শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন

উড়াধুরা তুফান

  • Update Time : শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪, ৮.০০ এএম

মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান

তারিখ: ১৭ জুন ২০২৪, সোমবার। ঈদ উল আযহার প্রথম দিন। সময়: সন্ধ্যা ৬ টা ১৫মিনিট। স্থান: দিনাজপুর শহরে টিকে থাকা একমাত্র সিনেমা হল মডার্ন। দেশের একটি পুরানো জেলার একমাত্র সিনেমা হলের ভেতর ঢুকে ধাক্কা খেতে হয়। উপরে কিছু ফ্যান ঝুলছে ঠিকই কিন্তু সব চলছে না। আবার যেগুলো চলছে সেগুলোর বাতাস নিচে পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। ধুলাময় এবং প্রায় সব চেয়ারই ভাঙ্গা। প্রথমে দেখে নিতে হয় কোনো চেয়ারে বসলে উল্টে পড়ে যেতে হবে না। হানা বাড়ি বা ভূতের বাড়ির মতো নিঃসঙ্গ সিনেমা হলে ক্রমশ প্রাণের ছোঁয়া দেখা যায়। মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে। ক্রমশ হল ভরে যায়। ঈদের দিনের প্রধান দর্শক তরুণ সমাজ। আরো গভীর ভাবে দেখলে অধিকাংশের গড় বয়স ১৮-এর কম। সবাই সিনেমা দেখতে এসেছে। হল ‘হাউস ফুল’। সিনেমাটি সেদিনই দেশ জুড়ে মুক্তি পেয়েছে। এই হল কতো বছর পর এই রকম হাউস ফুল হলো অনেককে জিজ্ঞাসা করেও উত্তর পাওয়া গেল না। মডার্ন হলে বাংলা সিনেমা শুরু হলো। রায়হান রাফী পরিচালিত ‘তুফান’।

প্রথম দৃশ্য থেকেই সিনোম হলের নিচে রিয়ার স্টল ও উপরে ড্রেস সার্কল বা ডিসি থেকে চিৎকার। হৈচৈ। কতোদিন পর সিনেমা হলে এ রকম বিরতিহীন হাততালি এবং শিষ বাজানো শুনলাম নিজেও মনে করতে পারিনি। সিনেমার মাঝামাঝি সময়ে পাশের সিটে বসা ধূমপানরত তরুণ দর্শক যার বয়স ১৪/১৫ হবে, জানতে চাইলেন, ‘সিনেমাটি কেমন বুঝছেন, বস্?’ তাকে বিনয়ের সঙ্গে উত্তর দিলাম, ‘বোঝার চেষ্টা করছি বস্!’

সিনেমা শেষে তার কেমন লাগলো তা আর জানা হয় নি। ‘উড়াধুরা’ গানটি শুরু হওয়া মাত্র ‘বস্’ সিটের উপরে দাঁড়িয়ে নাচতে আরম্ভ করলেন। এরপর সামনের নৃত্যের মহাসমুদ্রে তিনি হারিয়ে গেলেন। ‘তুমি কোন শহরের মাইয়া গো, লাগে উড়াধুরা’। তাকিয়ে দেখলাম হলের উপরে এবং নিচে প্রায় সবাই উন্মত্ত নৃত্যে মেতে আছে। চোখের সামনে আমাদের আগামীর বাংলাদেশ নাচছে। লাগে উড়াধুরা।

