শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০৯ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১২৮)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

তিনি কুঞ্জটি দেখিয়াছিলেন বলিয়া উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। বর্তমান পলাশী গ্রামের উত্তর-পূর্ব্ব ও নবগ্রাম তেজনগরের দক্ষিণ পূর্ব্বে একটি আম্রবৃক্ষ আছে। লোকে বলিয়া থাকে যে, অষ্টাদশ শতাব্দীর আঁম্রকুঞ্জ বা লাখবাগের দক্ষিণ-পূর্ব্ব কোণের আমবুকের নিকট তাহারই বীজ হইতে উক্ত বৃক্ষের উৎপত্তি হই- তাছে। যেখানে শেষ আম্রবৃক্ষটি ছিল, অর্থাৎ যাহা ১৮৭৯ খৃঃ অব্দে শুকাইয়া যায়, তাহা হইতে প্রায় ৬০/৭০ হস্ত দক্ষিণ পূর্ব্বে বেঙ্গল গবর্ণমেন্ট কর্তৃক ১৮৮৩ খৃঃ অব্দে একটি গ্রানাইট্ প্রস্তরের বিজয়গুপ্ত নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। ১৯০৯ খৃঃ অব্দে লর্ড কর্জনের অনুমতিক্রমে তদপেক্ষা একটি বৃহৎকায় মনুমেন্ট ও তাহার নিকট দর্শকগণের বিশ্রামের জন্য একটি গৃহ ‘নির্মিত হইয়াছে।

তদ্‌ভিন্ন রেনেলের যুদ্ধ-চিত্রানুযায়ী উভয় পক্ষের সৈন্য সংস্থান-প্রদর্শনের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্তন্তও স্থাপিত হইয়াছে। পুরাতন স্তম্ভের নিকট একটি তিন্তিড়ী ও বওলা বৃক্ষের ছায়াতলে দৌলত আলি নামে জনৈক মুসলমান সৈনিক কর্মচারীর সমাধি আছে; কেহ কেহ তাহাকে আকবর আলিও বলিয়া থাকে। দৌলত আলি পলাশীযুদ্ধে প্রাণত্যাগ করেন বলিয়া কথিত। তাঁহার সমাধিকে হিন্দুমুসল মানে সমভাবে সম্মান করিয়া থাকে। অষ্টাদশ শতাব্দীর আম্রকুঞ্জের ও পুরাতন বিজয়স্তম্ভের নিকট একখানি নূতন গ্রাম স্থাপিত হইয়াছে; তাহাকে তেজনগর কহে। তেজনগরের পশ্চিমপারে রামনগর কুঠী; রামনগর পূর্ব্বেও ভাগীরথীর পশ্চিম পারেই ছিল; রেনেলের মানচিত্রে তাহাই দেখা যায়।

পলাশীগ্রাম হইতে তেজনগর প্রায় অর্দ্ধক্রোশ উত্তরে অবস্থিত। পূর্ব্বোক্ত নবজাত আম্রবৃক্ষ হইতে প্রায় ১৮০০ হস্ত উত্তরে পূর্ব বিভাগের পুরাতন বাঙ্গলার নিকটে কতকগুলি উচ্চ জমি দেখা যায়; সেগুলি ইংরেজদিগের বুরুজের চিহ্ন বলিয়া লোকে নির্দেশ করিয়া থাকে। তথায় কতিপয় বিষবৃক্ষ জন্মগ্রহণ করিয়াছে। এই স্থান হইতে নবজাত আম্রবৃক্ষ পৰ্য্যন্ত মধ্যে মধ্যে পরিখার চিহ্ন দেখা যায়, তাহা আত্র- কুঞ্জের পূর্ব্বসীমা বলিয়া কথিত হইয়া থাকে এবং অম্লাপি ঐ স্থানকে লোকে লাখবাগও বলিয়া থাকে। প্রাতঃস্মরণীয়া রাণী ভবানী লক্ষ আম্রবৃক্ষের বাগান করিয়াছিলেন- বলিয়া শ্রুত হওয়া যায়।

পলাশী পরগণার কিয়দংশ এককালে তাঁহারই জমীদারীর অন্তর্ভূত ছিল; তজ্জন্য উক্ত প্রবাদ নিতান্ত অমূলক বলিয়া বোধ হয় না। লাখবাগ বা অষ্টাদশ শতাব্দীর আম্রকুঞ্জ বর্তমান না থাকিলেও ঐ সমস্ত চিহ্নের দ্বারা তাহার স্থান নির্ণয় করা যাইতে পারে। পুরাতন বাঙ্গলার নিকট একটি পুষ্করিণী দেখিতে পাওয়া যায়, তাহার নাম কালী- কূপ। কালীকূপ যুদ্ধস্থলের পুষ্করিণী নহে; ভাগীরথীর জলপ্লাবনে বাঁধ ভগ্ন হওয়ায় ইহার উৎপত্তি হইয়াছে বলিয়া অনুমিত হয়। পূর্ব্বোক্ত বাঙ্গলা হইতে পশ্চিম দিকে বর্তমান চরভূমিতে স্থানীয়লোকে নবাবের ‘শিকার- ভবনের স্থান নির্দেশ করিয়া থাকে। ১৭৮০ খৃঃ অব্দে হজেজ সাহেব: তাহা দর্শন করিয়াছিলেন। রেনেলের মানচিত্র অঙ্কনের সময়ও তাহা বিদ্যমান ছিল।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024