শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে যে সাপ গুলোর বিষ নেই

  • Update Time : শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪, ৪.৪২ পিএম

ফয়সাল আহমেদ

বাংলাদেশে কিছু সাপ সব সময় গ্রাম অঞ্চলে এমনকি শহরের পুরানো এলাকায় মানুষের আশেপাশে প্রায়ই দেখা যায়। আগে বৃহৎ আকারের অজগর বা পাইথন দেশের প্রায় সব এলাকাতেই দেখা যেত । যা এখন খুব একটা দেখা যায় না। তারপরেও জঙ্গলে এদের উপস্থিতি রয়েছে প্রচুর। এরকম আরো বেশ কিছু সাপ আছে যাদের থেকে বিষ জাত কোন ভয় নেই। বরং এগুলো অনেক উপকারও করে। এই সাপগুলো মূলত অবিষধর সাপ। যদিও অবিষধর সাপের সংখ্যা প্রচুর তবে এরা বেশিরভাগ সাগরে থাকায় মানুষ অল্প কয়েকটি দেখতে পায়। বাংলাদেশের পরিচিত ও অবিষধর সাপগুলো হচ্ছে–অজগর, দাঁড়াশ ও দুধরাজ সাপ, দুমুখো সাপ, ঢোঁড়া সাপ, জলবোড়া ও পাইনা সাপ।

অজগর:

পরিচিতির দিক দিয়ে নিঃসন্দেহে গোখরোর পরেই আসে পাইথন বা অজগরের নাম। কিন্তু এটি বিষধর সাপ নয়। এর বিশাল আকৃতির জন্যই এটি ভয়াল প্রাণী হিসেবে পরিচিত। তাকে নিয়ে কৌতূহলেরও অন্ত নেই। সারা পৃথিবীর সাপ প্রজাতির মধ্যে এটিই দৈর্ঘ্যে-প্রন্থে সবচেয়ে বড় না সাপুড়ে বা বেদেদের খেলাতেও এটি বিশেষ আকর্ষণের বস্তু। আঞ্চলিকভাবে কোথাও কোথাও এটি ‘ময়াল’ সাপ নামেও পরিচিত। এযাবৎ বাংলাদেশে এর দুটি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে (‘পাইথন মৌলুরুস’ ও ‘পাইখন রেটিকুলেটাস’)। এগুলো ‘বোয়িডি’ পরিবারভুক্ত। সাধারণত এগুলো ১০ থেকে ১২ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। সর্বোচ্চ ২৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা অজগরেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। ছোট-বড় মেরুদন্ডী প্রাণী এদের প্রধান খাদ্য। শিকারকে এরা পেঁচিয়ে মারে ও সরাসরি গিলে ফেলে। এগুলো চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের চিরসবুজ, আধা চিরসবুজ ও পত্র-পতনশীল বৃক্ষের গভীর বনাঞ্চলে বসবাস করে।

 

দুমুখো সাপ:

এই সাপ আকারে বেশ ছোট এবং দেখতে কেঁচোর মতো। বাংলাদেশে এদের অন্তত তিনটি প্রজাতি আছে। এই সাপের চোখ এতই ছোট যে অনেকে এদের অন্ধ মনে করে। এগুলো রাতের অন্ধকারে পোকামাকড় ধরে খায় এবং ঝোপঝাড়, ঝরা পাতা বা ঘাসের নিচের মাটিতে বিচরণ করে। এদের লেজ ভোঁতা এবং সামনে-পেছনে চলতে পারে। এ কারণে অনেকে মনে করে থাকেন যে, এদের দুটো মুখ রয়েছে এবং ভীষণ বিষধর। ব্যাপারটা সত্য নয়। এরা ‘টিফলোডিডি’ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের সব জায়গায় এদের দেখতে পাওয়া যায়।

 

ঢোঁড়া সাপ:

এটি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অত্যন্ত পরিচিত প্রাণী সম্প্রদায়ের একটি। এগুলো সচরাচর জলাশয়, বিল-ঝিল, নদী-নালায় দেখতে পাওয়া যায়। এই সাপ ‘ন্যাট্রিসিডি’ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। ওই পরিবারের আরও দুটি সাপ প্রজাতি মোটামুটিভাবে সারা দেশে বিস্তৃত। এগুলো হচ্ছে: কালো মেটে ঢোঁড়া সাপ ও মেটে সাপ। এদের প্রধান খাবার মাছ ও ব্যাঙ। এরা মাছের ডিম খায় বলেও ধারণা করা হয়ে থাকে। এগুলোকে কখনো কখনো মাছ ধরার বড়শিতেও গেঁথে উঠতে দেখা যায়। এদের দেহ-আকৃতি, চলার গতি ভয়াবহ মনে হলেও পল্লিগ্রামের লোকজন এদেরকে তেমন একটা তোয়াক্কা করে না। অনেক সময় গ্রামগঞ্জের ছেলেমেয়েরা এসব সাপকে খেলাচ্ছলেও ধরে থাকে।

 

দাঁড়াশ ও দুধরাজ সাপ:

এ দুটি সাপ প্রজাতিও আমাদের দেশের মোটামুটিভাবে পরিচিত। দাঁড়াশ সাপকে আভিধানিক অর্থে ইঁদুর সাপ বা ‘র‍্যাট স্নেক’ বলা যেতে পারে। এগুলো মাঝারি ধরনের ‘কলুব্রিডীয়’ পরিবারভুক্ত সাপ। এরা গরুর দুধ খায়-এ ধরনের একটা কুসংস্কারের সঙ্গে ‘দুধরাজ’ সাপের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে। এর নামকরণের মধ্যেই এর ইঙ্গিত রয়েছে। এদেরকে সাধারণত লোকালয়, লোকালয় ছাড়িয়ে জলাশয়ের ধারেকাছেও দেখা যায়। প্রাণীর গর্তে এগুলো বসবাস করে। গাছের ফাঁক-ফোকরেও এদের দেখা যায়। বাংলাদেশের সর্বত্র, বিশেষ করে, সমতলভূমিতে এদের দেখা মেলে। ইদুর ও ব্যাঙ এদের প্রধান খাদ্য।

 

জলবোড়া ও পাইনা সাপ:

‘হোমালপসিডি’ পরিবারের বেশ পরিচিত সদস্যগুলোর অন্যতম এই দুই জাতের সাপ। বাংলাদেশের সর্বত্র, বিশেষত জলাশয়ের ধারেকাছে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এদের প্রধান খাদ্য ছোট ছোট জলজ প্রাণী। এর মধ্যে পোকামাকড়, মাছ এবং ব্যাঙ ও ব্যাঙাচিই প্রধান। স্বভাবের দিক দিয়ে এগুলো বেশ নিরীহ প্রকৃতির।

বিষধর সাপের তুলনায় সারা পৃথিবীতে অবিষধর সাপের ওপর অনুসন্ধান বা বিজ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষণ খুব কমই হয়েছে। এর প্রধান কারণ, এসব অবিষধর স সাপের অর্থনৈতিক গুরুত্ব তেমন একটা নেই। এগুলোর কামড়ে কেউ মারাও যায় না। এমনকি, সাপুড়ে ও বেদে সম্প্রদায়ের কাছেও কোনো অবিষধর সাপের তেমন একটা গ্রহণযোগ্যতা নেই। এদের নিয়ে তেমন গল্প বা রটনাও নেই। কিন্তু এদের প্রতিবেশতাত্ত্বিক ভূমিকা অনস্বীকার্য।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024