২.
তুফান মুভিটির কাহিনী দাঁড় করানো হয়েছে আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে নব্বই দশকের বাংলাদেশের আন্ডার ওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লড়াইকে কেন্দ্র করে। গ্রামের এক কিশোর পর্যায়ক্রমে মফস্বল ও জেলা পর্যায়ে অপরাধ করতে করতে জাতীয় পর্যায়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘তুফান’ হয়ে ওঠার গল্প এটি।
বাংলাদেশের আন্ডার ওয়ার্ল্ডের জগতে এই সময়টি ছিল বেশি আলোচনায়। এই সময়ে আন্ডার ওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় যারা ছিলেন তাদের নাম বেশি শোনা গিয়েছিল। তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম, বাহারী অস্ত্রের ব্যবহার, হত্যা, চাঁদাবাজি, বিলাসী জীবন, বিশ্বাসঘাতকতা এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল মানুষের আলোচনার বিষয়। এই সময়ের কয়েকজন নিয়ন্ত্রক হলেন কালা জাহাঙ্গীর, সুব্রত বাইন, লিয়াকত, মোল্লা মাসুদ, জয়, টিক্কা, চঞ্চল, ফ্রিডম সোহেল, টিটন, রাসু, ইমাম, প্রকাশ, বিকাশ, মুন্না, কিলার আব্বাস, আরমান, পিচ্চি হেলাল, আগা শামীম, টোকাই সাগর, মানিক, কচি, পিচ্চি হান্নান, জোসেফ, জিসানসহ আরো অনেকে। সুব্রত বাইনের নেতৃত্বে ‘সেভেন স্টার’ এবং লিয়াকতের ‘ফাইভ স্টার’ গ্রæপ সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি ছোট বড় টেন্ডার, কনস্ট্রাকশন থেকে শুরু করে সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতো। ‘কালা জাহাঙ্গীররের টেলিফান’ পেলে ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক বিভীষিকার পর্যায়ে পৌঁছাতো। বড় দলগুলোর রাজনীতিবিদদের সাথে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সম্পর্ক তাদের ‘ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, বলা যাবে না কথা’-র অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল। তুফান মুভিটি এমন এক উচ্চাকাংক্ষী সন্ত্রাসীর জীবনকে নিয়ে আবর্তিত হয়েছে।

৩.
তুফান মুভিটি পরিচালনা করেছেন রায়হান রাফী। এর আগে তিনি বড়পর্দার জন্য পোড়ামন ২, দহন, পরাণ, দামাল ও সুরঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ছোটপর্দা বিশেষ করে ওটিটি প্লাটফর্মে রায়হান রাফী পরিচিত নাম। সামাজিক ভাবে আলোচিত কোনো ঘটনার থিম নিয়ে নিজস্ব স্টাইলে সিরিজ বা সিনেমা নির্মাণ করতে পছন্দ করেন রায়হান রাফী। এতে দর্শকের কাছে গল্পটিকে আলাদা ভাবে পরিচিত করানোর প্রয়োজন পড়ে না বা সিনেমায় চরিত্রকে নতুন করে দাঁড় করাতে হয় না। দর্শক আগে থেকেই থিম সম্পর্কে প্রাথমিক একটা ধারণা পেয়ে যান। তবে সিনেমায় একর পর এক টুইস্টের মাধ্যমে রাফী তার চমক সৃষ্টির চেষ্টা করেন। তুফান এই ধারার তার সবচেয়ে সফল মুভি।

তুফান চরিত্রে শাকিব খান ভালো অভিনয় করেছেন। সিনেমাটিতে তিনি দ্বৈতচরিত্রে অভিনয় করেন। একজন গ্যাংস্টার যে পর্যায়ক্রমে কিশোর গালিব বিন গণি থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী তুফান হয়ে ওঠে। চরিত্রটি সম্পর্কে সিনেমায় জানানো হয়, ‘তুফান মানুষ নয়, আবার তুফান পশুও নয়। তুফান যা হতে চেয়েছিল তাই হয়েছে- রাক্ষস।’

