬ সালে জোসেফিন এবং ভেলোজ প্রাইজ জাহাজের দায়িত্বে থাকাকালে “বিড়াল (বিড়ালের নয় লেজ) প্রচুরভাবে ব্যবহার করতে হয়েছিল।”

কঠিন রোগ ও সাদা মানুষের কবর

যারা এ দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেছে, তারা যে শুধু একটা অজানা পরিবেশে কাজ করেছে তা নয়,  প্রায়শই তারা অনুভব করতো তারা অনেকটা হাত পা বাধা অবস্থায় কাজ করছে। , এটি আশ্চর্যের বিষয় নয় যে ওয়েস্ট আফ্রিকা স্কোয়াড্রনের একটি দুর্নাম ছিলো যে তাদের মনোবল কম। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন,  পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে অত্যন্ত গরম এবং সহিংস ট্রপিক্যাল ঝড়ের জলবায়ু ছিল। ইয়েলো ফিভার এবং ম্যালেরিয়া মত শক্তিশালী রোগ ছিল একটি স্থায়ী উদ্বেগ।


দুর্বল স্বাস্থ্য, খারাপ স্যানিটেশন এবং রোগ প্রতিরোধের অভাব এই সময়ে অন্যান্য নৌবাহিনীর স্টেশনের তুলনায় তাদেরউল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চতর হারে  মৃত্যুর মুখে পড়তে হয়েছিলো। ১৮৪৫ সালের সেপ্টেম্বরে ইক্লেয়ার ব্রিটেনে ফিরে এলে দেখা যায় প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মূল ক্রু (৭০ জনেরও বেশি অফিসার এবং নাবিক) মৃত বা মৃত্যুপথযাত্রী ছিল। সিয়েরা লিওন এত অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত হয়েছিল যে তাকে ‘সাদা মানুষের কবর’ বলা হত। সেখানে দুই বছর বা তার বেশি সময় দায়িত্ব পালনকারী অনেকে  নৌ কর্মকর্তা  এ কথা বলেছিলেন।

অন্য দেশের নাবিকরা ওয়েস্ট আফ্রিকা স্কোয়াড্রনের প্রতি সন্দেহ পোষণ করছিলেন। ব্রিটেন আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের চ্যাম্পিয়ন হিসাবে দাবি করেছিল, তবে স্কোয়াড্রনের কার্যকলাপ বিশ্ব মঞ্চে অত্যন্ত বিতর্কিত হয়েছিল, একটি জাতির কার্যকলাপে অন্য জাতির হস্তক্ষেপের অধিকারের প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল।

স্কোয়াড্রনকে ব্রিটেনেও একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া ভোগ করতে হয়েছিলো। ব্ল্যাক জোকের কৃতিত্বগুলি সংবাদপত্রে পুনরুত্পাদিত হয়েছিল, এমপিরা সংসদীয় বিতর্কে স্কোয়াড্রনের ক্রমবর্ধমান খরচ এবং প্রত্যাশিত ফলাফলের অভাবের অভিযোগ করেছিল।


সমালোচনা কি ন্যায্য ছিল? এটি একটি নিঃসন্দেহে উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং সাহসী অপারেশন ছিল। ১৫০০টি জাহাজ যা তারা আটক করেছিল তা প্রায় ৬–১০ শতাংশ দাস-ব্যবসায়ী জাহাজ এবং প্রায় ২০০,০০০ আফ্রিকান মানুষ মুক্ত করেছিল। এটি একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা তবে আনুমানিক ৩.২ মিলিয়ন পুরুষ, মহিলা এবং শিশু যারা ১৮০৮ থেকে ১৮৬৩ এর মধ্যে দাস হিসাবে যাত্রা করেছিল তাদের একটি তুলনামূলকভাবে ছোট অংশ।

স্কোয়াড্রনের সমালোচকরা আরও ৫,০০০ ব্রিটিশ নাবিকের মৃত্যু উল্লেখ করতে পারেন যারা পশ্চিম আফ্রিকায় অভিযানে তাদের জীবন হারিয়েছিল এবং অনেক সংখ্যক পুনরুদ্ধারকারী, মূলত রোগের কারণেই তারা মারা যায়। এবং যদিও ১৮৬০-এর দশকের শেষের দিকে ট্রান্সআটলান্টিক দাসপ্রথা ব্যাপকভাবে বন্ধ হয়েছিল, এটি সম্ভবত বেশি পরিমাণে দাস ব্যবসায়ী দেশগুলির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফল ছিল না সমুদ্রের ওপর দমনমূলক কাজগুলির ফলেই এটা ঘটেছিলো।

