শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১২৭)

  • Update Time : বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

আর একজন বলিয়াছেন যে, “কোন নিরপেক্ষ ইংরেজ ৯ই ফেব্রুয়ারী হইতে ২৩ শে জুন পর্যন্ত সমস্ত ঘটনাবলীর বিচার করিতে বসিয়া, একথা অস্বীকার করিবেন না যে, ক্লাইবের নাম অপেক্ষা সিরাজ উদ্দৌলার নাম অধিকতর সম্মাননীয়। সেই বিয়োগান্ত নাটকের প্রধান অভিনেতাদিগের মধ্যে কেবল সিরাজই প্রতারণা করিতে চেষ্টা করেন নাই।” ইহা ইংরেজ ঐতিহাসিকগণেরই মত। ফলতঃ জায়ধর্ম বিসর্জন দিয়া, একমাত্র বিশ্বাসঘাতকতার সাহায্যে ইংরেজেরা যে পলাশীতে জয়লাভ করিয়াছিলেন, তাহাতে অণুমাত্র সন্দেহ নাই।

উক্ত বিষয়ের আর অধিক আলোচনার প্রয়োজন নাই। আপাততঃ অষ্টাদশ শতাব্দীর পলাশীপ্রান্তরের কিরূপ পরিবর্তন ঘটিয়াছে, তাহার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করিয়া আমরা প্রবন্ধের উপসংহার করিতেছি। পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে, অষ্টাদশ শতাব্দীর পলাশীপ্রান্তরের এক্ষণে অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে। ভাগীরথীর গতিই এই পরিবর্তনের প্রধান কারণ। ভাগীরথী পশ্চিম দিক হইতে পূর্বদিকে সরিয়া আসায়, এইরূপ পরিবর্তন ঘটে। ভাগীরথী-গর্ভস্থ পলাশীপ্রান্তরের কিয়দংশ পুনর্ব্বার চর- রূপে পরিণত হইয়াছে। বর্ষাকালে তাহাও ভাগীরথী-সলিলরাশির অন্ত- নিবিষ্ট হইয়া থাকে! এই চরভূমির পূর্ব্বে একটি প্রকাণ্ড বাঁধ বরাবর ভাগীরথীর পূর্ব্ব তীর দিয়া মুর্শিদাবাদ অতিক্রমপূর্ব্বক চলিয়া গিয়াছে।

এই বাঁধদ্বারা ভাগীরথীর জলপ্লাবন রক্ষা করা হয়। বাঁধের পূর্ব্বপার্শ্বেই পলাশীপ্রান্তর। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রান্তর বাঁধের পশ্চিম পার্শ্বেও ছিল। পলাশীযুদ্ধের সময় যে দুইটি বৃহৎ বাঁক ছিল, এক্ষণে তাহাদের আকারও ভিন্নরূপ হইয়াছে। অশ্বখুরাকৃতি প্রশস্ত বাঁকটিকে ১৭৮৭ খৃঃ অব্দে টমায় লায়ন সাহেব কাটিয়া দেন। বাঁকের দুই মুখ এক হওয়ায় বাঁকটিকে এক্ষণে একটি বিলে পরিণত করিয়াছে। তৎকালে বাঁকর্মবষ্টিত প্রশস্ত উপদ্বীপটিতে যে সমস্ত গ্রাম ভাগীরথীর পূর্ব্ব তীরে ছিল, এক্ষণে তাহার পশ্চিমতীরবর্তী হইয়াছে। বিধুপাড়া নামে একখানি গ্রামের ঐরূপ পরিবর্তন ঘটিয়াছে। প্রশস্ত বাঁকটির একেবারে অন্তর্ধান ঘটায়, তাহার দক্ষিণপূর্ব্বদিকের বাঁকেরও পরিবর্তন হইয়াছে।

যে স্থান আম্রকুঞ্জ ছিল, তাহার অধিকাংশ ভাগীরথীগর্ভস্থ হইয়াছিল; এক্ষণে কিয়দংশ আবার চররূপে নূতন আকার ধারণ করিয়াছে। বাঁকের পশ্চিমে ভাগীরথীর প্রাচীন গর্ভের নিদর্শন দেখা যায়; বর্ষাকালে তাহা জলপ্লাবিত হইয়া থাকে। বিধুপাড়ার পারঘাটের নিকট তাহার উত্তরদিকের মুখ দেখিতে পাওয়া যায়। দক্ষিণদিকের অনেক অংশ পূর্ণ হইয়া গিয়াছে। আম্রকুঞ্জের শেষ বৃক্ষটি ১৮৭৯ খৃঃ অব্দে শুষ্ক হওয়ায়, তাহার মূল খনন করিয়া ইংলণ্ডে পাঠান হয়। গোলার আঘাতে বৃক্ষটিতে ছিদ্র হইয়াছিল। উক্ত বৃক্ষ, আম্রকুঞ্জের উত্তরপশ্চিম কোণের বৃক্ষ বলিয়া প্রতীত হয়। ১৮০২ খৃঃ অব্দে ভ্যালেন্টাইন সাহেব পাল্কী আরোহণে পলাশীপ্রার দিয়া গমন করিয়াছিলেন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024