শাকিব খানের অন্য চরিত্র সিনেমার জুনিয়র আর্টিস্ট শান্ত। সে সিনেমায় অভিনয় করার জন্য একটা সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। সম্পূর্ণ ভিন্ন আর্থ-সামজিক পরিবেশের দুটো চরিত্রেই সমান্তরাল ভাবে শাকিব খান স্বাতন্ত্র বজায় রাখতে পেরেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে শাকিব খান তার ‘ললিপপ বয়’ মার্কা ইমেজ ভেঙ্গে নিজেকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে করোনার পর তার অভিনয়ে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’, ‘প্রিয়তমা’ ও ‘রাজকুমার’-এ তার পরিবর্তন দর্শকের চোখে পড়েছে। এর আগে ‘সত্তা’-তেও তিনি ভালো অভিনয় করেছিলেন।

পুলিশ অফিসার চরিত্রে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীকে সিনেমায় প্রথম দেখা যায় বিরতির পর। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি তার অবস্থান তৈরি করে নেন তার অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা দিয়ে। আয়নাবাজি চলচ্চিত্রের মতোই এখানেও মুহূর্তে তার চরিত্রের প্রকাশ ভঙ্গি বদলে যায়। অভিনেত্রী নাবিলাকেও আয়নাবাজির অনেক দিন পর সিনেমায় দেখা গেল। কলকাতার নায়িকা মিমি চক্রবর্তী ছিলেন আরেক নায়িকা। অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম, মিশা সওদাগর, গাজী রাকায়েত, ফজলুর রহমান বাবু, রাজ বসু, অরিজিৎ বাগচী, সুমন আনোয়ার যার যার চরিত্রে সর্বোচ্চ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। শাকিব খানের ‘তুফান হতে অ্যাটিটিউড লাগে’, ‘তুফান পোষ মানে না, পোষ মানায়’, ‘পুরা দেশ’, চঞ্চল চৌধুরীর ‘ভয় পাইছিরে’, ‘একটা যদি সুযোগ পাই, তুফানকে খেয়ে দেবো স্যার’, সালাউদ্দিন লাভলুর ‘এই, তুই কিডারে’, মিশা সওদাগরের ‘এই তুফান একদিন ডিস্ট্রিক্ট লেভেলে খেলবো’, গাজী রাকায়েতের ‘দুষ্টু কোকিল’, ‘জমে উঠেছে’, কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবুর ‘উই আর লুকিং ফর অপরাধী’ সংলাপগুলো দর্শকদের মধ্যে চর্চিত হয়েছে। তুফান মুভিতে পরিচালক রায়হান রাফী সব কিছুই ডাবল ডাবল রেখেছেন। দ্বৈতচরিত্রে শাকিব খান, ডাবল নায়িকা কলকাতার মিমি চক্রবর্তী ও মাসুমা রহমান নাবিলা, ডাবল আইটেম সং ‘দুষ্টু কোকিল’ ও ‘লাগে উড়াধুরা’। মুভিটির ডিরেক্টর অফ ফটোগ্রাফি ছিলেন তাহসিন রহমান। গানে প্রীতম হাসান, হাবিব ওয়াহিদ, দেবশ্রী অন্তরা, কণা ও আকাশ শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছেন।

৪.
তুফান চলচ্চিত্রটি শতভাগ কমার্শিয়াল বা বাণিজ্যিক মুভি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আই, চরকি এবং ভারতের এসভিএফ বাণিজ্যিক ভাবে চলচ্চিত্রটি সফল করতে এবং সামাজিক হাইপ তুলতে যতো ধরনের উপকরণ আছে সবই মুভিতে এবং মুভির প্রচারণায় ব্যবহার করেছে এবং এখনো করে চলেছে। সিনেমার প্রধান প্রযোজক আলফা আইয়ের প্রধান শাহরিয়ার শাকিল ওটিটি প্লাটফর্মে পরিচিতি নাম। এক সময় তিনি টিভিতে ভিন্নধর্মী ভ্রমণ বিষয়ক অনুষ্ঠান তৈরি করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। নির্মাতা সন্দীপ রায়ের কাছ থেকে সত্যজিৎ রায়ের গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদার টিভি সিরিজের কপিরাইট এনে শাহরিয়ার শাকিল বেশ কয়েকটি উদ্যোগও নিয়েছিলেন। কিন্তু অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় নিজে তোপসে থেকে ফেলুদা হয়ে উঠতে না পারায় তা আর পূর্ণতা পায় নি। রায়হান রাফী পরিচালিত ‘সুরঙ্গ’ মুভিরও প্রযোজক আলফা আই।

