আগের মতোই কোনো সাড়া না পেয়ে বিছানার দিকে এগোয় খোকা। খাটের উপর ঝুঁকে বললে, ‘কি রে, ঘুমের ওষুধ গিলেছিস নাকি, এই রজু!’
এবার-ও কোনো উত্তর পেল না খোকা। এতে কিছুটা অবাকই হয় সে। সাধারণত এ ধরনের একগুঁয়েমি করে না রঞ্জু; গোঁ ধ’রে ব’সে থাকা কাকে বলে জানে না বললেই হয়, খোকা নিজেই বরং কিছুটা ঘাড়গোঁজা
করলে গায়ে পানি ঢেলে দেবো।’
হঠাৎ মনে হ’লো খোকার পাঁতে দাঁত চেপে ঢোক গিলে গিলে রঞ্জু কাঁদছে।
‘লেবু, একটা লগি নিয়ে আয়, ওকে আমপাড়া করবো–‘
শেষে বিছানায় হামাগুড়ি দিয়ে ওর কাছে গেল। হাত ধ’রে টেনে ঘুরিয়ে দিলো। সত্যিই গুমরে গুমরে কাঁদছে রঞ্জু।
‘খেয়েছে রে! এইনে, কানমলা খাচ্ছি, আর রাত করবো না কখনো, ঘাট মানছি, আচ্ছা ডালু তো! বুদ্দুর মতো কাঁদছিস কেন, এই বুড়ি!’
খোকা ওর গালে হাত বুলিয়ে দিলো। চোখের পানিতে ভিজে গেল হাত। হেসে আঙুলের ডগা জিভে ছুঁইয়ে টকাশ ক’রে একটা শব্দ তুলে সে বললে, ‘না তেমন নোনতা নয়, ফিকে হ’য়ে এসেছে নুনটা; তার মানে অনেকক্ষণ ধ’রে কাঁদছিস। বালিশটাও ভিজিয়ে ফেলেছিস। বালিশে দানা লাগিয়েছিস নাকি, চারা তুলবি?’
বালিশে চোখ-মুখ ড’লে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইলো রঞ্জু।
খোকা বললে, ‘বুঝলাম, আমার চেয়ে দেয়ালটাই তোর কাছে ভালো এখন। ঠিক হ্যায়, এখন থেকে ওটাকেই দাদা ব’লে ডাকিস।’
‘সিদ্ধেশ্বরী থেকে চাচা এসেছিলেন, সাড়ে ন’টা পর্যন্ত ছিলেন, জরুরী কথা আছে। কালকেই দেখা করতে বলেছেন–‘
‘গুলিমার!’
‘বারবার বলেছেন, কালই যেতে; খুব চ’টে গিয়েছেন তোর ওপর।’
‘খুব চোটপাট করেছে তাহলে?’
‘আমরা বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যাবো কিনা জানতে এসেছিলেন, সবাইকে দেশে পাঠাচ্ছেন। আমাদেরও যেতে বলছেন সঙ্গে!’
‘যতোসব গুবলেটমার্কা কথা। বাড়ি ফেলে রেখে যাই, আর সবকিছু লুটপাট হ’য়ে যাক, ভালো করতে পারি না মন্দ করতে পারি, কি দিবি তা বল্!’
‘সেজখালাও এসেছিলেন–‘
‘বলিস কি! কতোক্ষণ ছিলো?’
Leave a Reply