তবুও, ওয়েস্ট আফ্রিকা স্কোয়াড্রনের কাজ ছিল নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিরোধী ব্রিটিশ নৌ অভিযানের দীর্ঘ ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়, এর পরে ১৮৬০ এর দশক থেকে ভারত মহাসাগরে, ১৮৮০ এর দশক থেকে লাল সাগরে এবং ১৯২০ এর দশক থেকে পারস্য উপসাগরে। এটি অন্যান্য দেশগুলিকে দাসপ্রথা বিরোধী আইন গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের নৌবাহিনীকেও  দমন প্রচেষ্টায় যুক্ত করতে প্ররোচিত করেছিল।


১৮৫৩ সালে ওয়েস্ট আফ্রিকা স্কোয়াড্রনের পক্ষে একটি প্রতিরক্ষা রচনায় কমান্ডার আর্থার প্যারি ইয়ার্ডলি-উইলমট লিখেছেন: “যদি আফ্রিকা কখনও মুক্ত এবং সুখী হতে পারে তবে ইংল্যান্ডকে সেই স্বাধীনতার সহায়ক হিসেবে বিবেচিত করবে।” ব্রিটিশরা বিশ্বাস করেছিল যে তারা একমাত্র অ-ইউরোপীয়দের দাসপ্রথা থেকে বাঁচাতে পারে এবং সেই মনোভাবটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক অধিকারগুলির প্রতি ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ এবং পরবর্তীতে নীতিগুলিকে প্রভাবিত করবে।

একজন মানুষ যিনি এই নীতিগুলি বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারেনি তিনি হলেন জর্জ কলিয়ার। কমোডোরের পেশাদার দায়িত্বের মধ্যে অন্যতম ছিলো দাসদের মুক্তি দেওয়ার একটি ব্যক্তিগত নৈতিক দায়িত্ব । তিনি দাস ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যে কাজগুলি করেছিলেন তা সে সম্পর্কে তিনি বলেন, “কোন ব্যক্তিগত গৌরবের জন্য নয়, কারণ আমি যা মানবতা মনে করি এবং আমার দায়িত্ব হিসেবে যা করা দরকার তা করেছি।” ১৮২৪ সালে স্কোয়াড্রন ত্যাগ করার তিন বছর পরে কলিয়ার আত্মহত্যা করেন। তাঁর মৃত্যুর তদন্তে তাকে “একজন উদ্যমী এবং সাহসী অফিসার” হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। রয়্যাল কর্নওয়াল গেজেটে একজন নৌ কর্মকর্তা উদ্ধৃত করেন যে তাঁর “গিনি উপকূলের সেবাগুলি একটি সাধারণ সংবেদনশীলতার মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না।”


কলিয়ারের ভাগ্য হল রাজনীতি, নীতিমালা, মানবপ্রেম এবং জাতীয় পরিচয়ের একটি দুঃখজনক ফুটনোট – এবং একটি ত্রুটিপূর্ণ মিশনের একটি গল্প যা মানব জীবনকে প্রভাবিত করেছে। ওয়েস্ট আফ্রিকা স্কোয়াড্রনের গল্প হল নৌসেনাদের একটি গোষ্ঠীর যারা প্রায়শই নৈতিক এবং ধর্মীয় আদেশে ট্রান্সআটলান্টিক দাসপ্রথার অবসান ঘটাতে সাহসের সাথে কাজ করেছিল কিন্তু যারা দাসপ্রথাবন্ধ করার কাজ করতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্দশা এবং রোগ ভোগ করেছিল।

মেরি উইলস হলেন ব্রিটিশ অনলাইন আর্কাইভের একজন জ্যেষ্ঠ কিউরেটর। তাঁর বইগুলির মধ্যে রয়েছে ‘এনভয়স অফ অ্যাবোলিশন: ব্রিটিশ নেভাল অফিসার্স অ্যান্ড দ্য ক্যাম্পেইন এগেইন্সট দ্য স্লেভ ট্রেড ইন ওয়েস্ট আফ্রিকা’ (লিভারপুল ইউনিভার্সিটি প্রেস ২০১৯)।

দাস জাহাজের একটি আটক হওয়া ঘটনা ওয়েস্ট আফ্রিকা স্কোয়াড্রনের জন্য উদযাপনের কারণ ছিল। কিন্তু এই জাহাজগুলিতে ভিড় করা দাস আফ্রিকানদের কী ভাগ্য অপেক্ষা করতো?