তুফান মুভিটির বড় অংশই ‘কাহিনীর প্রয়োজনে’ ধূমপান ও মাদক দৃশ্যে পরিপূর্ণ। মাদক বিরোধী ক্যাম্পেইনের জন্য সুপরিচিত প্রথম আলোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান চরকি সিনেমাটির সহ-প্রযোজক ও ডিজিটাল পার্টনার। চরকির দায়িত্বে আছেন নির্মাতা রেদওয়ান রনি।

আরেক সহ-প্রযোজক হিসেবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো যোগ দিয়েছে কলকাতা ভিত্তিক প্রভাবশালী নির্মাতা ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠান শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস প্রাইভেট লিমিটেড যা সংক্ষেপে এসভিএফ নামে পরিচিত। মনিরত্নম পরিচালিত সুপার হিট মুভি ‘বোম্বে’-র আঞ্চলিক পরিবেশক হিসেবে ব্যবসা শুরু করে এসভিএফ এখন অনেকগুলো কোম্পানির মালিক। ৬০-এর বেশি চলচ্চিত্রের নির্মাতা তারা। দেশে বিদেশে হিন্দিসহ বিভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্রের তারা পরিবেশক। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পদকজয়ী মুভির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এসভিএফের দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা ব্যবসায়ী মারোয়ারী পরিবারের সন্তান শ্রীকান্ত মেহতা ও তার কাজিন মহেন্দ্র সোনি। ২০১৯ সালে চিট ফান্ড কোম্পানির সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে শ্রীকান্ত মেহতাকে ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন-সিবিআই গ্রেফতার করায় তা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। যদিও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কাছের মানুষ’ হিসেবে পরিচিত শ্রীকান্ত মেহতার গ্রেফতার রাজনৈতিক কারণে হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, তুফান সিনেমাটি বানাতে আট থেকে দশ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল প্রথম দিকে শুধু স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে এক কোটি বিশ লাখ টাকা আয়ের তথ্য দিয়েছিলেন। গাজী টিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রথম সপ্তাহে মুভিটি বিশ কোটি টাকা আয় করে। তুফান মুক্তি পাওয়ার তিন সপ্তাহ পরে এখনো বিভিন্ন মাল্টিপ্লেক্স ও সিঙ্গল স্ক্রিনে উপচে পড়া ভীড় থেকে আয়ের পরিমাণ যে আরো বেড়ে চলেছে তা যে কেউ বুঝতে পারবেন। আমেরিকা, ইওরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ বাংলা ভাষাভাষী দর্শকদের কাছে তুফান আলোচিত। চলতি সপ্তাহ থেকে কলকাতায় মুক্তি পেয়েছে তুফান। সিনোমটি হিন্দি ভাষায় মুক্তি দেয়ারও কাজ চলছে। ফলে বাণিজ্যিক ভাবে সিনেমাটির সাফল্য এ ধরনের মুভি নির্মাণে আরো অনেককে আগ্রহী করে তুলবে।

তুফানের সহ-প্রযোজক চরকি একটি ওটিটি প্লাটফর্ম। আবার আরেক সহ-প্রযোজক এসভিএফ ‘হইচই’ নামের ওটিটি প্লাটফর্মের মালিক। যদিও ওটিটি জগতে তারা একে অপরের প্রতিদ্বন্ধী তবে ব্যবসাসহ নানা স্বার্থে তারা এক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এসভিএফ বাংলাদেশে ব্যবসা করতে এতোই আগ্রহী হয়েছে যে তারা আলফা আইয়ের সাথে মিলিত ভাবে নতুন একটি কোম্পানি খুলেছে।