ব্রিটিশ ক্রাউন কলোনি সিয়েরা লিওন প্রায়ই দাসদের নির্যাতনমুক্ত করার জন্য প্রথম গন্তব্য ছিল। ব্রিটিশ মানবপ্রেমিকরা ১৭৮০-এর দশকে তাদের ‘সভ্যতা’ মিশনের অংশ হিসাবে উপনিবেশটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন – এবং এর রাজধানী ফ্রিটাউন দাস ব্যবসা বিরোধী অপারেশনের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। ব্রিটিশ মেরিটাইম কোর্টগুলির দ্বারা আটক করা জাহাজগুলিকে প্রায়শই এখানেই বিচার করা হত।

ব্রিটিশদের হাতে একবার আটক হলে, দাসদেরকে জাহাজের সম্পত্তির অংশ হিসেবে না রেখে তাদেরকে  আইনি ভাবে ‘মুক্ত’ ঘোষণা করা হত। এখন তাদের ‘মুক্ত আফ্রিকান’ বলা হত। তবে আজ হয়তো অনেকেই স্বাধীনতার সেদিনের সেই সংস্করণটি কাজকে স্বীকৃতি দেবে না। তাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছিলো এ কথা কেউ বলবে না – যেহেতু তারা অন্য একটি জাতির ইচ্ছার অধীনে ছিল, তাই তাদের অবস্থার বর্ণনা দিতে ‘পুনরুদ্ধার’ বা ‘উদ্ধারকৃত আফ্রিকান’ শব্দগুলি ব্যবহার করা হয়।


কিছু দাস মানুষকে অবশ্য তাদের জন্মভূমি দেখার আশা পুরনের সহায়তা করা হয়নি । পুনরায়  তাদেরকে নিজ ভূমিতে  না পাঠিয়ে  ফ্রিটাউনের আশেপাশের গ্রামগুলিতে নতুন জীবন গড়ে তুলতে উত্‌সাহিত করা হয়েছিলো।

যেমন স্যামুয়েল আজাই ক্রোথার চার্চ মিশনারি সোসাইটি দ্বারা শিক্ষিত হয়েছিল। ক্রোথার তার দাসত্ব উত্তর জীবনে একটি অসাধারণ সফলতা লাভ করেছিলেন এবং প্রথম আফ্রিকান অ্যাংলিকান বিশপ হয়ে ওঠেন। অন্যদের সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছিল বা নৌবাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। জেমস ‘অ্যাওলি’ কোভি ১৮৩৮ সালে এইচএমএস বাজার্ড ক্রুতে যোগ দিয়েছিলেন এবং ১৮৩৯ সালে দাস জাহাজ লা আমিস্তাদ বিদ্রোহের পর আইনি কার্যক্রম চলাকালে অনুবাদক হিসাবে কাজ করেছিলেন। আরও হাজার হাজার জনকে বছরের পর বছর ধরে ব্যক্তিগত বাড়িতে কাজ করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল, যা ‘প্রশিক্ষণ’ নামে পরিচিত একটি পদ্ধতিতে। এই অনুশীলনটি ১৮৪৭ সালে ব্রিটেনে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে শেষ করা হয়েছিল।

ওয়েস্ট আফ্রিকা স্কোয়াড্রন আফ্রিকানদের আমেরিকায় পরিবহণ থেকে বাধা দিতে চেয়েছিল। তবুও ১৮৪০-এর দশক থেকে ক্যারিবিয়ান ছিল হাজার হাজার পুনরুদ্ধারকারীদের গন্তব্য যারা ব্রিটিশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের চিনির বাগানে কাজ করতে নিয়োগ করা হয়েছিল। ১৮৩৪ সালে ‘মুক্তি আইন’ এর পর দাস মানুষদের ‘মুক্ত’ শ্রম দিয়ে প্রতিস্থাপনের একটি প্রচেষ্টায় এই প্রকল্পটি চালু করা হয়েছিল। আর ওয়েস্ট আফ্রিকা স্কোয়াড্রনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন জোসেফ ডেনম্যানকে এর পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024