৫.
পৃথিবী জুড়েই চলচ্চিত্রের ভাষা বদলে যাচ্ছে। এখন সিনেমায় দর্শকদের মানুষের সাধারণ জীবন নয় বরং ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ক্যারেক্টার বা সাধারণের চেয়ে বেশি ক্ষমতাধর অতিমানবীয় চরিত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চলছে। এক্ষেত্রে মার্ভেল সিরিজের মুভিগুলো যেমন এগিয়ে আছে তেমনি উপমহাদেশেও সেই ধারা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। চলচ্চিত্র এখন আর পূর্ণাঙ্গ কিছু নয়, এটি এখন টিভি বা ওটিটির সিরিজে পরিণত হয়েছে। প্রথম পর্ব রিলিজ হতে না হতেই দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে কথা শুরু হয়।

লার্জার দ্যান লাইফ বা অতিমানবীয় চরিত্র এখন সবখানে দেখা যাচ্ছে। ভারতে শাহরুখ খানের ‘জওয়ান’, ‘পাঠান’, রণবীর কাপুরের ‘অ্যানিমেল’, দক্ষিণ ভারতে ‘বাহুবলী’, ‘কেজিএফ’, ‘পুষ্পা’ বা অতি সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘কল্কি’ সব মুভিতেই অতিমানবীয় বিষয়গুলো নিয়ে আসা হচ্ছে। বাংলাদেশের তুফান এই ধারার প্রথম সফল মুভি। চলচ্চিত্রগুলো মাদক, খুনাখুনি, বীভৎসতা, রক্ত, গালাগালি কিংবা সামজিক অনাচারে পরিপূর্ণ। সিনেমা যেহেতু সমাজের প্রতিচ্ছবি তাই প্রযোজক, পরিচালকরা সহজেই সমাজের উদাহরণ টেনে আনেন।

সিনেমা শুধু সমাজের চিত্র নয়, সমাজকে তৈরি করারও মাধ্যম বটে। যে কিশোর দর্শক ভায়োলেন্সে পরিপূর্ণ মুভি দেখে বড় হচ্ছে তার পক্ষে পরবর্তী সময়ে ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’, ‘এ বিউটিফুল মাইন্ড’, ‘ওয়ান ফ্লিও ওভার দি ককু’স নেস্ট’, ‘এল পস্টিনো- দি পোস্টম্যান’, ‘শশাঙ্ক রিডেমশন’, ‘মাই লেফট ফুট’, ‘ইন দি নেম অফ দি ফাদার’, ‘দি ডেড পয়েটস সোসাইটি’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’-র মতো সিনেমা দেখা সম্ভব হবে কি না বা দেখতে আগ্রহী হবে কি না সেই ভাবনা থেকেই যায়।

সমাজের অন্যান্য পর্যায়ের মানদণ্ডের মতো বেশি টাকা আয়কারী মুভিই এখন ‘সফল মুভি’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে বিশাল বাজেটে তৈরি মুভিও দর্শক টানতে পারেনি। কলকাতায় সুভাষচন্দ্র বসুকে একাধিক মুভি হলেও তা ব্যবসা সফল নয়। আশি-নব্বইয়ের দশকে শুধু শীর্ষ সন্ত্রাসীরাই নন, গণ আন্দোলনের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীও ছিলেন। একটি জেনারেশন নিজেদের সব ঢেলে দিয়ে মানুষকে গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখিয়েছেন সে সময়।

মিডিয়ার বাংলাদেশের মুভির সম্প্রতি এতো ‘সাফল্য সংবাদের’ মধ্যেও তাই প্রশ্ন থেকে যায়। আমাদের তরুণদের সামনে আমরা কাদের রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করছি? জাতীয় বীরদের, না কি জাতীয় সন্ত্রাসীদের?

লেখক পরিচিতি: সাংবাদিক ও গবেষক

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024